ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংবাদ সম্মেলনে কাদের

এবারের বাজেট সংকটে ঘুরে দাঁড়ানোর বাজেট

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:২১, ৩ জুন ২০২৩; আপডেট: ১০:৫১, ৪ জুন ২০২৩

এবারের বাজেট সংকটে ঘুরে দাঁড়ানোর বাজেট

ওবায়দুল কাদের

প্রস্তাবিত বাজেটকে সংকটে ঘুরে দাঁড়ানোর বাজেট হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটি বলেছে, স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এবারের বাজেট প্রস্তাব করেছে সরকার। এবারের বাজেট সংকটে ঘুরে দাঁড়ানোর বাজেট। বিশ্ব অস্থিরতার মধ্যেও বাংলাদেশের শেখ হাসিনা ম্যাজিক লিডারশিপের পরিচয় দিয়েছেন। সরকার মুদ্রাস্ফীতি সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করছে। এবারের বাজেট সাধারণ মানুষকে কেন্দ্র করে করা হয়েছে।
শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে দলের পক্ষে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে এসব কথা বলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। 
তিনি বলেন, বিশ্বে যারা স্যাংশন দিচ্ছে, যারা যুদ্ধ বাধাচ্ছে তারাই বিশ্বের জনগণকে কষ্ট দিচ্ছে। কষ্ট দিচ্ছে বিশ্ব পরিস্থিতি। আমরা কষ্ট দিচ্ছি না। আমাদের জনগণকে আমরা কষ্ট দিতে চাই না, দিতে পারি না। কিন্তু কষ্টটা তো পাচ্ছে বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে। আমরা আমদানি করি অনেক বেশি দামে, আমাদেরকে বিক্রি করতে হয় তার চেয়ে অনেক কম দামে। এখানে পার্থক্যটা দেখেন। সাধারণ মানুষের জন্য তো স্যাক্রিফাইস শেখ হাসিনা সরকার করছে। 
বাজেট নিয়ে সমালোচনার জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, যাদের অর্থনীতিই ছিল লুটপাটের, সেই বিএনপি এই বাজেটকে লুটপাটের বাজেট বলে কী করে? তাদের সময় কী পরিমাণ বাজেট ছিল? আজ তা কী হয়েছে? আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে ধারাবাহিক অগ্রগতির ফলে জিডিপির উন্নয়ন হয়েছে। আট থেকে ৯ অর্থ বছরে কী ছিল বাংলাদেশ, আজ ৩৫তম অবস্থানে আছে। বাজেটের কৃচ্ছ্র সাধন করে জিডিপির অর্জনে এগিয়ে যাচ্ছে। 
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপপ্রচার সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে গোটা বিশ্বে অস্থির পরিস্থিতি  তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় দ্রব্যমূল্যসহ জ্বালানির দাম বৃদ্ধি স্বাভাবিক। চলমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ম্যাজিক লিডারশিপের কারণে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপি শুধু সমালোচনা করে, তাদের কোনো পরামর্শ নেই। বিএনপি সরকারকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে। বাজেট নিয়ে বিএনপির মুখে সমালোচনা শোভা পায় না। 
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর রিজার্ভ কি ছিল? শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৪৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছিল, কিন্তু বিশ্ব সংকটে এটার কিছুটা তারতম্য আছে। তবে সব সংকটই সমাধান হয়ে যাবে দ্রুত। বিশ্বের অনেক দেশেই অর্থনৈতিক সংকট সমাধানে অস্থির অবস্থা। অনেক চিন্তা করে এবারের বাজেট করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি নেতাদের কথা শুনলে মনে হয় দেশে দুর্ভিক্ষ হচ্ছে। রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকতেই পারে কিন্তু প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি আর উন্নয়নের অবদান অস্বীকার এগুলো কি মানা যায়? 
অনেক দেশের নেতারাই শেখ হাসিনাকে ফলো করেন এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, সারা বিশ্ব শেখ হাসিনার প্রশংসা করলেও এদেশের বিরোধী দলের লোকরা একটা ধন্যবাদও দিতে পারে না। এদেশের বিরোধী দলের রাজনীতি বিশ্বে বিরল। বিরোধীদল শুধু সমালোচনা আর বিরোধিতা করে কিন্তু ভালো কোনো পরামর্শ দিতে পারে না।
সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশ ও মানুষের কথা চিন্তা করে। আর তাই এবারের বাজেটও তৈরি করেছে দেশ ও মানুষের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে। এবারের বাজেট সাধারণ মানুষকে কেন্দ্র করে করা হয়েছে।
বিএনপি বলেছে যে, ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ স্মার্ট লুটপাটের বাজেট! এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির সময় আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে হামলা করা হতো, আওয়ামী লীগের সময় বিএনপির কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ কখনো হামলা করে না। বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগ বারবার নির্যাতিত হয়েছে কিন্তু বর্তমানে বিএনপি অবাধভাবে রাজনীতি করার সুযোগ পাচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপি নেতাদের কথা শুনলে মনে হয় দেশে দুর্ভিক্ষ হচ্ছে! রাজনৈতিক মতবিরোধী থাকতেই পারে; কিন্তু প্রকাশ্য হত্যার হুমকি আর উন্নয়ন অবদান অস্বীকার- এগুলো কী মানা যায়? 
মানুষের নেতিবাচক সমালোচনা মোকাবিলা প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, নেতিবাচকগুলোকে ইতিবাচক অবস্থায় পরিণত করতেই এবারের বাজেট। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বিশ্বের সবাই কষ্টে আছে। বিশ্ব পরিস্থিতির কারণেই মানুষ কষ্টে আছে, সরকার মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে না। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার চেষ্টা করছে। 
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সরকারের বিদেশী ঋণ গ্রহণ নিয়ে অনেকেই বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। ঋণ যেমন একজন যোগ্য ব্যক্তির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে তেমনি একটি দেশের অর্থনৈতিক সামর্থ্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এগিয়ে যাওয়ার পথে শক্তি জোগায়। ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে গৃহীত অর্থ দিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে তা ধনী-গরিব সবার সমান অধিকার করে, অর্থনৈতিক বৈষম্য কমাতে সাহায্য করে। 
তিনি বলেন, বিশ্বে প্রতিটি দেশেই ঋণ গ্রহণ করে সরকার পরিচালনা করে থাকে। বর্তমান বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য জিডিপির মাত্র দুই উৎস থেকে গ্রহণ করা হয়েছে দুই শতাংশ। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারের অভ্যন্তরে বৈদেশিক ঋণ দীর্ঘকাল ধরে জিডিপির ৪০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে, যা ভারতে ৯২ শতাংশ, পাকিস্তানে ৬৯ শতাংশ, আমিরকায় ১২৩ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ১০১ শতাংশ, ইউরোপের বহু দেশে এবং জাপানে এই ঋণ শতভাগের ওপরে রয়েছে। সরকারের ঋণ দেশের অর্থনীতির আকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য।

×