ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আপিল করবেন বাবা ইমরান

জাপানি মায়ের কাছেই থাকবে দুই মেয়ে মামলা খারিজ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৪৫, ২৯ জানুয়ারি ২০২৩

জাপানি মায়ের কাছেই থাকবে দুই মেয়ে মামলা খারিজ

আদালত থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাপানি মহিলা ও তার মেয়ে

জাপানি মায়ের গর্ভে জন্ম নেওয়া দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা মায়ের জিম্মায় থাকবে। এই দুই শিশুর বাবা ইমরান শরীফ যে মামলা করেছিলেন তা খারিজ করে দেন আদালত। একই সঙ্গে মেয়েদের নিয়ে জাপান যেতে পারবেন তাদের মা নাকানো এরিকো।  
রবিবার ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান এ রায় দেন।
বিচারক রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, নাবালক বা নাবালিকা- তাদের হেফাজত নির্ণয়ে সবচেয়ে যেটি মঙ্গল তা গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক তথা সব কিছুর মঙ্গল তাদের বাবা নাকি মায়ের কাছে নিশ্চিত, সেটি বিবেচনায় রেখে মামলা নিষ্পত্তিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়। নাবালিকা দুই শিশুর বসবাসের স্থান জাপান। তাদের মা জাপানের চিকিৎসক। তাই মায়ের হেফাজতে তাদের শারীরিক-মানসিক নিরাপত্তা থাকবে বলে মনে করেন আদালত। এছাড়া বাবার কাছে থাকলে মেয়ে দুটির  মঙ্গল হবে কি না তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের বাবা।
রায় ঘোষণার সময় বাবা ইমরান শরীফ ও মা নাকানো এরিকো আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত ২২ জানুয়ারি এই মামলায় উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। এরপর আদালত রায়ের জন্য রবিবার দিন ধার্য করেন। গত ১৫ জানুয়ারি তাদের বক্তব্য শুনে তা রেকর্ড করেন একই আদালত। পরদিন ১৬ জানুয়ারি সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের কাছে জাপানি দম্পতির বড় মেয়ে জেসমিন মালিকা জাপান ফিরে যাওয়ার আকুতি জানায়। এ সময় জেসমিন মালিকার সঙ্গে তার জাপানি মা এরিকো নাকানো ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির উপস্থিত ছিলেন।
আদালতের রায়ের পর নাকানো এরিকোর আইনজীবী শিশির মনির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বাংলাদেশী বাবা প্রকৌশলী ইমরান শরীফ দুই সন্তান নিজ হেফাজতে রাখার যে মামলা করেছেন তা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। ফলে দুই শিশু মায়ের কাছেই থাকছে। তিনি আরও বলেন, এটি একটি যুগান্তকারী রায়। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।
অন্যদিকে ইমরান শরীফের আইনজীবী নাসিমা আক্তার লাভলী বলেন, এই আদেশের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করব। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দুই সন্তান বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই। এর আগে ২২ জানুয়ারি দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য রবিবার দিন ধার্য করেছিলেন একই আদালত।
গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ সিদ্ধান্ত দেন দুই শিশু কার জিম্মায় থাকবে, তার নিষ্পত্তি হবে পারিবারিক আদালতে এবং তার আগ পর্যন্ত  শিশু দুটি তাদের মায়ের কাছেই থাকবে। এরপর আপিল বিভাগ থেকে মামলাটি পারিবারিক আদালতে যায়। জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশী প্রকৌশলী ইমরান শরীফের বিয়ে হয় ২০০৮ সালে। দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২০ সালের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। এরপর ইমরান স্কুল পড়ুয়া বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ছোট মেয়ে জাপানে এরিকোর সঙ্গে থেকে যায়।
এদিকে, গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে দুই সন্তান নিয়ে জাপানে যাওয়ার জন্য ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান এরিকো নাকানো। আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করায় তাকে বিমানবন্দর থেকে পুলিশ ফিরিয়ে দেয়। এ ঘটনায় ২৯ ডিসেম্বর বাবা ইমরান শরীফ ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিবের আদালতে মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
নাকানো এরিকোর আবেগঘন চিঠি ॥ বাংলাদেশের মানুষের উদ্দেশে দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনার জাপানি মা নাকানো এরিকো বলেছেন, এখানে জীবন দুর্বিষহ। আমি বাংলাদেশে এখন বন্দি জীবন-যাপন করছি। আমি আমার চাকরি হারিয়েছি, এখন আমার বৃদ্ধ মাকে হারাতে যাচ্ছি। মাকে দেখতে কেউ আমাকে সহযোগিতা করছে না। বাকিটা আপনাদের বিবেকের ওপর ছেড়ে দিলাম। ২৬ ডিসেম্বর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরের মাধ্যমে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আমি কঠিন সময়ের মুখোমুখি। ইমরান শরীফ (শিশুদের বাংলাদেশী বাবা) ২৩ ডিসেম্বর রাতে আমার ছোট মেয়ে  লাইলা লিনাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। আমি তার হদিস জানি না। বারবার ই-মেইল করেও জবাব পাচ্ছি না। তবে ইমরান বলেন, মেয়ে স্বেচ্ছায় তার কাছে এসেছে। তিনি জোর করেননি।
আমাকে ভুল বোঝানো হয়েছে জাপানে ফিরে যেতে চাই ॥ এদিকে বড় মেয়ে জেসমিন মালিকা জাপান ফিরে যাওয়ার আর্জি জানিয়েছে। ১৬ জানুয়ারি সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের এ কথা জানায় সে। জেসমিন মালিকা বলে, আমি জাপান যেতে চাই। আমাকে বলা হয়েছিল যে আমরা আমেরিকায় যাব। কিন্তু আমরা আমেরিকায় যেতে পারব না। দুই বছর থেকে আমরা এখানে (বাংলাদেশ) আছি। সে আরও বলে, আমাকে ভুল বোঝানো হয়েছিল। আমার মায়ের বিষয়ে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছিল। আমি নির্ভরযোগ্য রিসার্চ করেছি। আমি সব জানতে পেরেছি।

 

×