ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

নারী কর্মীদের বিদেশ যাওয়ার আগে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ 

প্রকাশিত: ১৯:৪৬, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩

নারী কর্মীদের বিদেশ যাওয়ার আগে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ 

নারী শ্রমিক

সম্প্রতি সময়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি নারী কর্মীদের নির্যাতিত হওয়ার সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। একারণে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক নারী কর্মীদের সব ধরনের খোঁজখবর নিয়ে তারপরে কর্মস্থলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। 

একইসঙ্গে প্রবাসীদের অধিকার যেন ক্ষুণ্ন না হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।

শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকার এফডিসিতে রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে অভিবাসী কর্মীদের অধিকার নিশ্চিতকরণ নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদের বিতর্ক অনুষ্ঠানে এ পরামর্শ দেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান।

কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০১০ সাল থেকে আমাদের নারী কর্মীরা বিদেশ যাচ্ছেন। নারী কর্মীরা বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যান্যদের মতো সব দেখেশুনে যাবেন। বিশেষ করে, প্রাক বিদেশ গমনের আগে জানতে হবে তার কর্মস্থল কোথায়, তার কী কাজ করতে হবে, সেখানকার পরিবেশ কী, সেখানকার আবহাওয়া কেমন; সেখানকার ভাষা কি। এসব বিষয় তাদের জানতে হবে।

২০১৯ সালে সৌদি আরব থেকে লাশ হয়ে দেশে ফেরা খুলনার আবিরন বেগমের উদাহরণ টেনে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, আবিরনের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, তাকে ভাষা সংক্রান্ত একটা ভুয়া সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছিল। উনি জানতেন না এ ধরনের একটা ভুয়া সার্টিফিকেটে তাকে দেওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে তাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের আরও কঠিন হতে হবে, যেন এ ধরনের কাজ আর কারও সঙ্গে না হয়।

রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর দায়বদ্ধতা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর আগে আরও বেশি অব্যবস্থাপনা ছিল। আগে তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। এখন তারা তালিকাভুক্ত হয়েছেন। যারা বিদেশ যাবেন তারা আগে তালিকা দেখে নেবেন, যাদের মাধ্যমে বিদেশ যাচ্ছেন, সেই রিক্রুটিং এজেন্সি তালিকাভুক্ত কিনা।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বোয়েসেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন।

চৌধুরী কিরণ বলেন, যে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা চলতি বছর ২৩ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা দেশে প্রেরণ করেছেন, তাদের সামাজিক মর্যাদা ও স্বীকৃতি এখনো আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। সরকারের নীতি কৌশল, বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব। আমাদের জিডিপিতে প্রবাসী আয়ের অবদান ৫.২ শতাংশ অথচ নেপালের জিডিপিতে প্রবাসী আয় ২৭ শতাংশ আমাদের এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা নিলামের মাধ্যমে ভিসা কিনে থাকে। একজন ভিসার দাম ১০০ টাকা বললে আরেকজন ১১০ টাকা বলে।

অনুষ্ঠানে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির পক্ষ থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১০ দফা সুপারিশ করা হয়।

১) সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাংবাদিক, শিল্পীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য যেভাবে জমি, প্লট, ফ্ল্যাট প্রদান করা হয় অভিবাসী কর্মীদের জন্য আবাসিক পল্লী গড়ে তুলে প্লট/ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া। যেখানে যারা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাবেন তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া।

২) অভিবাসীদের সন্তানদের জন্য সেনাবাহিনী পুলিশের মতো বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্য বিমার ব্যবস্থা করা।

৩) সামাজিক সুরক্ষা ভাতার মতো স্বল্প আয়ের অভিবাসী কর্মীদের বিশেষ ভাতা প্রদানসহ উৎসব ভাতা প্রদান করা।

৪) নামমাত্র সুদে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকসহ সকল তফসিলি ব্যাংকে বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীদের ঋণ প্রদান করা।  এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক শিডিউল ব্যাংকে তাদের প্রদত্ত ঋণের অন্তত ৫ শতাংশ স্বল্প সুদে অভিবাসী ইচ্ছুক কর্মীদের অভিবাসন খরচ মেটাতে ঋণ প্রদান করা।

৫) কাজ হারিয়ে দেশে ফিরে আসা কর্মীদের পুনর্বাসন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুনরায় বিদেশ প্রেরণের ব্যবস্থা করা। 

৬) মাইগ্রেশন ডিপ্লোম্যাসি আরও জোরদার করা।

৭) আগামী ৩০ ডিসেম্বর তারিখে অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রবাসী দিবসে চাকরি মেলার ব্যবস্থা করা।

৮) অভিবাসন খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে বিএমইটির উদ্যোগে গণশুনানি করে সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া। 

৯) দূতাবাসগুলোকে আরও অধিক শ্রমবান্ধব হওয়া।

 

এবি

সম্পর্কিত বিষয়:

×