ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নোয়াখালী-৬

আওয়ামী লীগ-বিএনপি ছাড়াও মাঠে স্বতন্ত্র প্র্রার্থী, সবার প্রত্যাশা

গিয়াসউদ্দিন ফরহাদ, নোয়াখালী

প্রকাশিত: ২২:৩৫, ৩১ মার্চ ২০২৩

আওয়ামী লীগ-বিএনপি ছাড়াও মাঠে স্বতন্ত্র প্র্রার্থী, সবার প্রত্যাশা

.

বঙ্গোপসাগরের মোহনায় মেঘনা নদীবেষ্টিত নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়া। এই উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত নোয়াখালী- আসন। আসনটিতে দলের চেয়ে ব্যক্তির প্রভাবকে অনেকটাই গুরুত্ব দেন ভোটাররা। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নয় মাস বাকি থাকলেও এখনই আসনটিতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। বইছে ভোটের হাওয়া।

আওয়ামী লীগ-বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের পাশাপাশি আগাম প্রচারে নেমেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগ্রহীরাও। বিভিন্ন সামাজিক আয়োজনকে কেন্দ্র করে ব্যানার-পোস্টারের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। অনানুষ্ঠানিকভাবে মাঠপর্যায়েও গণসংযোগ শুরু করেছেন অনেকেই। যদিও আওয়ামী  লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তুলনায় বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী প্রস্তুতি নিচ্ছেন নিতান্তই নীরবে। তারপরও হাতিয়ার হালচাল দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরগরম নোয়াখালী- (হাতিয়া) আসনের প্রতিটি পাড়া-মহল্লা। আসনটিতে বরাবরই আওয়ামী লীগ বিএনপি সমানে সমান। এবার আওয়ামী লীগের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে থাকলেও সংকটে রয়েছে বিএনপি। ভোটাররা বলছেন, প্রতীক নয়, এলাকার উন্নয়নে নিবেদিত প্রার্থীকেই বেছে নেবেন তারা।

স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে এলাকায় বেড়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের আনাগোনা। ধর্মীয় উৎসব এবং সামাজিক উপলক্ষ ঘিরে প্রতি মাসে একাধিকবার এলাকায় হাজির হচ্ছেন তাঁরা। ভোটারদের মধ্যে আলোড়ন তুলতে তৃণমূল পর্যায়ে দুহাত খুলে অনুদান দিচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

আগামী নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য যারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাদের মধ্যে আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের আয়েশা ফেরদাউসের পাশাপাশি একাধিক সাবেক এমপিও রয়েছেন। ছাড়া অন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদেরও রয়েছে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভিজ্ঞতা। তাই মাঠপর্যায়ে প্রচারের পাশাপাশি নির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থীরা কৌশলগত প্রস্তুতিও নিচ্ছেন আঁটঘাট বেঁধেই। তবে আগাম প্রচারে অন্যদের চেয়ে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরাই আছেন বেশি খোশমেজাজে।

জেলার রাজনীতিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসন বলে চিহ্নিত এই এলাকার বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের আয়েশা ফেরদাউস। ২০১৮ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন তিনি। আগামী নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জোর প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি।

বর্তমান সংসদ সদস্য ছাড়াও আসনটিতে এবার নৌকা প্রতীকের দাবিদার হিসেবে মাঠে আছেন বর্তমান এমপির স্বামী হাতিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী। মোহাম্মদ আলী আসনের এমপি হয়েছেন তিনবার। এর মধ্যে ১৯৮৬ ১৯৮৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ২০০১ সালে মোহাম্মদ আলী এমপি হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে। আসনে তাঁর বিরাট কর্মী বাহিনী রয়েছে।

এর আগে এমপি হয়ে এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছেন জানিয়ে মোহাম্মদ আলী জানান, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন। আশা করছেন, সংসদ সদস্য হিসেবে তাঁর দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে তাকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হবে।

তাঁর স্ত্রী বর্তমান এমপি আয়েশা ফেরদাউস নিজেও মনোনয়ন পাবেন বলে আত্মবিশ্বাসী। গত নির্বাচনে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়েছেন এবং এমপি হয়ে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তাই আগামীবার মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলেও প্রত্যাশা আয়েশা ফেরদাউসের।

সাংগঠনিকভাবে হাতিয়ায় বিএনপির অবস্থা খুবই সঙ্গিন। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় পর্যায়ে নেই কোনো দলীয় কার্যক্রম। ২০০৮ সালে বিএনপির প্রার্থী হয়ে পরাজিত হন সাখাওয়াত হোসেন শওকত। ঢাকার এই ব্যবসায়ী নবম জাতীয় নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পরই বিএনপির অবস্থা দুর্বল হতে থাকে। তবে আগামী নির্বাচন ঘিরে আবারও মাঠে নেমেছেন সাখাওয়াত হোসেন শওকত। তাঁর দাবি, তাকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস রয়েছে। সিংহভাগ নেতা-কর্মীও অবস্থান নিয়েছেন সাখাওয়াতের পক্ষে। তিনি ছাড়া ধানের শীষ প্রত্যাশী আর কারও নাম নেই আলোচনায় মুহূর্তে।

আওয়ামী লীগ বিএনপির বাইরে আলোচিত সম্ভাব্য প্রার্থী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফজলুল আজিম। ১৯৯৬ ২০০৮ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি আসনের এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এলাকায় তাঁর গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। সম্প্রতি নির্বাচনী এলাকা সফরে আসেন তিনি। তাকে সংবর্ধনা জানাতে এসেছিলেন বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া ভোটারদের দাবির মুখে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশের স্বনামধন্য এই শিল্পপতি। তিনি জানান, হাতিয়ার মানুষ তাকে বারবার এমপি নির্বাচিত করেছে। তাই এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর প্রতি তার দায়বদ্ধতা রয়েছে। এমপি হয়ে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। আগামীতে আবারও প্রার্থী হবেন এবং নির্বাচিত হয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন বলে জানান তিনি।

×