রাজধানীর জলাবদ্ধতা
রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে এ পর্যন্ত প্রায় ২২৫ কোটি টাকা খরচ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। খাল সংস্কার, ড্রেনেজ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্পে এ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ থেকে এখনো নগরবাসীকে পুরোপুরি মুক্ত করতে পারেনি। বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় ঢাকার বিভিন্ন সড়ক। এর মূল কারণ ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থার সক্ষমতার অভাব। আবর্জনায় বন্ধ হয়ে গেছে ড্রেনের মুখগুলো। এ ছাড়া প্রধান প্রধান সড়কের পাশে ড্রেন ও নালা থাকলেও তা আবর্জনায় ঢাকা পড়ে গেছে। ভারি বৃষ্টিপাতে সড়কের পানি দ্রুত নামতে পারে না তাই জলাবদ্ধতা তৈরি হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
গত বৃহস্পতিবার রাতে টানা ছয় ঘণ্টা বৃষ্টিতে ডুবে যায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক। এর ফলে রাজধানীর অনেক সড়ক ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানির নিচে ডুবে থাকে। পানি এত বেশি ছিল যে, অনেক সড়কে যানবাহনে পানি ঢুকে বিকল হয়ে পড়ে। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত অনেক এলাকার মার্কেট, দোকান, কাঁচাবাজার, মানুষের বাসাবাড়ি, রাস্তা-গলি পথ পানিতে ডুবে ছিল। কিন্তু নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা থাকলে সেই পানি দ্রুত সরে যাওয়ার কথা। কিন্তু পানি নিষ্কাশনে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় এই জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রাজধানীবাসীর।
খারাপ ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে দীর্ঘদিন থেকে ভোগান্তি পোহাতে হয় নগরবাসীকে। তবে ঢাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এমন ১৩৬ টি পয়েন্টের মধ্যে ১০৪টি পয়েন্টের কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান ডিএসসিসির কর্মকর্তারা। আগামী দুই-এক বছরের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে। এ ছাড়া খালগুলো সংস্কার করে পানি প্রবাহ সৃষ্টি হলে ঢাকার জলাবদ্ধতা পুরোপুরি নিরসন করা সম্ভব হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেল) মো. খায়রুল বাকের জনকণ্ঠকে বলেন, ‘ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো প্রকল্প নেই। দক্ষিণ সিটি করপোরেসনের নিজস্ব অর্থায়নে খাল ও ড্রেনেজ সংস্কার করে জলাবদ্ধতা নিরসন করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত দেড়শ’ থেকে দুইশ’ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু খরচ হয়েছে আরও কিছু বাকি আছে। ঢাকায় জলাবদ্ধতার ১৩৬ পয়েন্টের মধ্যে ১০৪ পয়েন্টের কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে অনেক স্থানে ড্রেনের আবর্জনা পরিষ্কার করেই জলাবদ্ধতা নিরসন করা হয়েছে। তবে এটা একটি চলামান প্রক্রিয়া। এক পয়েন্টের কাজ শেষ হলে আবার নতুন পয়েন্ট যুক্ত হয়।’ তাই ঢাকার খালগুলো সচল না হলে জলাবদ্ধতা পুরোপুরি নিরসন করা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, রাজধানীতে ঢাকা ওয়াসা রক্ষণাবেক্ষণ করে ৩৮৫ কিলোমিটার গভীর ড্রেন ও ৪টি পাম্প স্টেশন এবং ১০ কিলোমিটার বক্স কালভার্ট। পানি উন্নয়ন বোর্ড রক্ষণাবেক্ষণ করে ৫২টি স্লুইস গেট এবং ১টি পাম্প স্টেশন, রাজউক রক্ষণাবেক্ষণ করে ২৫ কিলোমিটার লেক এবং ৩০০ কিলোমিটার জলাশয়। ডিএনসিসির ১ হাজার ২৫০ কিলোমিটার ড্রেনেজ লাইন রয়েছে এবং ডিএসসিসির রয়েছে ৯৬১ কিলোমিটার ড্রেনেজ লাইন। এ ছাড়া বর্তমানে ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের আওতায় দেওয়া হয়েছে ২৬টি খাল। তবে সব খাল ও ড্রেনেজ রক্ষাণবেক্ষণের অভাবে ভরাট হয়ে যায়। তাই বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় বলে স্থানীয়রা জানান।
আবর্জানায় বন্ধ থাকে ড্রেনের মুখ ॥ জলাবদ্ধতা নিরসনে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে ড্রেনেজ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু বেশিরভাগ সড়কে আবর্জনা পড়ে পানি নিষ্কাশনে ড্রেনের মুখগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এসব আবর্জনার মধ্যে পলিথিনের ব্যাগ, প্লাস্টিকের বোতল, বিভিন্ন খাবারের উচ্ছিষ্ট, গ্লাস ভাঙা, ময়লা কাপড় ও কাগজের ছেঁড়া অংশ ড্রেনের মুখ বন্ধ করে দেওয়ায় পানি নামতে না পারায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এসব ড্রেনের মুখগুলো সিটি করপোরেশনের কর্মীদের নিয়মিত পরিষ্কার করার কথা। কিন্তু ছয় মাস ও এক বছরের তাদের দেখা যায় না বলে স্থানীয়রা জানান।
জলাবদ্ধতায় নগরীর অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকার বাসিন্দাদের সবচেয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে জানান তারা। গত বৃহস্পতিবার রাতের বৃষ্টির পানি শুক্রবারও নামেনি যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায়। বংশাল এলাকায় সড়কের একাংশ ছিল পানির নিচে শুক্রবারও। শুধু বংশাল নয়, পুরান ঢাকার নর্থসাউথ রোড, কাজী আলাউদ্দিন রোড, আগা সাদেক খান রোড, সিক্কাটুলি পার্কের সামনের সড়ক, নিউমার্কেট, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কয়েকটি হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হলসহ বেশ কিছু এলাকার পানি ১৫ ঘণ্টায়ও পুরোটা সরেনি বলে স্থানীয়রা জানান।
শহীদুল ইসলাম নামের রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর বিবিরবাগিচার এক বাসিন্দা জনকণ্ঠকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতের বৃষ্টিতে অনেক সড়কেই পানি জমে। ড্রেনের মুখ বন্ধ থামায় পানি ঠিকমত নামছিল না। পরে রাতে লোক ড্রেনের মুখ পরিষ্কার করা হলে সকালের মধ্যে পানি নেমে যায়। সব এলাকায় একই সমস্যা। রাস্তা ড্রেনগুলো ঠিক নেই। আবর্জনায় বন্ধ থাকে ড্রেনগুলো। সিটি করপোরেশনের লোক ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করে না। কিছুদিন আগে এই এলাকায় রাস্তায় বড় বড় পাইপ বসানো হয়েছে। কিন্তু আবর্জনায় তা ভরে যায়। তাই ভারি বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।’ এজন্য নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কারের দাবি জানান তিনি।
জহিরুল ইসলাম নামের বংশাল এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘বংশাল এলাকায় অনেক এলাকাতে রাস্তা সংস্কার ও উন্নয়নের নামে রাস্তা উঁচু হয়ে যাওয়ার কারণে অল্প বৃষ্টিতেই বসতবাড়ি পানি ঢুকছে। এমনকি কিছু এলাকায় বছরের অধিকাংশ সময় জলাবদ্ধ থাকে। রাস্তার ড্রেনের মুখ বন্ধ থাকায় পানি প্রবেশ করতে পারে না। বৃহস্পতিবারের বৃষ্টির পানিতে দুইদিন ধরে বন্দি ছিলাম আমরা।’ রাস্তার পানি গলিপথ ও বাসা-বাড়ির নিচ তলায় প্রবেশ আরও দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে বৃষ্টির হওয়ার একদিন পরও ডুবে ছিল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা। এ বিষয়ে রবিবার এক অনুষ্ঠান শেষ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)র মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, সে দিন টানা ৬ ঘণ্টায় ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তাই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়েছে। খালগুলো আমরা ভরাট করে ফেলছি, দখল করছি। এ ছাড়া যেখানে-সেখানে পলিথিন, বোতল, আবর্জনা ফেলছি। যেগুলো গিয়ে ড্রেনে পড়ছে, সেগুলো পানি নামা বাধাগ্রস্ত করছে। পানি প্রবাহ নষ্ট হয়ে, যেতে না পেরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। সেই পানি নেমে যেতে সময় লাগছে, সেই সময় তো দিতে হবে।
তিনি বলেন, একসময় শেওড়াপাড়া, মধুবাগ, খেজুরবাগান, সংসদ ভবনের পাশের রাস্তা, নেভির সামনের রাস্তা ডুবে যেত। এখন কিন্তু সেই পরিস্থিতি নেই। জলাবদ্ধতা হয়, আবার পানি নেমে যায়। ঢাকা শহরের অলিগলি ২০ ফুটের কম হলে আমরা রাস্তার জন্য বরাদ্দ দেব না। এটা আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ ২০ ফুটের কম রাস্তা হলে সেখানে ড্রেন করার জায়গা থাকে না। এখনো অনেক রাস্তা আছে যেগুলো ২০ ফুটের কম।
সেগুলোতেই মূলত জলাবদ্ধতার সমস্যা বেশি দেখা যায়। বিভিন্ন জায়গায় বোতল, পলিথিন, নানা আবর্জনা আমরা ইচ্ছে মতো যেখানে-সেখানে ফেলছি। সেগুলো গিয়ে ড্রেনের মধ্যে ঢুকছে, সেগুলোই পানি নামতে সমস্যা করছে। তাই জলাবদ্ধতা কমে যেতে বা পানি সরে যেতে কিছুটা সময় লাগছে। আমরা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ১০টি র্যাপিড অ্যাকশন টিম গঠন করে দিয়েছি। তারা বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে এবং জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। আমরা কিন্তু বসে নেই। আমরা, কাউন্সিলররাসহ সংশ্লিষ্টরা মিলে সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এখন চ্যালেঞ্জ হলো রাস্তাগুলো ২০ ফুট করতে হবে। আর অলিগলিতে যেসব ড্রেন আছে সেগুলো আমরা বড় করার কাজ শুরু করেছি, যাতে দ্রুত পানি নেমে যেতে পারে। দক্ষিণখান এবং আজমপুরে আমরা এ কাজগুলো ইতোমধ্যে শুরু করেছি। মিরপুর-১০ নম্বর থেকে শেওড়াপাড়া দিকে যে রাস্তা, এটাতে আগে জলাবদ্ধতা হলে দুই-তিন দিন ধরে থাকত। আমরা কিছু কাজ করার ফলে এখন কিন্তু সেখানে ওই রকম জলাবদ্ধতা থাকে না। সব ড্রেনের ডায়ামিটার কিন্তু এক না, অলিগলিতে একটু ছোট লাইন, সেখান থেকে পানি আসবে বড় লাইনে, এর পর সেখান থেকে পানি খালে নামবে।
সেহেতু পানি সরে যেতে কিছুটা সময় দিতে হবে। কল্যাণপুরে ১৩০ একর জায়গার ওপরে ওয়াটার রিটেনশন পন্ড ছিল, যেখানে বৃষ্টির পানি গিয়ে জমা হতো। সেখানে ইতোমধ্যে একটি সরকারি সংস্থা ৪০ বিঘা জমি বালি দিয়ে ভরাট করেছে। তা হলে রাজধানীর যে জলাবদ্ধতা, যে পানি জমে থাকে সেই পানি কোথায় গিয়ে নামবে? আমাদের সবার মনে রাখতে হবে আমরা যেন পরিবেশটা নষ্ট না করি। পরিবেশ নষ্ট করলে পরিবেশ নিজেই এক সময় প্রতিশোধ নেবে। জলাবদ্ধতাসহ এমন নানা সমস্যার সম্মুখীন আমাদের হতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত ॥ বৃষ্টি হলে সাধারণত এই পানি খাল, বিল, নদী ও পুকুরে জমা হয়। কিছু পানি মাটির নিচে চলে যায়। কিন্তু ঢাকার শহরের বেশিরভাগ এলাকায় কংক্রিট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। নেই পর্যাপ্ত পুকুর ও খাল। তাই ভারি বৃষ্টি হলে সড়কে তৈরি হয় জলাদ্ধতা। জলাবদ্ধতা নিরসনে ইতোমধ্যে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে, সেগুলোও সুপরিকল্পিতভাবে হয়নি। বিশেষ করে যথাযথভাবে হয়নি ড্রেনেজ, খাল ও বক্স কালভার্ট পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ। আর বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদনে সিটি কর্পোরেশন এবং সরকারের অন্য সংস্থার মধ্যে ছিল না তেমন কোনো সমন্বয়ও। ফলে জলাবদ্ধতার জন্য একে অন্যকে দায়ী করেই বছর পার করছে সংস্থাগুলো। তবে সুযোগ পেলেই মোটা অঙ্কের একাধিক প্রকল্প নেয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহী সংশ্লিষ্টরা। সমস্যার সমাধান হচ্ছে কি না, সেদিকে নজর নেই তাদের। বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণের ওপর তাগিদ দিয়ে প্রতিটি কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এজন্য শুধু অর্থ খরচ করলেই হবে না। জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিকল্পতি কাজ করার পরামর্শ তাদের।
এ বিষয়ে স্থপতি ইকবাল হাবিব জনকন্ঠকে বলেন, ‘রাজধানীতে তরল ও কঠিন দুই ধরনের বর্জ্যরে সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে তরল বর্জ্যরে অপসারণের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। তারা মাত্র ১৫ শতাংশ বর্জ্য অপসারণ করে। বাকি বর্জ্য সব নদী ও খালে পড়ে। একই অবস্থা সিটি করপোরেশনের। নগরীর কঠিন বর্জ্য অপসারণের দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনের। কিন্তু ৫৫ শতাংশ বর্জ্য অপসারণ করে বাকি বর্জ্য সব ড্রেন, খাল ও নদীতে ফেলা হয়। এর ফলে সব জলাশয় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ময়লা পড়ে ড্রেনের মুখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সিটি করপোরেশন ওয়াসার থেকে খালের দায়িত্ব নিয়েই কাজ শেষ। খাল সংস্কারের জন্য নেই কোন পরিকল্পনা।’ জলাবদ্ধতা নিরসনে পরিকল্পিত কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি।
চার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শোকজ ডিএসসিসির ॥ বৃষ্টি থামার ২৪ ঘণ্টায়ও নিউমার্কেট ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড এলাকায় জমে থাকা জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যর্থতায় চার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর নোটিস (শোকজ) দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। রবিবার বিকেলে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছেন।
এতে বলা হয়, বৃষ্টি শেষ হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেও নিউমার্কেট ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন করতে না পারার ঘটনায় নিজ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা ও তদারকিতে গাফিলতির দায়ে চার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে নোটিস দেওয়া হয়েছে তারা হলেন- করপোরেশনের সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসগর, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম মিয়া, পরিচ্ছন্ন পরিদর্শক মোহাম্মদ আবদুন নুর ও পরিচ্ছন্ন পরিদর্শক মোহাম্মদ সোহেল।
নোটিসে বলা হয়েছে, ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি অতীব জনগুরুত্বপূর্ণ কাজ। এই কাজের মাধ্যমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। গত ২১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টিপাত হওয়ায় রাস্তায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহনসহ পথচারীদের চলাচলে ভীষণ অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। বৃষ্টি শেষ হওয়ার ১ ঘণ্টার মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসন করার বিষয়ে মেয়রের নির্দেশনা থাকলেও ২৪ ঘণ্টাতেও জলাবদ্ধতা নিরসন করতে পারেননি; যা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ জাতীয় বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। যার ফলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সুনাম ক্ষুণœ হয়েছে। তাই দায়িত্বশীল পদে থেকে এ ধরনের গাফিলতি বা ব্যর্থতার জন্য তাদের বিরুদ্ধে কেন বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তার লিখিত জবাব দাখিল করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হলো।’
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীতে সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ৬ ঘণ্টায় ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পানিতে তলিয়ে থাকা ঢাকার বিভিন্ন সড়কে মধ্যরাতেও আটকে ছিল শত শত গাড়ি। বংশাল, পুরান ঢাকার নর্থসাউথ রোড, কাজী আলাউদ্দিন রোড, আগা সাদেক খান রোড, সিক্কাটুলি পার্কের সামনের সড়ক, নিউমার্কেট, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কয়েকটি হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হলসহ বেশকিছু এলাকা দীর্ঘ সময় পানির নিচে থাকে। এ ছাড়া মিরপুরে বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।