ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

প্রতিষ্ঠার প্লাটিনাম জুবিলি আজ

ইতিহাস ঐতিহ্য সাফল্য ও অর্জনের নাম আওয়ামী লীগ

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:৩০, ২২ জুন ২০২৪

ইতিহাস ঐতিহ্য সাফল্য ও অর্জনের নাম আওয়ামী লীগ

প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ

ক্ষমতায় থেকে দলের প্রতিষ্ঠার রজত ও সুবর্ণজয়ন্তী পালনের পর এবার প্লাটিনাম জুবিলি পালনের সৌভাগ্য বিশ্বের কয়টি রাজনৈতিক দলের হয়েছে? উপমহাদেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগই এই বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী হলো। দলের প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর, ৫০ বছর এবং এবার ৭৫ বছর পূর্তির সময়ও জাতির পিতার হাতে গড়া আওয়ামী লীগই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। এমন বিরল ঘটনা পৃথিবীর আর কোনো রাজনৈতিক দলের নেই। তাই অপ্রতিরোধ্য আওয়ামী লীগ কেবল অতীত বা বর্তমান নয়, বাংলাদেশের ভবিষ্যতেরও নির্মাতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সরকার থাকতে ১৯৭৪ সালে দলের প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী পালন করে আওয়ামী লীগ। এরপর প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এসে ১৯৯৯ সালে দলের প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর অর্থাৎ সুবর্ণজয়ন্তী পালন করে। এবার রেকর্ড টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার দলের প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকী অর্থাৎ প্লাটিনাম জুবিলি পালন করছে।

দলের প্রতিষ্ঠার ৭৪ পেরিয়ে ৭৫ বছরে পা দেওয়া দেশের প্রাচীন ও বৃহৎ গণমানুষের প্রিয় রাজনৈতিক দল, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক ভাব-ধারার আস্থার প্রতীক, দেশের ইতিহাসে রাজনীতির মাঠে সবচেয়ে অপ্রতিদ্বন্দ্বী-অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আজ প্রতিষ্ঠাবার্র্ষিকী। 
বাংলাদেশের গড় আয়ু ৭২ বছর। আর ৬৬ বছর হলে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বার্ধক্য। বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী কেউ ৬০ বছর পেরুলেই তিনি ‘সিনিয়র সিটিজেন’-এর মর্যাদা পান। সেই হিসেবে আওয়ামী লীগ এ দেশের সিনিয়র রাজনৈতিক দল। শুধু এটি বললে কম হবে, বাঙালি জাতির মুক্তির মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে গণতান্ত্রিকভাবে জন্ম নেওয়া উপমহাদেশে প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলও হচ্ছে আওয়ামী লীগ।

স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা, সর্বশেষ সামরিক স্বৈরশাসন থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণÑ এর প্রতিটি অর্জনের সংগ্রাম-লড়াইয়ে নেতৃত্বদানকারী একটিই রাজনৈতিক দল, তা হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।  বাঙালি জাতির প্রতিটি অর্জনেরও দাবিদার প্রাচীন ও সুবিশাল এই রাজনৈতিক দলটির। 
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও আওয়ামী লীগের ইতিহাস একসূত্রে গাঁথা। ‘বঙ্গবন্ধু-আওয়ামী লীগ-বাংলাদেশ’ ইতিহাসে এই তিনটি নাম অমলিন, অবিনশ্বর। ইতিহাসে এই তিনটি নাম একই সূত্রে গাঁথা। আওয়ামী লীগ মানেই দেশের স্বাধীনতা, স্বাধীন মানচিত্র, স্বাধীন পতাকা। তেমনি ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাফল্য ও অর্জনের নামও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। গত সাড়ে সাত দশক ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পথচলা ছিল গৌরবোজ্জ্বল। দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী গণমানুষের প্রিয় দল আওয়ামী লীগের আজ গৌরবোজ্জ্বল ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। 
জন্মের পর থেকে বেশিরভাগ সময়ই গেছে লড়াই-সংগ্রামে। হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রÑ সবই দেখেছে দলটি। ‘রোজগার্ডেন থেকে গণভবন’- ৭৫ বছরের সুদীর্ঘ ইতিহাস। ভাষা আন্দোলন, গণআন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধ- স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং পরবর্তী  দেশের সব অর্জন ও সমৃদ্ধির ইতিহাসের পাতার পরতে পরতে একটিই নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আর এ দলটির জন্মলগ্নেই অঙ্কুরিত হয় ‘স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্নসূত্র’। 
আওয়ামী লীগ বাঙালি জাতীয়বাদের মূল ধারা। এটা বাঙালী জাতির গৌরবের যে দ্বিজাতিতত্ত্বের  চোরাবালি থেকে বাঙালি জাতিকে পুনরুদ্ধার করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মতো একজন শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, যিনি হাজার বছরের বাঙালি জাতির সাধনা, ধ্যান, জ্ঞান তার বিপুল সংস্কৃতির ভা-ারের অন্তর্গত সত্যকে নিজের জীবনে ধারণ করে তা রূপ দিয়েছিলেন দীর্ঘ দু’শ’ বছরের ধর্ম ও রাজনীতির সংমিশ্রণে জাতীয়তাবাদের বিকৃতি থেকে আমাদের মুক্ত করে।

আগামী দু’-এক শতাব্দীর মধ্যেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মতো একজন মহামানব, যুগ সৃষ্টিকারী কোনো ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটবে, তা কল্পনাও করা যায় না। তাই বাঙালি জাতি আওয়ামী লীগের শুভ জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করবে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানকেও।
আওয়ামী লীগ মানেই সংগ্রামী মানুষের প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশের কাদা-মাটি গায়ে মাখা খেটে খাওয়া মানুষের কাফেলা। অতীতের মতো বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত। বাঙালি জাতির মুক্তির মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে গণতান্ত্রিকভাবে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন জন্ম নেওয়া উপমহাদেশের প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার আজ জন্মদিন।

পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে যে দলটির প্রতিষ্ঠা, সেই দল পেয়েছে সুরম্য ১০তলা নিজস্ব কেন্দ্রীয় কার্যালয়। আওয়ামী লীগই একমাত্র দল, যাদের বাংলাদেশের ইতিহাসে টানা চার মেয়াদসহ পঞ্চম দফায় সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। দলটির সভাপতি ও বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার সুযোগ্য, প্রাজ্ঞ, কৌশলী ও সাহসী নেতৃত্বের কারণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগ একটানা চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। 
উন্নয়নের মহিসোপান দিয়ে দেশকে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের অপ্রতিরোধ্য জনসমর্থন আর জনপ্রিয়তায় প্রতিপক্ষ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক অস্তিত্বই এখন সংকটের মুখে। বিরোধী পক্ষ আওয়ামী লীগের বিপক্ষে মাথা তুলে দাঁড়ানোর মতো শক্তি ও সমর্থন হারিয়ে ফেলেছে। তাই বর্তমানে রাজনৈতিক মাঠে আওয়ামী লীগ প্রকৃতপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী, অপ্রতিরোধ্য। বঙ্গবন্ধু দিয়েছেন স্বাধীনতা, আর তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলছেন ক্লান্তিহীন পরিশ্রম করে। 
গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করেছেন স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এরপর একে একে ঢাকার বুকে মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে, চট্টগ্রামে নদীর তলদেশ দিয়ে প্রথম বঙ্গবন্ধু ট্যানেল নির্মাণ, পারমাণবিক ক্লাবে নাম লিখিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে গোটা বিশ্বকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখিয়ে দিয়েছেন- ‘বাংলাদেশ সব পারে। কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।’ মহাকাশে ঘুরছে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে এখন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের কাজে হাত দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এমনিভাবে গত ১৫ বছরে একের পর এক সাফল্যের ইতিহাস রচিত হয়েছে আওয়ামী লীগের হাত ধরেই।
তবে ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দলটির জন্ম মোটেই সুখকর ছিল না। ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন স্বামীবাগের রোজ গার্ডেনে নতুন দল গঠন করা হচ্ছে। বিষয়টি জানাজানি হলে তৎকালীন পাকিস্তানি হানাদার সরকার ভীত হয়ে পড়ে। ওই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মওলানা ভাসানীকে গ্রেপ্তার করার সম্ভাবনা দেখা দেয়। তখন নতুন সংগঠন গড়ে তোলার কারিগররা মওলানা ভাসানীকে আত্মগোপনে রাখার ব্যবস্থা করেন এবং সম্মেলনের অন্তত দু’দিন আগে তাঁকে রোজ গার্ডেনে নিয়ে আসা হয়। 
এরপর আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি, শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক এবং কারাবন্দি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যুগ্ম সম্পাদক করে নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করে। সম্মেলনে দলের নাম দেওয়া হয় আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরদিন ২৪ জুন ঢাকার আরমানিটোলা ময়দানে প্রকাশ্য জনসভার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের যে আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু হয়, দীর্ঘ ৭৫ বছরে তার বিরাম নেই। বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে কখনো বিরোধী দলে, কখনো সরকারে থেকে দেশ গঠনে অনন্য অবদান রেখে চলেছে মাটি ও মানুষের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
আজ কোথায় দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ? ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই দিনে এ প্রশ্ন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব বাঙালির। সবাই এক বাক্য স্বীকার করেছেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই, তাঁর বিকল্প একমাত্র তিনিই। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথপরিক্রমায় অনেক অশ্রু, ত্যাগ আর রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি ফিরে পায় ‘ভাত ও ভোটের অধিকার’; দীর্ঘ স্বৈরশাসনের অবসানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা।

আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে ও সুদক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনায় সুশাসন, স্থিতিশীল অর্থনীতি, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, উন্নয়নে গতিশীলতা, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষার প্রসার, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংস্থান, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, খাদ্য নিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুগান্তকারী উন্নয়নের ফলে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে।
গণমানুষের ভাব-ভাবনার ধারক আওয়ামী লীগ ॥ ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার স্বামীবাগের বিখ্যাত রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এই প্রাচীন রাজনৈতিক দলটির। এই দলের জন্মলাভের মধ্য দিয়েই রোপিত হয়েছিল বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ। জন্মলগ্ন থেকেই দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি দলটির নেতাকর্মীদের অঙ্গীকার ও ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হয় পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল সংগ্রামের ইতিহাস। জনগণের অকুণ্ঠ ভালোবাসা ও সমর্থন নিয়েই এই দলটি বিকশিত হয়।
যার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির ভূ-খ-ের সীমানা পেরিয়ে এই উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ এবং জনসমর্থনপুষ্ট অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, মানব কল্যাণকামী রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের পরিচিতি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। বাঙালির ঐহিত্য, সংস্কৃতি, ভাষা, বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণ, স্বায়ত্তশাসন সর্বশেষ স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে গড়ে ওঠা আওয়ামী লীগ তার আদর্শ এবং উদ্দেশ্যে অটল থেকেও সময়ের বিবর্তনে বৈজ্ঞানিক কর্মসূচির মাধ্যমে একটি আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আজ প্রতিষ্ঠিত।
রোজ গার্ডেনে দলটি প্রতিষ্ঠালাভ করেছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামে। ১৯৫৬ সালে ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত দলীয় কাউন্সিলে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামকরণের মাধ্যমে দলটি অসাম্প্রদায়িক বৈশিষ্ট্যম-িত হয়। এক কথায় বলতে গেলে, বাঙালি জাতির সব মহতী অর্জনের নেতৃত্বে ছিল জনগণের প্রাণপ্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগ, যার মহানায়ক ছিলেন রাজনীতির মহামানব সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি ও স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায় অনেক ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উতরাই ও প্রাসাদসম ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দলটি আজ এ দেশের গণমানুষের ভাব-ভাবনার ধারক-বাহকে পরিণত হয়েছে। অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক ভাব-ধারার আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে দলটি। জন্মের পর থেকে অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ঐতিহ্যবাহী দলটি মানুষের বিপুল সমর্থনে বেঁচে আছে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে। জন্মলাভের পর ইতিহাসের রেকর্ড ভঙ্গ করে টানা চতুর্থবারের মতো তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি আসনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের মহাসড়ক দিয়ে। 
আওয়ামী লীগের জন্মলাভের পর মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ’৬৬ সালের ঐতিহাসিক ছয় দফা, ’৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ’৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে এই দলের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি ক্রমশ এগিয়ে যায় স্বাধীনতার দিকে। এই দলের নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ নিজেদের স্থান দখল করে। আর এসব আন্দোলনের পুরোধা ও একচ্ছত্র নায়ক ছিলেন ইতিহাসের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর জন্মের পর থেকে গত ৭৫ বছরে স্বাধীনতা থেকে শুরু করে দেশের যা কিছু অর্জন, সবই এসেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। 
অতিমারি করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট বিশ^ব্যাপী অর্থনৈতিক মহাসংকটের পর চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশে^র শক্তিশালী অর্থনীতির দেশসমূহসহ সমগ্র বিশে^ যখন গড় মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী তখন অর্থনৈতিক গতিশীলতা পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জে নিয়োজিত রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এরপরে নানা প্রাকৃতিক-মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হচ্ছে দলটিকে।

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দেশী-বিদেশী নানা ষড়যন্ত্র, বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল সন্ত্রাস মোকাবিলা করে রেকর্ড টানা চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে সক্ষম হয়েছেন দলটির প্রধান শেখ হাসিনা। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে উন্নত-সমৃদ্ধ আধুনিক স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ব্রত নিয়ে পঞ্চমবারের মতো ক্ষমতায় এসে কাজ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার।
কর্মসূচি ॥ আজ ২৩ জুন ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী  (প্লাটিনাম জয়ন্তী) উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে এবং ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্য রয়েছে আজ রবিবার সূর্য উদয় ক্ষণে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।
এ ছাড়াও সকাল সাড়ে ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধি দল শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এতে নেতৃত্ব দেবেন দলের সভাপতিম-লীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি। 
এদিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করা হবে। এরপর দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন। এতে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘সবুজ ধরিত্রী’ নামে দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হচ্ছে। সারাদেশেই দলটির কোটি কোটি নেতাকর্মী-সমর্থকরা নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করবে।

×