ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বিএনপি পারে শুধু ভোট চুরি করতে: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১৮:১৫, ৪ নভেম্বর ২০২৩; আপডেট: ১৮:৩৬, ৪ নভেম্বর ২০২৩

বিএনপি পারে শুধু ভোট চুরি করতে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশ ভালো থাকে। আর বিএনপি কী পারে? শুধু ভোট চুরি, দেশের অর্থ চুরি, জনগণকে হত্যা করা। নানা ধরনের অত্যাচার নির্যাতন। এই ২৮ অক্টোবর কী ঘটনা ঘটাল তারা! আপনারা একবার বলেন। কোনো মানুষ যার ভেতরে সামান্য মনুষ্যত্ব আছে তারা কি এমনভাবে একজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করতে পারে? বিএনপির তাণ্ডবের মুখে পুলিশ পিছু হটে যায়। তারপরও তারা ওই পুলিশ সদস্যকে ধরে যেভাবে লাঠিপেটা করে হত্যা করল, পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে যেভাবে অ্যাম্বুলেন্স পোড়াল, এমনকি তারা আমাদের নারী সদস্যদের ওপরও হামলা চালিয়েছে। তারপরও পুলিশ অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে।

তিনি বলেন, শুধু এখনই নয়, এর আগেও একইভাবে পুলিশের ওপর হামলা হয়েছিল। ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে ২৯ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছিল তারা। রাজশাহীতে একজন পুলিশ সদস্যকে মাটিতে ফেলে হত্যার কথা স্মরণ রাখা দরকার। গাইবান্ধা থেকে শুরু করে অনেক এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা করেছে তারা। পুলিশ কী দোষ করেছে? তারা তো শুধু দায়িত্ব পালন করছে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা তারা দেবে। আজ তারা যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। একটি বাসের হেলপার ঘুমিয়ে ছিল, ওই বাসে আগুন দিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

এসময় তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনের তফসিল যেকোনো সময় ঘোষণা হতে পারে। সেই নির্বাচনে যাকে প্রার্থী দিই তাকেই ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। এবার নৌকা জিতবেই।


তিনি বলেন, নৌকা মার্কাই পারে স্বাধীনতা দিতে, নৌকা মার্কাই পারে উন্নয়ন দিতে। আমি ঢাকাবাসীর প্রতি অনুরোধ করব, একটা বিষয় মাথায় রাখবেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিলেন বলেই এতো উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছেন।

শনিবার (৪ নভেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে রাজধানীর আরামবাগে আয়োজিত জনসভায় এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচনে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, সেটা আমরা নির্ধারণ করব। যাকে মনোনয়ন দেব ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে তার পক্ষে কাজ করতে হবে। যেন আবারও আমরা এ দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি। এখনও অনেক উন্নয়নকাজ বাকি সেগুলোও যেন শেষ করতে পারি। কারণ অগ্নি-সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে এ দেশটাকে টিকতে দেবে না। সে জন্যই সকলকেই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, যে দেশকে জাতির পিতা স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। সেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাটাই আমাদের কাজ। দলের সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। যাতে করে ঘাতকের দল, বিএনপি-জামায়াত এ দেশের মানুষকে আর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারতে না পারে। আর দেশের জনগণের ওপর অত্যাচার করতে না পারে। তার জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল উদ্বোধন করলাম। এ মেট্রোরেল ঢাকাবাসীর জন্য উপহার। তবে মেট্রোরেল ব্যবহারে আমাদের যত্নবান হতে হবে, যাতে করে এটির ক্ষতি না হয়।

তিনি বলেন, এই ঢাকার মানুষের জন্য আমরা মেট্রোরেল নিয়ে এসেছি। যারা উত্তরায় বসবাস করেন তারা মাত্র ৪০ মিনিটে প্রতিদিন উত্তরা থেকে মতিঝিল আসা যাওয়া করতে পারবেন। ইতোমধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ২৫ হাজার যাত্রী চলাচল করছেন। আমি মতিঝিল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত এ মেট্রোরেল বর্ধিত করেছি। সেটার কাজও চলছে।

সরকারপ্রধান বলেন, সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাতাল রেল হবে। আকাশ রেল দেখলাম, এখন পাতাল রেল আমরা করব। সেটা নিয়েও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। একই সঙ্গে এমআরটি লাইন ফাইভ, অর্থাৎ পাতাল রেলের কাজ উদ্বোধন করে দিয়েছি। এটাও ঢাকাবাসীর জন্য উপহার আমি দিয়ে গেলাম।  এমআরটি লাইন-৬ উত্তরা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে। এটার সমীক্ষা চলছে। মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য ১২ হাজার প্রকৌশলীর চাকরির ব্যবস্থা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আজ মেট্রোরেলে চড়ে আমি এ অনুষ্ঠানে এসেছি। মেট্রোরেলটি ঢাকাবাসীর জন্য উপহার। যখন যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর্থ সামাজিক উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই ঘাতকরা তাকে হত্যা করে। আমাদের জয় বাংলা স্লোগান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিল। ১৫ আগস্ট আমাদের জাতীয় জীবনের একটি কালো অধ্যায়। ১৫ আগস্টের সময় যারা সরকারে ছিল তারা জনগণের জন্য কিছুই করেনি।

তিনি বলেন, আমরা দুই বোন বিদেশে থাকায় বেঁচে গিয়েছিলাম। ৬ বছর জিয়াউর রহমান আমাদের দেশে আসতে দেয়নি। রেহানার পাসপোর্টও দেয়নি। আমি আওয়ামী লীগ ও দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, যারা আমার অবর্তমানে আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করেছিলেন। আমি এমন একটি সময় দেশে ফিরেছিলাম যখন স্বাধীনতা বিরোধীরা দেশের ক্ষমতায় ছিল। প্রতিনিয়ত আমার ওপর আঘাত আসে। আমার নেতাকর্মীরা মানবঢাল রচনা করে বারবার আমাকে রক্ষা করে।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কারণে আমি বারবার জীবন ফিরে পেয়েছি। আমিও বাবার মতো এই বাংলাদেশের মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছি। যে আদর্শ নিয়ে জাতির পিতা এই দেশ গড়ে তুলছিলেন, সেই বাংলাদেশ আমি গড়তে চাই।

তিনি বলেন, সোনার বাংলাদেশ আমি গড়তে চাই। এ ঢাকার মানুষের জন্য আজকে আমরা নিয়ে এসেছি মেট্রোরেল। যানজটে কষ্ট পেতে হবে না, রাস্তায় আটকে থাকতে হবে না। যারা চাকরিজীবী, যারা কর্মজীবী, ছাত্র-শিক্ষক সকলে, বিশেষ করে আমার মেয়েরা, নারীরা, নিরাপদে চলাচল করতে পারবে এই মেট্রোরেলে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধী দলের নেত্রীও হতে পারবে না। আল্লার মাইর দুনিয়ার বাইর। এখন নিজেই ভেবে দেখুক কে কোথায় আছে। আমি কখনো গর্ব করি না। আমার কাছে ক্ষমতা হচ্ছে জনগণের সেবা করা। আমি চাই এ দেশের মানুষ সুখে থাকুক।

সরকারপ্রধান বলেন, দারিদ্র্যের হার আমরা কমিয়ে এনেছি। খালেদা জিয়ার আমলে যা ছিল ৪১ শতাংশ, বর্তমানে তা ১৮ শতাংশ। হতদরিদ্র ছিল ২৫ শতাংশ, বর্তমানে আমরা ৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। দেশে আর হতদরিদ্র থাকবে না। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, স্কুলের ছেলে মেয়েদের জন্য বিনামূল্যে বই, উপবৃত্তি, বৃত্তি, গবেষণার জন্য টাকা- সবকিছুই আমরা দিয়ে যাচ্ছি। করোনার সময় বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়েছি, বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছি। দেশের মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য নগদ টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন কিনে ভাড়া করা বিমানে অনেক টাকা খরচ করে দেশে এনেছি।

 

এবি

সম্পর্কিত বিষয়:

×