ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম দিন ৩০ জন

সরকারিভাবে আজ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক যাচ্ছে

আজাদ সুলায়মান

প্রকাশিত: ০০:০৪, ২৯ নভেম্বর ২০২২

সরকারিভাবে আজ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক যাচ্ছে

বহু প্রতীক্ষিত মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

বহু প্রতীক্ষিত মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর আজ শুরু হচ্ছে সরকারিভাবে নিয়মিত শ্রমিক পাাঠানো। আজ মঙ্গলবার সকালে সরকারিভাবে ৩০ জনের একটি দক্ষ শ্রমিক দল যাচ্ছে মালয়েশিয়ায়। ইউএস-বাংলার একটি ফ্লাইটে কুয়ালালামপুরের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন তারা। তাদেরকে বিমানবন্দরে বিদায় জানাবেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহিন ও বোয়েসেলের এমডি ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা। আপাতত তাদেরকে কৃষি কাজেই পাঠানো হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে কয়েক দফায় এক হাজার শ্রমিক পাঠানো হবে। আরও অন্তত ১০ হাজার শ্রমিকের চাহিদাপত্রও সম্পন্ন হবে খুব শীঘ্রই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহিন বলেন, এটা সত্যিকার অর্থেই একটা বিশাল অর্জন ও সুখবর। সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় তাদেরকে সবধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে পাঠানো হচ্ছে মালয়েশিয়ায়। তাদেরকে গ্রাম থেকে তুলে এনে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজের ধরন ও প্রকৃতি সম্পর্কে আগাম অবহিত করেই পাঠানো হচ্ছে।

তাদেরকে বাছাইও করেছে মালয়েশিয়ার নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। ঢাকায় এসে তারা তাদের প্রয়োজনীয় পদ্ধতি মেনেই এ নিয়োগ সম্পন্ন করে। এমনকি বাংলাদেশ অংশে যেসব খরচ আছে- সেটিও কোম্পানি দিচ্ছে।
এসব শ্রমিকের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানতে চাইলে সচিব ড. সালেহিন বলেন,  বেতন ১৫শ রিংগিত, থাকা- খাওয়া ও চিকিৎসা ফ্রি। তাদেরকে বহন করার জন্য বিমান ভাড়াও দিচ্ছে মালয়েশিয়ার প্লান্টেশন কোম্পানি ইউনাইটেড  প্লান্টেশন (ইউপি)।
এ বিষয়ে তিনি আরও জানান, আপাতত কৃষি খাতের কাজের উদ্দেশ্যেই তাদেরকে পাঠানোর সব ব্যবস্থা করেছে বোয়েসেল। ইতোমধ্যে এক হাজার কর্মীর চাহিদা এলেও প্রাথমিকভাবে অল্প সংখ্যক কর্মী তিন দফায় মালয়েশিয়ায় যাবেন। আপাতত স্বল্প সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে শুরু করা হলেও পরে এ পরিমাণ বাড়বে আশানুরূপ। পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও পাঠানো হচ্ছে শ্রমিকদের।
জানা যায়, স্পেশাল ওয়ান-অব রিক্রুটমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় বাংলাদেশ থেকে বোয়েসেলের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন সেক্টরে প্রায় ১০ হাজার কর্মী পাঠানোর বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়। যদিও বোয়েসেলের নিজস্ব উদ্যোগে ছয়টি কোম্পানি থেকে ১ হাজার কর্মীর চাহিদা পাওয়া গেছে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ডাটাবেজ থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে এবং বিভিন্ন জেলায় জব-ফেয়ারের মাধ্যমে কর্মীর তালিকা সংগ্রহ করার মাধ্যমে ৭০০ জনকে প্রস্তুত করা হয়েছে।

‘স্পেশাল ওয়ান-অব রিক্রুটমেন্ট প্রজেক্ট’-এর আওতায় বোয়েসেল-এর মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর খরচ প্রায় ৪৬ হাজার টাকা। মালয়েশিয়ার অন্যতম বৃহৎ প্লান্টেশন কোম্পানি ইউনাইটেড  প্লান্টেশন থেকে এই খরচ পুরোটাই মিটানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরে কর্মী নিয়োগে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ একটি সমঝোতা স্মারক সই করে। ওই চুক্তির আওতায় আগস্ট মাসে বাংলাদেশী কর্মীদের মালয়েশিয়া যাওয়া শুরু হয়। এজন্য মালয়েশিয়া সরকার ২৫টি বাংলাদেশী রিক্রুটিং এজেন্সি নির্ধারণ করে। অপরদিকে বাংলাদেশের দাবি ২৭৫টি বাংলাদেশী রিক্রুটিং এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর কাজ দিতে। অধিক অভিবাসন খরচের কারণে কর্মী নিয়োগে ধীরগতি এড়াতে বোয়েসেল-এর মাধ্যমে কর্মী প্রেরণে অভিবাসন খরচ অনেক কমে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
এ বিষয়ে সচিব ড. সালেহিন জানান, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালুুর পর এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ হাজার শ্রমিক গেছেন দেশটিতে। এ পরিমাণ দিন দিনই বাড়ছে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগেই শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা ও অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে শ্রমবাজার চালু হবার পর গত সেপ্টেম্বরে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল অপারেশন্স ইনচার্জ খায়ের রমজান মোহাম্মদ আনোয়ার এক বিবৃতিতে বলেছেন, এককালীন ব্যবস্থা হিসেবে সরকার থেকে সরকার চুক্তির অধীনে এ কর্মী মালয়েশিয়ায় আসবে।

এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশী রিক্রুটিং এজেন্সির কোনো সম্পর্ক নেই। মূলত উচ্চ অভিবাসন খরচ এড়াতে মালয়েশিয়ান নিয়োগ কর্তাদের উৎসাহে এমন ব্যবস্থায় সরকার সম্মতি দিয়েছে। কেবল বিদেশী কর্মী নিয়োগ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে করা হয়েছে। এটি মূলত মালয়েশিয়ান এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (এমইএফ) এবং মালয়েশিয়ান পাম অয়েল অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগ যা সরকার নিশ্চিত করেছে।
এমইএফ সার্কুলার অনুসারে- ১০,০০০ কর্মীর মধ্যে ৪,২০০ জন এখনো নিয়োগের জন্য অপেক্ষমাণ। মন্ত্রণালয় মোট ২,১০০টি এমইএফ সদস্যদের জন্য বরাদ্দ করেছে। মালয়েশিয়ার শ্রম ও অভিবাসন বিভাগ, কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সহযোগে সরকারি মালিকানাধীন বৈদেশিক নিয়োগ সংস্থা বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) এই কর্মী পাঠানোর কাজ করছে।

×