ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জোরালো হচ্ছে ভোটের আলাপ

কূটনীতিকরা সরব

জনকণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ২৩ মার্চ ২০২৩

কূটনীতিকরা সরব

ক্রমেই ভোটের আলাপ জোরালো হচ্ছে কূটনীতিক পাড়ায়

ক্রমেই ভোটের আলাপ জোরালো হচ্ছে কূটনীতিক পাড়ায়। জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বিরোধী দল বিএনপির দৌড়ঝাঁপের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে অবস্থানরত পশ্চিমা কূটনীতিকরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নির্বাচন নিয়ে সরব হয়েছে। তারা দফায় দফায় সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করছে। কূটনীতিকরা চাচ্ছে, একটি গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন। সরকার ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংবিধান অনুসারে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়ার পরও থেমে নেই কূটনীতিকদের তৎপরতা।

এ ব্যাপারে তারা বিএনপির দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে সরকারি দলের মনোভাব বুঝতে চাচ্ছে। তবে জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বারবারই তাদের অবস্থান স্পষ্ট করছে। আওয়ামী লীগ বলে দিয়েছে, সংবিধানের বাইরে যাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে বিএনপির দাবিকৃত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের বক্তব্য হচ্ছে, ‘না’। অর্থাৎ কোনোভাবেই আওয়ামী লীগ নির্বাচন আয়োজনে তত্ত্ববধায়কে ফিরে যাবে না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ সংলাপে যেতে পারে। তবে কোনো পূর্বশর্ত দিয়ে আওয়ামী লীগ সংলাপে যাবে না।   
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে বাংলাদেশ নিয়ে বিদেশী কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপ ততই বাড়ছে। ভারত, চীনের মতো প্রভাবশালী রাষ্ট্র দুটি নির্বাচন নিয়ে প্রকাশ্যে কথা না বললেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও  ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর কূটনীতিকরা এটি নিয়ে সরব রয়েছে। সর্বশেষ গত ২২ মার্চ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস নির্বাচন প্রশ্নে বৈঠক করেছেন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত এদিন আওয়ামী লীগকে তার বাসায় মধ্যাহ্ন ভোজে আমন্ত্রণ জানান।

আওয়ামী  লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিল ওই ভোজ সভায় অংশগ্রহণ করে। এতে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি সমসাময়িক বিষয় তথা বাংলাদেশে নির্বাচন এবং বাণিজ্য থেকে শুরু করে জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক, নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। 
তবে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বেশির ভাগ আলোচনাই ছিল নির্বাচন ও সংলাপ বিষয়ে। বিশেষ করে গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়েই বেশি আলোচনা হয়েছে। এ সময় বিএনপির দাবিকৃত তত্ত্ববধায়ক সরকারের প্রসঙ্গও এসেছে আলোচনায়। এ সব বিষয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকার নির্বাচন প্রশ্নে সংবিধানের বাইরে কোনোভাবেই যাবে না।

সংবিধানের মধ্যে থেকে আগামী জাতীয় নির্বাচন যাতে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয় সে ব্যাপারে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এজন্য সরকার নির্বাচনী কমিশনকে শক্তিশালী করেছে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে। ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার বিষয়ে দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করছে। আর নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। 
তত্ত্বাবধায়ক প্রশ্নে আওয়ামী লীগ তার অবস্থান পরিষ্কার করে জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে যাবে না। 
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সংলাপের বিষয়ে জানতে চাইলে বলা হয়েছে, আলোচনার দরজা সব সময় খোলা আছে। তবে বিএনপির সংলাপের অতীত অভিজ্ঞতা ভালো না। বিএনপি চাইলে সংলাপ হতে পারে। তবে কোনো পূর্বশর্ত দিয়ে আওয়ামী লীগ সংলাপে যাবে না। আর তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু নিয়ে কোনো আলোচনার সুযোগ নেই। তবে নির্বাচনকে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার ক্ষেত্রে আলোচনা হতে পারে। 
বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, তার সরকারের পক্ষ থেকে চাওয়া হচ্ছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলের নেতা ওবায়দুল কাদের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে পূর্ণ আশ্বাস দিয়েছেন। 
গত ১৬ মার্চ বিএনপি নেতৃবৃন্দ ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছে। দীর্ঘ সময় ধরে বিএনপির সঙ্গে ভারতের এই খোলামেলা আলোচনা কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক মহলে বিশেষ আগ্রহের জন্ম দিয়েছে। হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার বাসভবনে ওই নৈশভোজে অংশ নিয়েছিলেন বিএনপির পাঁচ নেতা।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে নৈশভোজে যাওয়া অন্য নেতারা হলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম।
এই বৈঠক নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো পক্ষ থেকেই কোন বক্তব্য-বিবৃতি দেওয়া হয়নি। এ বৈঠকে তাদের মধ্যে আগামী নির্বাচন, আন্দোলনসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় গুরুত্ব পায় ভারত ও বিএনপির মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টিও। নৈশভোজে মূলত আগামী নির্বাচন ও আন্দোলন সম্পর্কে বিএনপির অবস্থান জানতে চান ভারতীয় হাইকমিশনার। নির্বাচনে বিএনপি যাবে কি না জানতে চাইলে দলটির নেতারা সাফ জানিয়ে দেন- দলীয় সরকারের অধীনে তারা কোনো নির্বাচনে যাবেন না। যত দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা না হবে, তত দিন শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাবে বিএনপি বলেও জানানো হয়। 
এ ছাড়া ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোও পাল্টাপাল্টি বৈঠক করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে। তারা আগামী নির্বাচন নিয়ে অবস্থান তৈরির জন্যই এই বৈঠক করেছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠায়নি ইইউ। ওই সময় আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছিল, বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠাবে না ইইউ। এবার সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ঘোষণা এসেছে ইতোমধ্যে। 
গত ১২ মার্চ সকালে ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির গুলশানের বাসভবনে  বৈঠক করেন বিএনপির নেতারা। ইইউভুক্ত সাত দেশের কূটনীতিক ও বাংলাদেশ প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। দেড় ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির নেতৃত্বে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, স্পেন,  ডেনমার্ক, নরওয়ের বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতরা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকেও তারা সাফ জানিয়ে দেন, বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনে তারা অংশ নেবেন না।
এর আগে ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ইইউ কূটনীতিকরা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের একটি প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ইইউর ওই বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর বিষয়ে বাজেটও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইইউ থেকে বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর সিদ্ধান্তকে আওয়ামী লীগ স্বাগত জানায়।
ঢাকার ইইউ ডেলিগেশন প্রধান চার্লস হোয়াইটলি বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ইইউর কাছে অগ্রাধিকারে রয়েছে বাংলাদেশ। আমরা নির্বাচনের আগে ১২ পর্যবেক্ষক দল পাঠিয়ে থাকি, যদি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়। আর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে হলে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর ভূমিকা থাকতে হবে। এ বিষয়টি আমরা বৈঠকে জানিয়েছি। বিএনপির উদ্বেগের বিষয়ে তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে সবার বিস্তারিত জানা রয়েছে। 
জানা গেছে, ব্রাসেলস বাংলাদেশকে নির্বাচনী পর্যবেক্ষণে অগ্রাধিকারে রেখেছে। যার অর্থ হচ্ছে, ইতোমধ্যে বাজেট বরাদ্দ দিয়েছে ইইউ। নির্বাচনের আগে কয়েকটি নির্বাচন-পূর্ব পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশ সফর করবে। তাদের পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভর করবে নির্বাচনের দিন পর্যবেক্ষক পাঠানো হবে কিনা। যদি পরিবেশ অবাধ, মুক্ত ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অনুকূলে না হয়, তবে পর্যবেক্ষক পাঠানো হবে না। আর প্রধান বিরোধী দল যদি নির্বাচনে অংশ না নেয়, তবে সেই নির্বাচন পর্যবেক্ষণের যৌক্তিকতা নেই। 
এ নিয়ে আরেক রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রধান বিরোধী দল যদি নির্বাচনে অংশ না নেয়, তবে যারা এতে অংশ নেবে, তাদের পক্ষেই ফলাফল যাবে। তাতে পর্যবেক্ষণ করার কিছু নেই। আর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ না করতে পারলে এটি ভালো হয়েছে, না খারাপ হয়েছে, তা বলার অধিকার সীমিত হয়ে আসবে অংশীদারদের।
আগের দিন ১৫ ফেব্রুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উপদেষ্টা এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সেখানেও আসে আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গ। গণভবনে অনুষ্ঠিত সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগামী নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন। স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনেই হবে নির্বাচন।

একই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা। ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের বরাত দিয়ে বাংলাদেশের সরকারি বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ সমর্থনের কথা জানিয়েছে ভারত।
এছাড়া যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী (ইন্দো-প্যাসিফিক) অ্যান-মারি ট্রিভেলিয়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্যে সাক্ষাৎ করেন।

সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানালে তিনি সাধুবাদ জানান। এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনও অ্যান-মারি ট্রিভেলিয়ানকে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার বিষয়ে নিশ্চয়তা দেন। নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাজ্যের মতামত জানালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এটি তাঁকে আশ্বস্ত করা হয়।
একইদিনে নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুয়ের।

অস্ট্রেলিয়ান পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য দপ্তরের উত্তর ও দক্ষিণ এশিয়ার সহকারী সচিব (প্রথম) গ্রে কোওয়ান, সহকারী পরিচালক এলিস হেইনিঙ্গার ও হাইকমিশনের উপ-প্রধান নার্দিয়া সিম্পসন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। হাই কমিশনার এই সময়ে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার পরামর্শ দিয়েছেন।
তবে চীন রাজনৈতিক বিষয়ে পশ্চিমা কূটনীতিকদের তৎপরতাকে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ মনে করছে। এ বিষয়ে স্পষ্টত চীনের নতুন রাষ্ট্রদূত ইয়ান ওয়েন এক আলোচনা সভায় সরাসরি বলেছে, চীন কোন দলের পক্ষে নয় রাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করে যায়। তাই কোন দল ক্ষমতায় থাকল না থাকল সেটি তাদের বিষয় নয়। ঠিক একই কথা খাটে ভারতের হাইকমিশনারের বিষয়েও। এখন পর্যন্ত হাইকমিশনারের মুখ থেকে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে কোনো মন্তব্য বা পরামর্শ আলোচনায় আসেনি।
এত কিছুর পরেও বিএনপি এবার রাজপথে আন্দোলনের পাশাপাশি কূটনীতিক পাড়ায়ও দৌড়ঝাঁপ করছে। তারা নির্দশলীয় তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে তাদের নির্বাচনের দাবির সপক্ষে কূটনীতিকদের সমর্থন চাইছে। সেই সঙ্গে চাইছে নির্বাচন প্রশ্বে কূটনীতিকরা যাতে বাংলাদেশ সরকারকে চাপে রাখে। এ লক্ষ্যেই বিএনপির নেতারা আগামী নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকদের কাছে নালিশ করছে।

এসব নালিশে দলটি উল্লেখ করেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আওয়ামী  লীগের অধীনে  নির্বাচন অংশ নেবে না। তবে ইউরোপয়ীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকরা বিএনপি প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছে, নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপি অংশগ্রহণমূলক হবে না। আর যারা অংশ নেবে তাদের জিতে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। তখন আর শুধু নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা করে লাভ হবে না। তাই কূটনীতিকরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিকেও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই বেড়ে যায় বাংলাদেশের রাজনীতি আর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকসহ প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে বড় দলগুলোর যোগাযোগ। কখনো কখনো তাদের উৎসাহী অবস্থান কূটনীতিকদের নাক গলানোর সুযোগ করে দেয়। সাম্প্রতিক সময়েও দেখা যাচ্ছে একই চিত্র। এবারের বিশেষত্ব বড় কূটনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে মেরুকরণ।

কারণ ইতোমধ্যে পশ্চিমা  দেশগুলোর পক্ষ থেকে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। আবার পশ্চিমা দেশগুলোর বিপরীতে থাকা চীনের রাষ্ট্রদূত ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপে কারও অধিকার নেই বলে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিয়েছেন। 

×