
নিহত শিক্ষক দম্পতি
এক শিক্ষক দম্পতির লাশ তাদের প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে মহানগরীর গাছা থানাধীন বড়বাড়ির বগারটেক এলাকার সড়কের পাশে থাকা ওই গাড়ি থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। স্বজনদের দাবি তাদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। নিহতরা হলেন, গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানাধীন কামারজুরি এলাকার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে একেএম জিয়াউর রহমান মামুন (৫১) তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার জলি (৩৫)। এদের মধ্যে জিয়াউর রহমান গাজীপুরের টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং তার স্ত্রী জলি টঙ্গী বাজার এলাকার আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা পদে কর্মরত ছিলেন।
নিহত জিয়াউর রহমানের ভগ্নিপতি মাওলানা আব্দুর রশিদ জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের গাছা থানাধীন কামারজুরি এলাকার নিজ বাড়িতে স্বপরিবারে বসবাস করতেন জিয়াউর রহমান। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানাধীন দড়ি কাঁঠাল এলাকায়। জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী জলি টঙ্গীর পৃথক স্কুলে চাকরি করলেও তারা প্রতিদিন একসঙ্গে নিজস্ব প্রাইভেটকারে স্কুলে যাওয়া আসা করতেন। বুধবার স্কুলের কাজ শেষে বিকেল সাড়ে ৬টার দিকে মামাত ভাইকে গাড়িতে তুলে জিয়াউর নিজে গাড়ি চালিয়ে স্ত্রী জলির স্কুলে যান। সেখান থেকে জলিকে গাড়িতে তুলে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন তিনি। পথে মামাত ভাইকে রাস্তায় নামিয়ে দেন তারা। জিয়াউর রহমানের ছেলে একেএম তৌসিফুর রহমান মিরাজ সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে বাবার মোবাইলে ফোন দেন। কিন্তু বাবার ফোন রিসিভ না হওয়ায় তার মায়ের ফোনে ফোন দিচ্ছিলেন। পরে মা ফোন ধরে বাসায় আসার কথা জানিয়ে বলেন ‘আমরা পথে আছি, কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় আসছি’।
তৌসিফুর রহমান মিরাজ জানান, মোবাইলে কথা বলার সময় মায়ের কথাবার্তায় ক্লান্তির ভাব বুঝতে পারি। এর দীর্ঘক্ষণ পরও বাসায় না আসায় আমি পুনরায় ফোন করি। কিন্তু রিং বাজলেও বাবা-মার কেউ ফোন রিসিভ করেননি। এরপর একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। এ দম্পতির হদিস না পেয়ে স্বজনরা রাতভর বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। তারা গাছা থানা, টঙ্গী পূর্ব ও পশ্চিম থানা এবং পূবাইল থানায়ও যোগাযোগ করেন। বড় চাচা ও ফুপাকে সঙ্গে নিয়ে আমরা পূবাইল থানায় খোঁজ করে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ফিরছিলাম। পথে বাড়ির কাছে গাছা থানাধীন বড়বাড়ির বগারটেক এলাকায় হারবাইদ-বড়বাড়ি সড়কের পাশে জিয়াউর রহমানের প্রাইভেটকারটি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। আমরা গাড়ির কাছে এগিয়ে গিয়ে চালকের সিটে বাবা এবং তার পাশের সিটে (সামনে) মায়ের শীতল ও নিথর দেহ দেখতে পাই। আমরা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় বোর্ডবাজারে তায়েরুন্নেছা মেমোরিয়াল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে সেখান থেকে উত্তরার নস্ট্রাম নামের অপর একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাদের মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। এরপর দুটি এ্যাম্বুলেন্সে করে তাদের লাশ গাছা থানায় আনা হয়।
নিহতের সহোদর বড় ভাই মোঃ রিপন ও শ্যালিকা আহমিদা আক্তার লিমা বলেন, নিহতদের গলায় কালো দাগ রয়েছে। তাদের মুখ দিয়ে লালা ঝরছিল। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকা-ের ঘটনা। তাদের সঙ্গে থাকা স্বর্ণলঙ্কার, নগদ প্রায় দুই লাখ টাকা ও মোবাইল ফোন কিছুই নেয়নি হত্যাকারীরা। ঘটনাটি যদি পরিকল্পিত নাই হতো তাহলে টাকা, স্বর্ণ, মোবাইল ও গাড়ি নিয়ে যেত। অথচ তার কিছুই তারা নেয়নি। শুধু দুইজনের জীবন নিয়ে গেছে। এলাকায় বা পরিবারের মাঝে কোন বিরোধ নেই। তবে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সম্প্রতি তার স্কুলের কয়েকজনের সঙ্গে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে বলে জেনেছি। প্রায় দুই বছর আগে টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে যোগ দেন জিয়াউর রহমান। এর আগে তিনি দীর্ঘদিন টঙ্গীর নোয়াগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়সহ নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জের একাধিক স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ময়নাতদন্তের পর জানাজা শেষে নিহত দু’জনের লাশ জিয়াউর রহমানের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হবে।
ভগ্নিপতি মাওলানা আব্দুর রশিদ আরও জানান, প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর প্রায় ৬/৭ বছর আগে মাহমুদা আক্তার জলিকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন জিয়াউর রহমান। দ্বিতীয় সংসারে তাদের কোন সন্তান নেই। তবে প্রথম সংসারের একমাত্র সন্তান তৌসিফুর রহমান মিরাজ গণবিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সে বাড়িতেই বাবা-মায়ের কাছেই থাকে। পরিবারের করও সঙ্গে এ দম্পতির কোন বিরোধ নেই।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ বলেন, ঘটনাটি তদন্তে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। বিষয়টি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের জন্য তাদের লাশ গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।