ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আজ থেকে ২২ দিন আহরণ, পরিবহন, কেনাবেচা নিষিদ্ধ

ইলিশ ধরা নিষিদ্ধের সময় পাল্টানো হবে না

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:১০, ৭ অক্টোবর ২০২২

ইলিশ ধরা নিষিদ্ধের সময় পাল্টানো হবে না

ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ

প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে আজ শুক্রবার হতে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ ও বিনিময় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইলিশের প্রজনন মৌসুম পাল্টালেও ইলিশ ধরা নিষিদ্ধের এই সময় পরিবর্তন করা হচ্ছে না বলে জানা গেছে।

গত একযুগে দেশে ইলিশ আহরণ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২২ বাস্তবায়ন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা জানান।
এদিকে ইলিশের প্রজনন মৌসুম পাল্টানোর পাশাপাশি ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞার সময় এগিয়ে আনা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জনকণ্ঠকে বলেন, এটা আইন দ্বারা করা হয়েছে। এখন পাল্টানো যাবে না। ইলিশ মাছ সারাবছরই ডিম দেয়। কমবেশি সারাবছরই জাটকা পাওয়া যায়। ডিম পারার মধ্যে সবচেয়ে পিকটাইম সেটা নির্ধারণ করি। পিক টাইমটা হচ্ছে ৮ অক্টোবর থেকে ২৯ অক্টোবর। এখানে পূর্ণিমা আছে এটাই পিক টাইম।
পিক টাইমটা গবেষণা করে বের করেছি। এটাই হলো আসল সময়। এই সময়টা অলরেডি ডিক্লিয়ার হয়ে গেছে। গবেষণার ভিত্তিতে প্রতিবছরই পরিবর্তন হতে পারে। আমরাই গবেষণা করি। সেখানে এনজিও, জেলে, মৎস্যজীবী প্রতিনিধি, সব সেক্টরের প্রতিনিধি থাকে। তাদের মতামত নেয়া হয়। পূর্ণিমা অমাবস্যার কারণে সময় আগে পিছে হতে পারে।

বছরে দুটি পিক টাইম সেপ্টেম্বর-অক্টোবর আর জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি। দুই টাইমে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করলে জেলেদের ওপর প্রভাব পড়বে। সবকিছু বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটি সব ধরনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে এই সময়টি নির্ধারণ করেছে।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে মৎস্যমন্ত্রী বলেন, ইলিশের উৎপাদনে এক সময় খারাপ অবস্থা হয়েছিল। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা, ইলিশ সমৃদ্ধির জন্য সুনির্দিষ্ট গবেষণা ও বর্তমান সরকারের গৃহীত ব্যবস্থাপনায় ইলিশের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে গত ১২ বছরে ইলিশ আহরণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশ আহরণ ছিল ২ দশমিক ৯৮ লাখ মেট্রিক টন।

২০২০-২১ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৫ দশমিক ৬৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, ইলিশের উৎপাদন ক্রমান্বয়ে এমনভাবে বৃদ্ধি পাবে যে প্রান্তিক পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বত্র মানুষ ইলিশের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবে। ইলিশের উৎপাদন ব্যাপক আকারে বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গণমাধ্যমেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অত্যন্ত সুস্বাদু এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও আবেগের মাছ ইলিশ। ইলিশের জিআই সনদ বাংলাদেশের। পৃথিবীতে মোট উৎপাদিত ইলিশের ৮০ শতাংশ আমাদের দেশে উৎপাদন হয়। সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু ইলিশ বিদেশে রফতানি করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে চলতি বছর এ পর্যন্ত ইলিশ রফতানি হয়েছে ১ হাজার ৩৫২ মেট্রিক টন।

এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয়েছে ১ কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এই মুহূর্তে দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম ও উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ইলিশ বৃদ্ধি না পেলে আমরা রফতানি করে এ বৈদেশিক মুদ্রা আনতে পারতাম না।
তিনি আরও বলেন, মা ইলিশ আহরণে বিরত থাকা মৎস্যজীবীদের অতীতে পরিবার প্রতি ২০ কেজি করে চাল দেয়া হতো। এ বছর এটি ২৫ কেজিতে উন্নীত করা হয়েছে । এবার দেশের ৩৭ জেলার ১৫৫টি উপজেলায় ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮৭টি জেলে পরিবারকে ১৩ হাজার ৮৭২ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে এর পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ, অতিরিক্ত সচিব মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

×