অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল
চাপ থাকলেও দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে বৈধ চ্যানেলের পাশাপাশি হু-ি হয়ে অর্থ আসছে। ডলার সঙ্কটের জন্য এটিও একটি কারণ। প্রবাসীরা যেন বৈধপথে রেমিটেন্স পাঠান। তবে সরকারী বিভিন্ন পদক্ষেপে দ্রুত ডলারের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি জানান, দু’এক মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসে সবকিছুর দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে। একইসঙ্গে দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীলতায় ফিরবে।
বুধবার ভার্চুয়ালি অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী এ কথা বলেন। এর আগে বৈঠকে ৭৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রস্তাবনা ছিল। মোট অর্থায়নের মধ্যে জিওবি থেকে ব্যয় হবে ৪৪৮ কোটি ৮২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা এবং দেশীয় ব্যাংক ঋণ ৩১৫ কোটি ৪৭ লাখ ৪৮ হাজার ১০০ টাকা।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কানাডা থেকে ৩ কোটি ৩০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এছাড়া সৌদি আরব ও কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডে (কাফকো) থেকে ৩১৫ কোটি ৪৭ লাখ ৪৮ হাজার ১০০ টাকায় ৬০ হাজার ব্যাগ ইউরিয়া সার ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৩ লাখ ৬০ হাজার টন ইউরিয়া ও এক লাখ টন এমওপি সার কেনার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতি আবারও গর্বের জায়গায় ফিরে আসবে। খুব দ্রুত অর্থনীতিকে মূল ¯্রােতধারায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। খুব বেশি সময় লাগবে না। সবক্ষেত্রে দেখা যাবে দেশের অগ্রগতি। ইতোপূর্বে যেমন আমাদের অর্থনীতিকে নিয়ে গর্ব করতাম, সারা পৃথিবীর মানুষ যেভাবে গর্ব করত, সেই গর্বের জায়গায় যাব। এটা করতে বেশি সময় লাগবে না।
ডলারের বাজারে অস্থিতিশীলতার বিষয়ে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এই যে ওঠা-নামা বেশি হচ্ছে, সেটি কমিয়ে আনতে হবে। সেটা করতে পারলে একই প্ল্যাটফর্ম থেকে সবাই এগোতে পারবে। সেই প্ল্যাটফর্মই হবে ন্যায়-নীতির ভিত্তি। রেমিটেন্স আহরণ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে আগের একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে যত রেমিটেন্স আসে তার ৫১ শতাংশ আসে বৈধপথে আর ৪৯ শতাংশ আসে হু-িতে।
এসব রেমিটেন্স বৈধপথে আনা সম্ভব হলে দেশ ও এই অর্থ উপার্জনকারী সকলেই উপকৃত হবে। এজন্য সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বৈধপথে রেমিটেন্স উৎসাহিত করা হচ্ছে। অফিসিয়াল চ্যানেলে যাতে বিদেশ থেকে রেমিটেন্স আসে, সেটা আমরা সবাই চাই। বৈধ পথে অর্থ আসলে সব জায়গায় তার রেকর্ড থাকে, তার জবাবদিহি করা যায়। তবে হুণ্ডি আছে।
রেমিটেন্স বৈধপথে আনা সম্ভব হলে দেশ ও এই অর্থ উপার্জনকারী সকলেই উপকৃত হবে। এজন্য সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বৈধপথে রেমিটেন্স উৎসাহিত করা হচ্ছে। শীঘ্রই দেশে মার্কিন ডলারের দাম কমবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী দু’এক মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা করছি। অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে এখন যে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে তা আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে।
ইউরোপে গত জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.১ শতাংশ যা এপ্রিলে হয়েছে ৭.৪ শতাংশ। জুলাইতে তা আরও বেড়ে ৭.৯ শতাংশ হয়েছে। পুরো ইউরোপে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। তিনি বলেন, ইউরোপের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি ৭৫ শতাংশ বেড়েছে। ওইসব দেশে থেকে পণ্য কিনে নিয়ে আসার কারণেই দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে আওয়ামী লীগ দায়িত্ব নেয়ার সময় মূল্যস্ফীতি ছিল ১২.৩ শতাংশ। সেই থেকে নানা চড়াই-উতরাই পার করে আসছে সরকার। করোনা মহামারী, ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের মতো সঙ্কট অতিক্রম করতে হচ্ছে। এরমধ্যেও দেশের অর্থনীতি ভাল আছে। খুব শীঘ্রই দেশের অর্থনীতি আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।
ব্যাংকিং খাতের সুদহার সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে সুদ হার বাড়ানোর সুযোগ নেই। যে কারণে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমদানি নিয়ন্ত্রণের জন্য শুল্ক বাড়ানো, এলসি মার্জিন বাড়ানোসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মূল্যস্ফীতি এখন মাত্র ৭ শতাংশ। ভোজ্যতেল বা অন্যান্য যেসব জিনিস তাদের থেকে কিনতে হয়, তাদের যদি দাম বাড়ে সেই প্রভাব এখানেও পড়ে। আমাদের বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে বলে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে।
বাজেটে কালো টাকা সাদা করার যে সুযোগ দেয়ার বিষয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, এ উদ্যোগটি দেশের মানুষ গ্রহণ করবে। অনুরোধ থাকবে দেশের প্রতি মমত্ববোধ, আগামী প্রজন্মের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে সবাই যেন আরও উদ্দীপনা নিয়ে কাজ করেন। যাদের কাছে অপ্রদর্শিত টাকা আছে, সেটি এই স্কিমের আওতায় এনে স্থায়ীভাবে আগামী প্রজন্মের জন্যই এটি করা উচিত। দুর্নীতি নিয়ে করা অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে আমাদের দুর্নীতি কতটা হয়, সেই তথ্য আমার কাছে নেই। কিন্তু অনুমান করে বলতে পারেন যে, দুর্নীতি হচ্ছে।
টিসিবি ৩ কোটি ৩০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কিনবে ॥ সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কানাডা থেকে ৩ কোটি ৩০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আব্দুল বারিক সাংবাদিকদের কাছে প্রস্তাবের বিস্তারিত দিক তুলে ধরেন। ওই সময় তিনি বলেন, অর্থনৈতিক বিষয়ক সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদনের জন্য দুটি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য তিনটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে।