বিশ্ব ব্যক্তিগত (প্রাইভেট) গাড়িমুক্ত দিবস আজ
বিশ্ব ব্যক্তিগত (প্রাইভেট) গাড়িমুক্ত দিবস আজ। সড়কে হাঁটা, সাইকেল ও গণপরিবহন ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য প্রতিবছর ২২ সেপ্টেম্বর এই দিবসটি পালন করা হয়। ২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশে বেসরকারি উদ্যোগে দিনটি উদযাপন করা হচ্ছে। ২০১৬ সালে প্রথম সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে দিবসটি পালন শুরু হয় দেশে। প্রতিবছর দিবসের অঙ্গীকার অনুযায়ী সরকারের পক্ষ থেকে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার সীমিত বা নিয়ন্ত্রিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে দিবসটি পালন করে আসছিল পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম যানজটপ্রবণ ঢাকা শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্ত্বেও সরকারিভাবে এ বছর দিবসটি পালনের তেমন কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করেনি সংস্থাটি। তবে বেসরকারিভাবে দিবসটি পালনে ঢাকায় বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে একাধিক সংগঠন।
ঢাকায় বাড়ছে ব্যক্তিগত গাড়ি ॥ প্রতিনিয়ত ঢাকার রাস্তায় নামানো হচ্ছে নতুন প্রাইভেটকার বা ব্যক্তিগত গাড়ি। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য মতে, চলতি বছরের আগস্ট সারাদেশে ২৩ হাজার ৮১২টি ব্যক্তিগত গাড়ি নিবন্ধন করা হয়েছে। এ হিসেবে প্রতিদিন ১০০ টি ব্যক্তিগত গাড়ি নিবন্ধণ করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকা মহানগরীতে নিবন্ধন করা হয়েছে ১১ হাজার ৩৩৪ টি। গত ১০ বছরে সারাদেশে ৯ লাখ ১ হাজার ১৪০টি ব্যক্তিগত গাড়ি নিবন্ধন করা হয়েছে বলে সংস্থাটির সূত্র জানায়।
বিআরটিএ’র সূত্র জানায়, বর্তমানে ঢাকায় চলাচলের জন্য নিবন্ধনকৃত ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ৪ লাখ ৭ হাজার ১৯৯টি। এর মধ্যে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ২২৬টি প্রাইভেট কার ও ৭০ হাজার ৯৭৩টি জিপ। এছাড়া মোটরসাইকেলও ব্যক্তিগত গাড়ির মধ্যে ধরা হয়। রাইড শেয়ারিং নীতিমালা অনুমোদনের পর রাজধানীতে বেড়ে গেছে মোটরসাইকেল ও গাড়ির সংখ্যা। ঢাকা মহানগরীতে ১০ লাখ ৭৮ হাজার ৪৯৭ টি নিবন্ধনকৃত মোটরসাইকেল চলাচল করে। পার্কিংয়ের সুব্যবস্থা না থাকায় রাস্তার পাশে পার্কিং করা হয়। ফলে সৃষ্টি হয় প্রচ- যানজট।
বর্তমানে ঢাকায় প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের যাতায়াত ৫ কিলোমিটারের মধ্যে, যার অর্ধেক যাতায়াত আবার ২ কিলোমিটারের মধ্যে। এই স্বল্প দূরত্বের যাতায়াতের জন্য সাইকেলে ও হেঁটে নিরাপদে চলাচলের পরিবেশ তৈরি করা এবং অধিক দূরত্বের জন্য গণপরিবহন নিশ্চিত করা গেলে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ ও ইনস্টিটিউট ফর প্লানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. আদিল মোহাম্মদ খান জনকণ্ঠকে বলেন, ঢাকা শহরে মানসম্মত গণপরিবহন নেই বললেই চলে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মেট্রোরেলের একটি লাইন আংশিক চালু হলেও ঢাকার যোগাযোগ চাহিদার খুবই অল্পসংখ্যক লোককে ধারণ করতে পারবে এই লাইন। ঢাকার বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্প শম্বুক গতিতে চলছে। উন্নত বাস সার্ভিস ও পথচারীবান্ধব শহর গড়তে রাষ্ট্রের বিনিয়োগ খুবই স্বল্প। রাজধানীজুড়ে একের পর এক উড়ালসড়ক হয়েছে। কিন্তু যানজট কমাতে পারেনি। ব্যক্তিগত গাড়িগুলোক রাস্তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, বিপরীতে অযান্ত্রিক বাহনগুলোর যাতায়াত অনেকক্ষেত্রে সীমিত করে ফেলা হয়েছে। তাই ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে টেকসই গণপরিবহন যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ দেন তিনি।
৪০০০ শহরে পালিত হয় দিবসটি ॥ নাগরিকদের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার না করে বরং সাইকেল, হাঁটা বা গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহিত করতে ’৭০-এর দশকে ইউরোপে গাড়িমুক্ত দিবসের সূচনা হয়। একশ’ বছর পূর্বে মানুষ নগরীতে ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া চলাচল করেছে। শহরের পরিধি বৃদ্ধি এবং ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় শহরে বেশি বেশি সড়ক অবকাঠামো বানানোর প্রচলন শুরু হয়। যা দুষ্টু চক্রের ন্যায় জ¦ালানি অপচয়, দুর্ঘটনা, যানজট, দূষণ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখা দেয়। এর পর ১৯৬১ সালে লেখক ও সাংবাদিক ইয়ান জ্যাকবস তার ‘দি ডেথ অ্যান্ড লাইফ অব গ্রেট আমেরিকান সিটিস’ বইতে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে প্রথম ধারণা দেন।
এর পর ১৯৬২ সাল থেকে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন শহরে সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে শুধু পথচারীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। পরে উইরোপে এই ধারণাটির প্রসার ঘটে। ১৯৭৪ সালে সুইজারল্যান্ডে গাড়িমুক্ত দিবস পালন করা হয়। ১৯৯৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ফ্রান্সে জাতীয়ভাবে ৩৪টি শহরে গাড়িমুক্ত দিবস পালিত হয়। ২০০১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বিশে^র ৩৩টি দেশের প্রায় ১০০০ শহরে বিশ^ ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস পালন করা হয়।
বর্তমানে প্রতিবছর ৪০০০ শহরে দিবসটি পালিত হয়।
এরই অংশ হিসেবে নাগরিকদের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার না করে বরং সাইকেল, হাঁটা বা গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহিত করতে আজ শুক্রবার সকাল ১০ টায় ধানম-ির সাত মসজিদ রোডে র্যালি ও শোভাযাত্রার আয়োজন করেছে পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, বুয়েট, ইনস্টিটিউট ফর প্লানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি), নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ), দ্য ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিইং বাংলাদেশ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট।