ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রয় কমিটিতে ১ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয় প্রস্তাব অনুমোদন

টিসিবির জন্য কেনা হচ্ছে আরও ২ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২২

টিসিবির জন্য কেনা হচ্ছে আরও ২ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন

আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমতে শুরু করেছে

আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমতে শুরু করেছে। দাম কমার এই সুযোগ নিয়ে সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবির জন্য প্রতিলিটার সয়াবিন ১৫৬ টাকা ৯৮ পয়সা দিয়ে কেনা হচ্ছে। এতে প্রতিলিটারে সাশ্রয় হবে ৬ টাকা ২০ পয়সা। এর আগে প্রতিলিটার সয়াবিন তেল ১৬২ টাকা ৯৪ পয়সা দিয়ে স্থানীয় বাজার থেকে কেনা হয়েছিল।

ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ভর্তুকি মূল্যে সয়াবিন তেল দিতে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির জন্য নতুন করে জন্য ২ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে প্রায় ৩৪৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া কৃষি উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের ভর্তুকি মূল্যের সার দিতে আরও ৮০ হাজার মেট্রিক টন এমওপি ও টিএসপি সার ক্রয়ের দুটি পৃথক প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়।  এতে মোট খরচ হবে প্রায় ৫০৯ কোটি টাকা।
বুধবার সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এসব প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সভা শেষে ভার্চুয়ালি অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিস্তারিত সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব। তিনি জানান, সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ৩৬তম সভায় প্রায় ১ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ছয়টি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং সাধারণ মানুষকে খাদ্য সুবিধা দিতে সরকার টিসিবির মাধ্যমে ভোজ্যতেল, চিনি, পেঁয়াজ ও ডালসহ অন্যান্য পণ্য বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে কোটি পরিবার পাচ্ছে টিসিবির পণ্য। শুধু তাই নয়, চিনির বাজার স্থিতিশীল রাখতে খোলা ট্রাকে প্রতিকেজি চিনি ৫৫ টাকা দরে বিক্রি করছে টিসিবি। নিত্যপণ্যের বাজারের খুচরা মূল্যে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকায়।

ফ্যামিলি বা পরিবার কার্ডের আওতায় একজন কার্ডধারীর কাছে সর্বোচ্চ দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি মসুর ডাল, এককেজি চিনি ও দুই কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছে টিসিবি। প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১১০ টাকা, প্রতিকেজি চিনি ৫৫ টাকা, প্রতিকেজি মসুর ডাল ৬৫ টাকা ও প্রতিকেজি পেঁয়াজ ২০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে শুধু সিটি করপোরেশন এলাকা ও টিসিবির আঞ্চলিক কার্যালয়-সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোয়।
অভিযোগ রয়েছে, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে চিনির বাজার স্থিতিশীল হতে পারছে না। কিন্তু টিসিবির বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় বাজারের ওপর চাপ কমছে। একইভারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের প্রতিলিটার খোলা বাজারে ১৯০ টাকায় বিক্রি হলেও টিসিবি বিক্রি করছে প্রতিলিটার ১১০ টাকায়। সারাবছর টিসিবির বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এতে করে সরকারকে বিপুল পরিমাণ ভোজ্যতেল, চিনি ও ডালের প্রয়োজন হচ্ছে।

দীর্ঘদিন এসব পণ্য স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করার ফলে বাজারে কৃত্রিম সংকটের আরও বেশি সুযোগ নিচ্ছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এ বছর থেকে সরাসরি আন্তর্জাতিক বাজার থেকে এসব পণ্য আমদানি করছে সংস্থাটি। এতে করে অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি স্থানীয় বাজারের ওপর চাপ কমছে বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।
ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান বলেন, ২ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কিনতে ব্যয় দাঁড়াবে ৩৪৫ কোটি টাকা। লিটারপ্রতি তেলের দাম পড়বে ১৫৬ টাকা ৯৮ পয়সা। এর আগে এ তেল কিনতে লিটারপ্রতি সরকারের ব্যয় হয় ১৬২ টাকা ৯৪ পয়সা। সে হিসাবে আগের তুলনায় প্রতিলিটার সয়াবিন তেল ৬ টাকা ২ পয়সা কমে কেনা হচ্ছে।

তবে কোন দেশ কিংবা কোন কোম্পানির কাছ থেকে কেনা হবে, সেই তথ্য দেয়া হয়নি। এ ছাড়া কানাডা ও মরক্কো থেকে ৮০ হাজার মেট্রিক টন এমওপি ও টিএসপি সার ক্রয়ের দুটি পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে মোট খরচ হবে ৫০৮ কোটি ৪৮ লাখ ৮১ হাজার ৭২৫ টাকা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃক রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় কানাডা কমার্শিয়াল কর্পোরেশন থেকে নবম লটে ৫০ হাজার  টন এমওপি সার ৩৫৮ কোটি ৪৮ লাখ ১৩ হাজার ৯২৫ টাকায় আমদানির প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়।

×