ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

কে হচ্ছেন রাষ্ট্রপতি

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

কে হচ্ছেন রাষ্ট্রপতি

দেশের মানুষের দৃষ্টি এখন গণভবনের দিকে

দেশের মানুষের দৃষ্টি এখন গণভবনের দিকে। নির্বাচনী বছরে কে হচ্ছেন বঙ্গভবনের পরবর্তী বাসিন্দা অর্থাৎ দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে কে আসছেন- এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার যেন শেষ নেই। সময়ের ব্যবধানে সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতির তালিকায় উঠে আসছে বেশ ক’জনের নাম, যা সবই অনুমাননির্ভর। তবে রাষ্ট্রের প্রধানের আসনে ঠিক কে বসছেন, তা খোলাসা হতে পারে আগামী মঙ্গলবার। 
ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় সংসদ ভবনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভা ডাকা হয়েছে। সংসদ ভবনের লেভেল ৯-এ সরকারি দলের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন সংসদ নেতা, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। ওই সভায় দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে পারে আওয়ামী লীগ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রিন সিগন্যাল যিনি পাবেন, তিনিই দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন এটিই হচ্ছে বাস্তবতা। তবে রাষ্ট্রপতি পদেও নতুন কোন চমক আসছে কিনা- সেটি জানার জন্য আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশের মানুষকে অপেক্ষা করতে হতে পারে। তবে রাষ্ট্রপতি পদে রাজনীতিবিদ চায় আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ। 
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের বেশ ক’জন প্রবীণ মন্ত্রী-এমপিরা জানান, মঙ্গলবার সংসদীয় দলের সভায় রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন চূড়ান্ত হতে পারে। রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন ছাড়াও সঙ্গত কারণে সমসাময়িক রাজনৈতিক ইস্যু নিয়েও কথা হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় সংসদ সদস্যদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি প্রসঙ্গে তাদের অভিমত হচ্ছে- টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সময় আওয়ামী লীগ প্রতিবারই দলের ভেতর থেকে কাউকে রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন দিয়েছে। আমাদের তৃণমূল নেতাকর্মীদেরও চাওয়া হলো রাজনীবিদদের মধ্য থেকেই রাষ্ট্রপতি আসবেন। 
দলটির নীতি নির্ধারক নেতারা জানান, রাষ্ট্রপতি পদে যেসব নাম নিয়ে গত কিছুদিন ধরে আলোচনা চলছে, সেগুলোর বেশিরভাগই অনুমাননির্ভর। প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রপতি পদে একজনকে বাছাই করবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার সংসদীয় দলের সভায় প্রধানমন্ত্রীর বাছাই করা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শেষে সেটি চূড়ান্ত করা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মতামতে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করাটা আওয়ামী লীগের জন্য সুখকর ছিল না। এবার যাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা হবে তার মেয়াদেই আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে। ফলে দলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হবেন না এমন কাউকে রাষ্ট্রপতি পদে চান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অধিকাংশ অংশই। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে দলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপরই।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয় দফায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট মো. আবদুল হামিদ। এরপর ওই বছরেরই ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ তিনি। দুই দফায় রাষ্ট্রপতি থাকায় সংবিধান অনুযায়ী তার আবারও রাষ্ট্রপতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আগামী ২৩ এপ্রিল শেষ হচ্ছে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ। 
তবে সংবিধানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদ অবসানের কারণে এ পদ শূন্য হলে মেয়াদ সমাপ্তির তারিখের আগের ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে শূন্য পদ পূরণের জন্য নির্বাচন হবে। সেই হিসাব অনুযায়ী ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন (ইসি) ইতোমধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে।

তফসিল অনুযায়ী, দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি। আগ্রহী প্রার্থীরা আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি যাচাই-বাছাইয়ের পর ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। 
সংসদীয় গণতন্ত্রের যুগে ১৯৯১ সালের পর আর কখনো রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটের কোনো প্রয়োজন হয়নি। বরাবরই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি পদে বিজয়ী হয়ে আসছেন। এখন নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল অন্যান্য দল থেকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী দেওয়ার তৎপরতা বা আলোচনা নেই।

বর্তমান সংসদে আওয়ামী লীগের রয়েছে ভূমিধস সংখ্যাগরিষ্ঠতা। ফলে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতি পদে যাকে প্রার্থী করবেন তিনিই ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে বিজয়ী হবেন তা শতভাগ নিশ্চিত। এ পরিস্থিতিতে জাতীয় সংসদে ভোটেরও আর কোনো প্রয়োজন পড়বে না। 
কে হচ্ছেন বঙ্গভবনের পরবর্তী বাসিন্দা ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রার্থিতা যাচাই-বাছাইয়ের পরই সেটি নিশ্চিত হওয়ার কথা থাকলেও আসলে সেটি জানা যেতে পারে আগামী মঙ্গলবার, আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকের পরই। ফলে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীর দিকেই এখন সবার নজর। এর আগেও রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে দলীয় সংসদ সদস্যদের নিয়ে গঠিত সংসদীয় দলের বৈঠকেই। সে কারণেই আগামী মঙ্গলবার গোটা জাতির সামনে পরিষ্কার হয়ে যাবে কে হচ্ছেন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি তার নাম।
এদিকে, নির্বাচনী বছরে রাষ্ট্রপতি পদে কে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন- এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনেও চলছে নানামুখী আলোচনা, বিচার-বিশ্লেষণ। আওয়ামী লীগসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে এবং গণমাধ্যমে নতুন রাষ্ট্রপতি পদে গত কিছুদিন ধরে যাদের নাম আলোচনায় উঠে এসেছে তারা সবাই রাজনৈতিক অঙ্গন খুব পরিচিত মুখ। তাদের মধ্যে রয়েছেন- বর্তমান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারসহ বেশ ক’জন। তবে এগুলো সবই অনুমাননির্ভর। 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গ্রিন সিগন্যাল যিনি পাবেন, তিনিই দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন এটিই হচ্ছে বাস্তবতা। তবে রাষ্ট্রপতি পদেও নতুন কোনো চমক আসছে কিনা- সেটি জানার জন্য আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশের মানুষকে অপেক্ষা করতে হতে পারে। 

×