শান্তিরক্ষী নিহত
মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে রাস্তার পাশে পেতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্বরত বাংলাদেশের তিন সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন। সোমবার রাতে গাড়িতে করে টহল দেয়ার সময় তারা আক্রান্ত হন বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর-আইএসপিআর।
নিহত শান্তিরক্ষীরা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার কাটিঙ্গা গ্রামের জসিম উদ্দিন (৩১), নিলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার দক্ষিণ টিট পাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম (২৬) এবং সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলার বাড়াক রুয়া গ্রামের শরিফ হোসেন (২৬)। তারা তিনজনই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে কর্মরত ছিলেন। এ ছাড়া টহল দলের কমান্ডার মেজর আশরাফুল হকও ওই ঘটনায় আহত হয়েছেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন (ব্যানব্যাট-৮) ২০২১ সাল থেকে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের পশ্চিম সেক্টরে বোয়ার এলাকায় শান্তি রক্ষার দায়িত্ব পালন করছে। দুর্গম কুই এলাকার একটি অস্থায়ী ক্যাম্প থেকে তাদের একটি দল স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মেজর আশরাফের নেতৃত্বে কাইতা এলাকায় টহলে যায়। তারা ফেরার পথে রাস্তার পাশে মাটিতে পুঁতে রাখা আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বিস্ফোরণে মেজর আশরাফকে বহনকারী প্রথম গাড়িটি প্রায় ১৫ ফুট দূরে ছিটকে পড়ে। তাতে গাড়িতে থাকা চারজন মারাত্মকভাবে আহত হন।
প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর তাদের ১৪৪ কিলোমিটার দূরে বোয়ারে অবস্থিত মিনুসকা হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে জসিম, জাহাঙ্গীর ও শরিফ মারা যান। মেজর আশরাফুল হক এখনও ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন; বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল। সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে নিয়োজিত অন্য বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা নিরাপদে আছেন। নিহত তিন শান্তিরক্ষীর মৃতদেহ ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে’ দেশে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জাহাঙ্গীরের বাড়িতে মাতম ॥ স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী থেকে জানান, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে শান্তিরক্ষা মিশনে নিহত তিন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীর মধ্যে সৈনিক জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ তিতপাড়া গ্রামে। ওই গ্রামের লতিফুর রহমানের পাঁচ ছেলের মধ্যে জাহাঙ্গীর চতুর্থ। নিহতের খবর শুনে তার বাড়িতে চলছে মাতম।
জাহাঙ্গীর আলমের বড় ভাই আবুজার রহমান জানান, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন জাহাঙ্গীর। ১০ মাস আগে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের ব্যানব্যাট-৮ এলাকার উই ক্যা¤েপ শান্তিরক্ষী মিশনে যান তিনি। বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার ভোর ৪টায় মাটিতে পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে তার ভাইসহ তিন বাংলাদেশী সেনা প্রাণ হারান।
সেনাবাহিনীর পক্ষে মুঠোফোনে বিষয়টি পরিবারকে জানানো হয় বলে জানান জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই বাদশা। এই খবর আসার পর থেকে জাহাঙ্গীরের বাড়িতে চলছে মাতম। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বাবা লতিফুর রহমান। মা গোলেনুর বেগম বিছানায় মূর্ছা যাচ্ছিলেন বারবার। বিবাহিত স্ত্রী শিমু আক্তার স্বামীর ছবি বুকে ধরে করছেন আহাজারি।
এমএস