
উপজেলা নির্বাচন
নৌকা নিয়ে আওয়ামী লীগের জনগণের সামনে যাওয়ার সাহস নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রকাশের দিনটি ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে জাসদ (রব) আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আমীর খসরু বলেন, উপজেলা নির্বাচন সরকারের আরেকটা ভোটচুরির ভাঁওতাবাজি। যে দেশে ভোট নেই সে দেশে ভোটে অংশগ্রহণ করার কোনো সুযোগ নেই। যেখানে নির্বাচনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, যেখানে কোনো পার্টিসিপেশন নেই, উপজেলা নির্বাচন দেশের মানুষকে আরেকটা ধাপ্পাবাজির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
আমীর থসরু বলেন, ভোটচুরি প্রকল্পের মাধ্যমে সমস্ত জাতিকে আজকে সরকার জিম্মি করে রেখেছে। সরকারের এহেন অপকর্মের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর ঐক্য অটুট রাখতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের সুখবর হচ্ছে, দেশের মানুষ আজ সরকারের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। আমরা যারা বিরোধী দলে আছি আমাদের ঐক্য অটুট আছে। এই ঐক্য ভাঙার চেষ্টায় কোনো কিছু বাকি নেই। টাকা-পয়সা থেকে শুরু করে ভয়ভীতি, জেল-জুলুম, নিপীড়ন-নির্যাতনসহ সব চেষ্টা করা হয়েছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা ধানক্ষেতে ঘুমিয়েছে, বেড়িবাঁধে ঘুমিয়েছে কিন্তু তারা কমপ্রোমাইজ করেনি।
খসরু বলেন, আমরা ৩১ দফা ঐক্যবদ্ধভাবে দিয়েছি। এটা চলমান আন্দোলনের দফা অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের সাম্য-মানবিক মর্যাদা, ন্যায়বিচার ইত্যাদি বিষয়ে আমরা এক হয়েছি। আমাদের এই অবস্থার পরিবর্তন হবে না। আমাদের আন্দোলন চলমান আছে। খসরু বলেন, ৭ জানুয়ারির ভোটে ৯৫ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রে না যাওয়া বিরোধী দলের রাজনৈতিক সফলতা। তবে এবার সেই চিন্তা থেকে সরকার ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে নতুন কৌশল নিয়েছে।
এবার তারা চিন্তা করেছে যে, মানুষ নৌকাকে ভয় পায়, নৌকার কথা শুনলে বোধ হয় ভোটকেন্দ্রে যাবে না। সেজন্য নির্বাচনে তারা এবার দলীয় প্রতীক বাদ দিয়ে দিয়েছে। অথচ তারাই স্থানীয় সরকার আইন করেছে দলীয় প্রতীক দিয়ে নির্বাচন করার জন্য। আইনটা কিন্তু বাতিল করেনি। আইন বহাল রেখেই তারা এখন নৌকা প্রতীক নিয়ে জনগনের কাছে যাচ্ছে না। কারণ, দেশের জনগণ নৌকা যেখানে আছে তারা সেখানে নেই, তারা নৌকা বয়কট করেছে। তাই উপজেলা নির্বাচন আরেকটি ভাঁওতাবাজির নির্বাচন। ভোটচুরির প্রকল্পই তাদের ক্ষমতার উৎস। কারণ, এই ভোটচুরির প্রকল্প তাদের ক্ষমতায় রাখার ব্যবস্থা করেছে।
সভাপতির বক্তব্যে জাসদ সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে, যারা জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলে তাদের এদেশে বসবাস করা সম্ভব নয়। তাই দখলদার সরকারকে বিতাড়িত না করতে পারলে দেশে সাধারণ মানুষদের বসবাস কঠিন হয়ে পড়বে। এই দেশ আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন করেছিলাম এমন পরিবেশ দেখার জন্য নয়। দেশে গণতন্ত্র থাকবে না,অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না সেজন্য তো আমরা যুদ্ধ করিনি।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, স্বাধীনতার এত বছর পরও মানুষের মধ্য বিক্ষোভের যে আগুন জ্বলছে, সেই আগুনকে ঠিক মতো গুছিয়ে একটা দাবানল তৈরি না করলে বিক্ষোভকে আন্দোলনে রূপান্তরিত করা সম্ভব নয়। হঠকারী নয়, গঠনমূলকভাবে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। যত দেরি হবে তত আমাদের জন্য ক্ষতি হবে।
আমীর খসরু বলেন, সরকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ব্যাংক মার্জার (একীভূত) করার। মার্জার তো কোনো সরকারের সিদ্ধান্ত হতে পারে না। এটা বাজারের সিদ্ধান্ত। এটা করতে শেয়ার হোল্ডারদের মতামত প্রয়োজন হয়। কিন্তু কি দেখা যাচ্ছে? শেয়ার হোল্ডারদের কোনো খবর নেই, সরকার সিদ্ধান্ত দিচ্ছে ব্যাংক মার্জার করতে হবে। যারা ব্যাংক লুটপাট করে খেয়ে ফেলেছে তাদের জন্য এই মার্জার আরেকটা সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে।
জাসদের (রব) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাসদের আরও একটি অংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জাসদ নেতা তানিয়া রব, মোহাম্মদ সিরাজ মিয়া, কে এম জাবির প্রমুখ।