ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

স্টেশনেই কাটা যাবে নিজের টিকিট

ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে বেশি দূরত্বের যাত্রীদের

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

প্রকাশিত: ০০:২৮, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে বেশি দূরত্বের যাত্রীদের

১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের যাত্রীদের গুনতে হবে বেশি ভাড়া

রেলপথের যাত্রীদের জন্য রেয়াত (ছাড়) সুবিধা প্রত্যাহার হচ্ছে। যা আগামী ৪ মে থেকে কার্যকর হবে। এর ফলে ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের যাত্রীদের গুনতে হবে বেশি ভাড়া। তবে ১০০ কিলোমিটারের কম দূরত্বের যাত্রীরা আগের ভাড়ায় চলাচল করতে পারবে। এ ছাড়া রেলওয়ের অতিরিক্ত কোচ রিজার্ভ নিলে ২০-৩০ শতাংশ চার্জ দিতে হবে। যা আগামী ৪ মে থেকে কার্যকর হবে বলে রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান।

এদিকে রেলস্টেশনে যাত্রীরা নিজের টিকিট নিজেই কাটতে পারবে। এজন্য রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন স্টেশনে ১৫টি অটোমেটিক টিকিট ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য স্টেশনে এই মেশিন বসানো হবে বলে রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান। রেলওয়ে সূত্র জানায়, ট্রেনের বেশি দূরত্বের যাতায়াতের জন্য সারা বিশ্বেই বাড়তি ভ্রমণে উৎসাহী করতে যাত্রীদের ছাড় দেওয়া হয়।

তাই ১৯৯২ সাল থেকে ট্রেনের যাতায়াতের জন্য নির্দিষ্ট রেয়াত চালু করে রেলওয়ে। ফলে বেশি দূরত্বের পাশাপাশি নির্দিষ্ট কিছু পথে ভাড়া ছাড় দেওয়া হতো। ২০১২ সালে রেলের ভাড়া গড়ে ৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়। সে সময় নির্দিষ্ট এলাকাভিত্তিক রেয়াত বাতিল করা হয়। ২০১৬ সালে আরেক দফা সাড়ে ৭ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়। তবে বেশি দূরত্বে ভ্রমণের রেয়াত বহাল থাকে। গত বছরের শেষের দিকে চালু হওয়া একমাত্র ঢাকা-কক্সবাজার পথে চলাচলকারী ট্রেনগুলোতে কোনো ছাড় রাখা হয়নি। 

তাই বর্তমানে রেলপথে যাতায়াতের জন্য যাত্রীদের চাহিদা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া নতুন রেললাইন বৃদ্ধির কারণে রেলওয়ে লোকসান কমিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। তাই রাজস্ব ঘাটতির কারণে সরকার বিভিন্ন খাত থেকে আয় বাড়ানোর নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে রেলের লোকসানও বছরে দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রেলের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে আসে। তাই ভাড়া না বাড়িয়ে রেয়াত বাতিল করে আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় রেলওয়ে।

এতে সংস্থাটি বছরে ৩০০ কোটি টাকা বাড়তি আয় করতে পারবে। রেলপথের রেয়াত প্রত্যাহারের বিষয়টি গত ২ মার্চ অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা আগামী ৪ মে থেকে কার্যকর করার জন্য দৈনিক পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে রেলওয়ে। 
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ রেলওয়েতে দূরত্বভিত্তিক ও সেকশনভিত্তিক রেয়াতি প্রদান করা হয়।

২০১২ সালে ‘সেকশনাল রেয়াত’ রহিত করা হলেও দূরত্বভিত্তিক রেয়াত বলবৎ থাকে। সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়েতে যাত্রীবাহী ট্রেনগুলোতে ভাড়াবৃদ্ধি না করে শুধু বিদ্যমান দূরত্বভিত্তিক রেয়াত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সকল প্রকার যাত্রীবাহী ট্রেনে বিদ্যমান দূরত্বভিত্তিক রেয়াত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটি আগামী ৪ মে ২০২৪ থেকে কার্যকর করা হবে।’ 
এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর জনকণ্ঠকে বলেন, ‘রেয়াত সুবিধা প্রত্যাহারের বিষয়ে একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এটা আগামী ৪ মে থেকে কার্যকর হবে। এর ফলে যাত্রীরা ১০১ থেকে ২৫০ কিলোমিটার ভ্রমণে ২০ শতাংশ, ২৫১ থেকে ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ২৫ শতাংশ আর ৪০০ কিলোমিটারের ওপরে ৩০ শতাংশ জন্য যে রেয়াত সুবিধা পেত তা আর থাকবে না।

এতে ১০০ কিলোমিটার বেশি গেলে যাত্রীদের ভাড়া কিছুটা বাড়বে। এ ছাড়া রিজার্ভ ট্রেনের জন্য ২০-৩০ শতাংশ চার্জ দিতে হবে। কারণ রিজার্ভ ট্রেনটি ফেরার সময় খালি আসতে হয়। রেলওয়ে লোকসান কমিয়ে আনার জন্য ভাড়া না বাড়িয়ে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রামের শোভন চেয়ারের ভাড়া বাড়বে ৬০ টাকা ॥ রেলওয়ে সূত্র জানায়, বর্তমানে রেলে প্রতি কিলোমিটারে ভিত্তি ভাড়া ৩৯ পয়সা। এর সঙ্গে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) ও অন্যান্য উচ্চ শ্রেণির বিভিন্ন হারে ভাড়া যোগ হয়। সঙ্গে যোগ হয় ভ্যাট। এভাবেই মোট ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। এবার ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের ক্ষেত্রে আরও বাড়তি ভাড়া যোগ হবে। তাতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত শোভন শ্রেণির ভাড়া বাড়বে ৬০ টাকা। এসি স্নিগ্ধা শ্রেণির ভাড়া ১২০ টাকার মতো বাড়তে পারে।

আর এসি কামরা (বার্থ) ভাড়া বাড়বে ২১৬ টাকার মতো। তবে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, জয়দেবপুর, ফরিদপুরসহ ১০০ কিলোমিটার কম দূরত্বের যাত্রীদের ভাড়া বাড়বে না।
হিসাব অনুযায়ী, ১০১-২৫০ কিলোমিটার ভ্রমণে ২০ শতাংশ, ২৫১-৪০০ কিলোমিটার ভ্রমণে ২৫ শতাংশ এবং ৪০১ কিলোমিটারের বেশি যে কোনো পরিমাণ দূরত্বের জন্য রেয়াতি সুবিধা ছিল ৩০ শতাংশ। যা আগামী ৪ মে থেকে প্রত্যাহার করা হবে। তাই ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব ৩২১ কিলোমিটার। ১০০ কিলোমিটারের পর ২০ শতাংশ এবং ২৫০ কিলোমিটারের পর ২৫ শতাংশ ছাড় পান যাত্রীরা।

এই রুটে শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩৪৫ টাকা। বিরতিহীন সোনার বাংলা ট্রেনে এই শ্রেণিতে ভাড়া ৪০৫ টাকা। কিন্তু রেয়াত সুবিধাবিহীন এবং বিরতিহীন পর্যটক এক্সপ্রেসে ভাড়া ৪৫০ টাকা। রেয়াত সুবিধা উঠে গেলে সাধারণ ট্রেনেও শোভন চেয়ার শ্রেণিতে ভাড়া হবে ৪০৫ টাকা। ঈদযাত্রার কারণে এতদিন ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়নি। আগামী বুধবার থেকে বর্ধিত ভাড়ায় টিকিট বিক্রয় শুরু হবে বলে রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান।

এদিকে যাত্রীর আবেদনে সংযোজন করা অতিরিক্ত বগির ভাড়াও বাড়বে। সংযোজিত বগির শোভন শ্রেণিতে ২০ শতাংশ এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (স্নিগ্ধা) ও অন্যান্য উচ্চ শ্রেণিতে ৩০ শতাংশ রিজার্ভেশন সার্ভিস চার্জ যোগ করা হবে ভাড়ার সঙ্গে।
এ বিষয়ে রেলওয়ের পরিচালক (ট্রাফিক কমার্শিয়াল) নাহিদ হোসেন খান জনকণ্ঠকে বলেন, দীর্ঘদিনে ধরে আরোপিত রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে।

আগামী ৪ মে থেকে নতুন নিয়মে ট্রেনের ভাড়া দেবে যাত্রীরা। সরাসরি ভাড়া না বাড়ালেও রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহারের কারণে ট্রেন যাত্রায় আগের চেয়ে কিছুটা বাড়তি খরচ হবে যাত্রীদের। যা রেলের সেবা ও বিদ্যমান গণপরিবহনের ভাড়ার তুলনায় খুবই নগন্য। আগামী ২৪ এপ্রিল থেকে নতুন নিয়মে টিকিট কাটবে যাত্রীরা।
স্টেশনে যাত্রীরা নিজের টিকিট কাটতে পারবে ॥ রেলস্টেশনে যাত্রীরা নিজের টিকিট নিজেই কাটতে পারবে। এজন্য রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন স্টেশনে ১৫টি অটোমেটিক টিকিট ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য স্টেশনে এই মেশিন বসানো হবে বলে রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান। তবে টিকিট কাটতে অতিরিক্ত ২০ টাকা চার্জ কাটায় যাত্রীরা অসন্তোষ প্রকাশ করে।

রেলওয়ের সূত্র জানায়, এর মধ্যে কমলাপুরে অটোমেটিক টিকিট ভেন্ডিং মেশিন দুটি বসানো হয়েছে। মোট চারটি ভেন্ডিং মেশিন বসানো হবে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ ২১ স্টেশনে ভেন্ডিং মেশিন বসানো হবে। কমলাপুর স্টেশনে ৪টি, বিমানবন্দর স্টেশনে ২টি, চট্টগ্রাম স্টেশনে ২টি, সিলেট স্টেশনে ১টি, কক্সবাজার স্টেশনে ১টি, রাজশাহী স্টেশনে ২টি, খুলনা স্টেশনে ১টি, বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেশনে ১টি ও রংপুর স্টেশনে ১টি ভেন্ডিং মেশিন বসানো হবে।
আমিনুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘স্টেশনে গিয়ে ভেন্ডিং মেশিনে টিকিট কাটতে যদি অনলাইন চার্জ দিতে হয় তাহলে এই মেশিনের দরকার কী। তাহলে তো অনলাইনে কাটতে পারি।’ তাই ২০ চার্জ প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ আলম শিশির বলেন, অনলাইনে যেভাবে টিকিট কাটা হয়, ঠিক সেভাবেই ভেন্ডিং মেশিন থেকে টিকিট কাটা যাবে। তবে ভেন্ডিং মেশিনে টিকিট কাটা বেশ সহজ হচ্ছে। অনলাইন ও মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কাটা যাবে। এ পরিষেবার ব্যবহার ব্যাপকভাবে শুরু হলে অনেকটা ঝামেলা কমবে যাত্রীদের। তাছাড়া বিনা টিকিটের যাত্রী সংখ্যাও কমবে।

×