
ওবায়দুল কাদের
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দাবি ও অনেক বক্তব্য সংবিধানের এবং সাংবিধানিক রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আন্দোলন সংবিধানের বিরুদ্ধে বা আদালতের বিরুদ্ধে যাওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
শনিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষার্থীদের পুঁজি করে একটি কুচক্রী মহল রাষ্ট্রকে অস্থির করার ষড়যন্ত্র করছে এমন অভিযোগ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই অশুভশক্তি এর আগেও চেষ্টা করেছিল। আমাদের কাছে সেই তথ্য আছে। ২০১৮ সালে যখন কোটাবিরোধী আন্দোলন হয়, তখন রাজনৈতিকভাবে পরাজিত এই অশুভ শক্তি এই আন্দোলনের ওপর ভর করেছিল। নিরাপদ সড়কের আন্দোলনেও ভর করে রাজনৈতিক রূপ নেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছে।
তখন এই অশুভ শক্তির হাতে আমাদের ধানমন্ডি পার্টি অফিসও আক্রান্ত হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ওই মহলটি রাষ্ট্রব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ অকার্যকর করার জন্য এবং এদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ মনোভাব তৈরির ক্ষেত্র প্রস্তুতের চেষ্টা করেছিল।
আওয়ামী লীগ তারুণ্যের শক্তিতে আস্থা রাখে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, তারুণ্যের সবাইকে নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে সমান সুযোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন।
পবিত্র সংবিধানের আলোকেই কেবল রাষ্ট্র পরিচালনা হয় উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনা সম্পর্কিত সংবিধানের ১৯ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সব নাগরিকের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবে রাষ্ট্র। সেখানে আরও বলা হয়েছে, মানুষের সামাজিক-অর্থনৈতিক অসাম্য নিরোধের জন্য নাগরিকদের মধ্যে সুষম বণ্টন নিশ্চিত করার জন্য এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নে সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে নারীদের অংশ গ্রহণও নিশ্চিত করতে হবে উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, অথচ গত কয়েক বছরে সরকারি চাকরিতে মেয়েদের অন্তর্ভুক্তি হতাশাজনকভাবে কমেছে। কোটা না থাকায় পুলিশে মাত্র চারজন নারী অফিসার সুযোগ পেয়েছেন, ফরেন সার্ভিসে সুযোগ পেয়েছেন মাত্র দুজন। ৫০টি জেলার নারীরা ক্যাডার সার্ভিসে যোগ দেওয়ার সুযোগ পায়নি। ২৩টি জেলায় একজনও পুলিশে চাকরি পায়নি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সংবিধানের উল্লিখিত বিধানের উদ্দেশ্য হচ্ছে, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারি চাকরিসহ সব খাতে সবাই যেন সমানভাগে সুযোগ পায়। সেজন্যই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিসিএস নিয়োগ পরীক্ষার ক্ষেত্রে মেধা তালিকায় নিয়োগ পায় ৭০ শতাংশের মতো। ৩৩, ৩৪, ৩৫তম বিসিএসে ৭২ শতাংশ প্রার্থীকে মেধার ভিক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যেখানে কোটায় নিয়োগ পেয়েছে ২৮ শতাংশ। শূন্য পদগুলোতে মেধা তালিকা থেকে নেওয়া হয়েছে। কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে যেখানে মেধা তালিকা থেকে পূরণ করা হচ্ছে, সেখানে আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই।
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশেই কোটার ভিত্তিতে সবচেয়ে কম নিয়োগ দেওয়া হয় জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বর্তমানে ভারতে ৬০ শতাংশ, পাকিস্তানে ৯২ দশমিক ৫ শতাংশ, নেপালে ৪৫ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কার ৫০ শতাংশ কোটায় নিয়োগ দেওয়া হয়। এই পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, আমাদের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় কোটার প্রয়োজন রয়েছে। বিদ্যমান অন্তর্ভুক্তি এটা যৌক্তিক।
সংবাদ সম্মেলনে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, বি এম মোজাম্মেল হক, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী শামসুন্নাহার চাপা প্রমুখ।