ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

সৌদিতে যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠক

জ্বালানি সহযোগিতায় ঢাকা রিয়াদ টাস্কফোর্স হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ১ নভেম্বর ২০২২

জ্বালানি সহযোগিতায় ঢাকা রিয়াদ টাস্কফোর্স হচ্ছে

জ্বালানি সহযোগিতা বাড়াতে টাস্কফোর্স গঠনে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব

জ্বালানি সহযোগিতা বাড়াতে টাস্কফোর্স গঠনে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব। জ্বালানি খাতে সহযোগিতার বিষয়ে দুই দেশের সুবিধাজনক সময়ে টাস্কফোর্স নিয়মিত সভা করবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জরুরি ভিত্তিতে বাণিজ্যিকভাবে এলএনজি সরবরাহ ও ইস্টার্ন রিফাইনারি ইউনিট দুই প্রকল্পে বাংলাদেশকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে সৌদি।

এ ছাড়া সৌদি আকওয়া পাওয়ারের মাধ্যমে বাংলাদেশে ১০০০ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার ও ৭৩০ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাবের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে।
বাংলাদেশ-সৌদির মধ্যে যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের ১৪তম সভা শেষে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস এসব তথ্য জানায়। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান জানান, সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই প্রত্যাশা অনুযায়ী ২০২৩ সালের শুরুর দিকে সৌদি যুবরাজ বাংলাদেশ সফর করবেন, যা দুদেশের সম্পর্ক বৃদ্ধিতে অনন্য ভূমিকা রাখবে।
রিয়াদের ডিজিটাল সিটিতে অবস্থিত ক্রাউন প্লাজা হোটেলে ৩০-৩১ অক্টোবর যৌথ কমিশনের এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ইআরডি সচিব। সৌদি আরবের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির মানব সম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার ড. আব্দুল্লাহ বিন নাসের বিন মোহাম্মদ আবুথনাইন। সভায় বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করে। এ ছাড়া বাংলাদেশ দূতাবাস ও জেদ্দা কনস্যুলেটের কর্মকর্তারা এতে যোগ দেন।
সভায় সৌদি আরব ও বাংলাদেশ জ্বালানি সহযোগিতা বৃদ্ধিতে একটি যৌথ টাস্কফোর্স গঠনে সম্মত হয়। টাস্কফোর্স জ্বালানি খাতে সহযোগিতার বিষয়ে দুদেশের সুবিধাজনক সময়ে নিয়মিত সভা করবে মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
মঙ্গলবার ইআরডি থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, জরুরিভিত্তিতে বাণিজ্যিকভাবে এলএনজি সরবরাহ ও ইস্টার্ন রিফাইনারি ইউনিট-২ প্রকল্পে সৌদির বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ অনুরোধ জানালে সৌদি আরব সহযোগিতার আশ্বাস দেয়।
যৌথ কমিশন সভায় বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে দুটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।

দুদেশের নৌ পেশাজীবীদের মধ্যে নিয়োগ, প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সম্ভাব্য সব ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশের নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং সৌদি আরবের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এ ছাড়া দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে এফবিসিসিআই, বাংলাদেশ এবং ফেডারেশন অব সৌদি চেম্বার অ্যান্ড কমার্সের মধ্যে একটি জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিল গঠনে সমঝোতা স্মারক সই হয়।
দুদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বিজ্ঞান ও শিক্ষার সব ক্ষেত্রে কার্যকর দ্বিপক্ষীয় সহায়তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরেকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করা হয়। যৌথ কমিশন সভায় দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইসিটি, কৃষি, পরিবেশ, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং অন্যান্য বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়।
যৌথ কমিশনের সভায় সূচনা বক্তব্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান সৌদি আরবকে বাংলাদেশের অকৃত্রিম ভাতৃপ্রতিম বন্ধু দেশ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পর্যায়ক্রমিকভাবে পর্যালোচনা করার জন্য যৌথ কমিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ। এটি আমাদের সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো অন্বেষণ করার, সহযোগিতার জন্য নতুন সম্ভাবনাগুলো চিহ্নিত করার এবং আমাদের যৌথ লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি ঐকমত্যে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেয়।
সচিব শরিফা খান আশা প্রকাশ করেন, ‘২০২৩ সালের শুরুর দিকে সৌদি যুবরাজ বাংলাদেশ সফর করবেন, যা দুদেশের সম্পর্ক বৃদ্ধিতে অনন্য ভূমিকা রাখবে।’
দূতাবাস জানায়, সভায় দুই দেশের নৌ পেশাজীবীদের মধ্যে নিয়োগ, প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সম্ভাব্য ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশের নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং সৌদির যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

বাংলাদেশের পক্ষে সৌদিতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী এবং সৌদির পক্ষে মেরিটাইম ট্রান্সপোর্টের ডেপুটি আব্দুল রহমান এম আল থুনায়েন স্মারকে স্বাক্ষর করেন।
এ ছাড়া এফবিসিসিআই, বাংলাদেশ এবং ফেডারেশন অব সৌদি চেম্বার অ্যান্ড কমার্সের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিল গঠনে সমঝোতা হয়। এ সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের পক্ষে এফবিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট হাবিব উল্লাহ ডন স্বাক্ষর করেন। সৌদি চেম্বারের পক্ষে ভাইস চেয়ারম্যান প্রকৌশলী তারিক আল হায়দারী স্মারকে স্বাক্ষর করেন।
এর বাইরে আরবের স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশ থেকে পেশাজীবী নিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ এবং সৌদির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি ‘এক্সিকিউটিভ প্রোগ্রাম’ বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে সমঝোতা হয়। এ ছাড়া দুই দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বিজ্ঞান ও শিক্ষার সব ক্ষেত্রে কার্যকরী দ্বিপাক্ষিক সহায়তা বাড়াতে আরেকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়ে সম্মত হয় উভয়পক্ষ।

সভায় দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইসিটি, কৃষি, পরিবেশ, ধর্মীয় মূল্যবোধ ইত্যাদি বিষয়ে স্বার্থসংশ্লিষ্ট আলোচনা এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়। সভা শেষে একটি যৌথ কার্য বিবরণী স্বাক্ষর করা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, যৌথ কমিশনের পরবর্তী সভা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে।

×