ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সিপিডির তথ্য ॥ বছরে রাজস্ব ফাঁকি ৮৪ হাজার কোটি টাকা

দেশে করযোগ্য ৬৮ শতাংশ মানুষ কর দেয় না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:০২, ৪ এপ্রিল ২০২৩

দেশে করযোগ্য ৬৮ শতাংশ মানুষ কর দেয় না

করনেট বৃদ্ধির প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত

করনেট বৃদ্ধির প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত। আর এই খাতের বড় অংশই করের বাইরে থেকে যাচ্ছে। দেশের করযোগ্য ৬৮ শতাংশ মানুষ কর দেয় না, যা মোট করদাতার দুই-তৃতীয়াংশ। 
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এমন তথ্য জানিয়েছে। সিপিডি পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, বাংলাদেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের আকার প্রায় ৩০ শতাংশ। দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে এই খাত দিন দিন বড় হচ্ছে। ২০১০ সালে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে করের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। যা ২০২১ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে বছরে ৮৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে দেশ। 
সোমবার গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ‘কর্পোরেট খাতে কর স্বচ্ছতা : বাজেটে সরকারি আয়ের অভিঘাত’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য উঠে এসেছে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করে বলেন, সিপিডির গবেষণায় দেখা গেছে ৬৮ শতাংশ মানুষ করযোগ্য আয় করার পরও আয়কর দেন না। অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ কর দেওয়ার যোগ্য হওয়ার পরেও কর দেয় না। কর জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি না হওয়ার বড় কারণ এটি। অন্যদিকে জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে ২ লাখ ১৩ হাজার কোম্পানি রেজিস্ট্রার্ড হলেও রিটার্ন দাখিল করে মাত্র ৪৫ হাজার কোম্পানি। 
বাংলাদেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের আকার ৩০ শতাংশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে করের পরিমাণ ছিল ২০১০ সালে ২২ হাজার কোটি টাকা যা ২০২১ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪ হাজার কোটি টাকা। ছায়া অর্থনীতিতে ৮৪ হাজার কোটি টাকা কর ক্ষতি হচ্ছে, যা জিডিপির প্রায় ৩০ শতাংশ। এই টাকা যদি পাওয়া যেত তাহলে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় তিনগুণ বৃদ্ধি করা যেত। অর্থাৎ করনেট বৃদ্ধির প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত। এই খাতের বড় অংশই করের বাইরে থেকে যাচ্ছে। ফলে কর লস দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম তার গবেষণা প্রতিবেদনে বলেন, কর অস্বচ্ছতাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। কর ফাঁকি ও কর এড়ানো। কর ফাঁকি দিতে গিয়ে কোম্পানি তার প্রকৃত আয় কম দেখিয়ে থাকে। অন্যদিকে কর এড়ানোর বিষয়টি হলো- লিগ্যাল ফ্রেমের আওতায় সরকারের দেওয়া সুবিধা গ্রহণ করে থাকে। আমাদের দৃষ্টিতে এটাও কর অস্বচ্ছতা। কর ফাঁকি ও কর এড়ানোর দৃষ্টিতে ১৪১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৫২তম।

কর ফাঁকি ও কর এড়ানোর মধ্যে একটি যোগসূত্র রয়েছে। কর এড়াতে গিয়েও কর ফাঁকি দিচ্ছে কোম্পানিগুলো। আর কর ফাঁকি যদি ৮০ শতাংশ হয় তার মানে ২ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার মতো রাজস্ব হারায় দেশ। আবার যদি কর ফাঁকি ৫০ শতাংশ ধরা হয়, তাহলে রাজস্ব হারায় ৪১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। 
তিনি বলেন, ২০২২ সালের এক রিপোর্ট অনুযায়ী কর ফাঁকির কারণে পৃথিবীতে প্রতি বছর ৪৮৩ বিলিয়ন ডলার কর লস হচ্ছে। এর মধ্যে করপোরেট পর্যায়ে ৩১২ বিলিয়ন ডলার ও ব্যক্তি পর্যায়ে ১৭১ বিলিয়ন ডলার। যার অভিঘাত স্বল্প আয়ের মানুষের ওপর বেশি পড়ে। বিশ্ব পর্যায়ে করপোরেট কর হার কমলেও বাংলাদেশে এই হার বেড়েছে। এর প্রভাবে বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে। বাংলাদেশে করপোরেট কর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ।

কিন্তু আদায়ের দিক থেকে আফগানিস্তানের নিচে। আবার কর হার কমালেও যে কর আদায়ের পরিমাণ সব সময় বেশি হবে, সেটাও নয়। বলা হয়ে থাকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত যে দেশের বড়, সে দেশে কর আদায়ের পরিমাণ কম হবে।

×