ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

ফেল করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিরল আয়োজন

প্রকাশিত: ২০:১৪, ১১ জুন ২০২৪

ফেল করা শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিরল আয়োজন

চ্যালেঞ্জড শিক্ষার্থী সম্মেলন।

কোভিডের সময় বাচ্চাদের হাতে যে ফোন উঠেছে তা আর নামেনি। কোন শিক্ষার্থী যদি ৭০ ভাগ ক্লাসে যায় তবে সে শিক্ষার্থী আর ফেল করে না। কারিগরিতে আরো শিক্ষার্থীর ভর্তির প্রয়োজন। শুধু সার্টিফিকেট নয়, দরকার জ্ঞান ও দক্ষতা। পরীক্ষায় পাস না করলেও জীবনে অনেক কিছু করা যায়। এ বছর এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় যেসব শিক্ষার্থী ফেল করেছে তাদের উদ্দেশ্যে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন দেশের বিশিষ্টজনরা। 

মঙ্গলবার (১১ জুন) সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে চ্যালেঞ্জড শিক্ষার্থী সম্মেলন আয়োজন করে গণসাক্ষরতা অভিযান। এসময় সাবেক মন্ত্রী থেকে দেশসেরা অর্থনীতিবিদ তাদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য রাখেন। সংকট থেকে উত্তরণে দেন নানা দিকনির্দেশনা।সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘জার্মানিতে ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী টেকনিক্যালে পড়ে। আমাদের এই হার ছিল ৮.৫ শতাংশ। আমাদের শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি সার্টিফিকেট নিয়ে বিদেশ গিয়ে শ্রমিকের কাজ করতে হয়েছে দক্ষতা না থাকার কারণে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের শুধু সার্টিফিকেট নয় দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হবে। একারণে আমরা টেকনিক্যাল শিক্ষার মান ও গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছে। প্রতিটি স্কুলে কোনো না কোন টেকনিক্যাল শিক্ষা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছি। আমরা সেই প্রজম্ম গড়ে তুলতে চাই, যারা এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তথ্য প্রযুক্তি দিয়ে তারা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় ফেরাতে হবে। এজন্য এই পেশার মর্যাদাসহ জীবনমান বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।’

ফেল করা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী খলিকুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘পরীক্ষায় পাস না করলেও জীবনে অনেক কিছু করা যায়। এজন্য প্রয়োজন মনোযোগ। শিক্ষায় এগিয়ে যেতে তিনটি বিষয় মনে রাখতে হবে। মুখস্ত করা যাবে না, না বুঝে পড়া যাবে না এবং প্রশ্ন করতে হবে। এজন্য শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। অভিভাবক, শিক্ষক ও স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি এসব ব্যাবস্থা নেবে। অথচ দেশের বিভিন্ন স্কুলের চিত্র ভিন্ন। কমিটির নেতা হতে এবং স্কুলের অর্থ খরচ নিয়ে কাড়াকাড়ি মারামারি দেখছি। আমাদের নীতি অনেক, অসংগতিও অনেক। সব সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের অপেক্ষায় থাকতে হলে কোনো উন্নতি হবে না। সব যদি তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সিদ্ধান্ত দেন তবে আপনাকে রেখেছেন কেন? আমার মনে হয়, এসব বিষয়ে কেন্দ্রীভুতকরণ সিস্টেম থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

শিক্ষাবিদ ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘কোভিডের সময় পড়াশুনার অনেক ক্ষতি হয়েছে। বলেছিলাম বাচ্চাদের হাতে স্মার্ট ফোন দেওয়া যাবে না। তারপরো দেওয়া হয়েছে। আজ আর সেই ফোন কোনো শিক্ষার্থীর হাত থেকে ফোন নামেনি। আমি জানি না ছেলেরা এই ফোন দিয়ে কি করে। আমি জানি, আমাদের পড়াশুনার সিস্টেম তেমন ভালো না। কারণ, পরীক্ষা নেওয়া ছাড়া আমরা আর কিছু আমরা করতে পারি না। এবার ৩ লাখ বাচ্চাকে বলা হয়েছে তারা অকৃতকার্য হয়েছে। পৃথিবির অনেক দেশে এই পরিমাণ জনসংখ্যা নেই। অকৃতকার্যদের মধ্যে অনেকে আছে যাদের নিজেদের কিছু ব্যতিক্রম ক্ষমতা আছে।’

কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, ‘জীবনের একটা শেষ প্রান্তে এসে ক্লাসের ভালো বা খারাপ ছাত্রদের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না। আমার সহপাঠীরা সবাই আজ নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। শ্রেণিকক্ষে অকৃতকার্য হওয়া মানে জীবনে বিফল হওয়া না। প্রতিটি জীবনই সফল হয়, তবে সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম থাকতে হবে।’

শিক্ষাবিদ নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার ৭০ শতাংশ হলে ফেল করার কোনো সুযোগ নাই। এনটিআরসিএ আগে থেকে তালিকা নিয়ে ২০ শতাংশ শিক্ষক বাড়তি রাখা প্রয়োজন। যেন কোনো স্খুলে শিক্ষক অবসরে যাওয়ার সাথে সাথে নিয়োগ দেওয়া যায়। কোনো প্রতিষ্ঠানে ক্যাশিয়ার না থাকলে সেখানে তো টাকা ভাগাভাগির কাজ চলবেই। বাইরের দেশের তুলোনায় আমাদের বইয়ে কন্টেন্ট অনেক কম। বেসরকারি পর্যায়ে এই বই লেখার কাজ করতে হবে। এতে অনেক লেখক ও তৈরি হবে। আবার বেসরকারি স্কুল গড়ে তোলে টাকা পয়সা নেওয়ার কারণে। স্কুল বেশি হলে বরাদ্দের অর্থ ব্যায়ের খাত বাড়ে। ফলে স্কুল গড়ার আগে এর অবকাঠামোসহ সব দিক বিবেচনা করে স্কুলের অনুমোদন দেওয়া প্রয়োজন।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘শিক্ষকতা পেশা সবচেয়ে সম্মানজনক। ফলে তাদের জীবনধারনের বিষয়টি সরকারকে নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আমার মতে, শিক্ষকতা পেশাটি সরকারিকরণ করা উচিত। একটা নির্দিষ্ট কাঠামোর মাধ্যমে তাদের এই নিয়োগ দিতে হবে। উত্তীর্ণ হওয়ার চেয়ে জীবন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ দেশ সরকার ও পরিবারের জন্য।’

পরীক্ষার পূর্বে প্রস্তুতিমূলক শিক্ষা কার্যক্রমে সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের তাগিদ দেওয়া হয়। এছাড়াও গণসাক্ষতার পক্ষ থেকে ১৬টি সুপারিশ করা হয়।

 

কাজল/এম হাসান

×