রাজধানীর হাটে
সরকারী ঘোষণা অনুযায়ী ঢাকার ২০ হাটে আনুষ্ঠানিকভাবে কোরবানির গবাদিপশু বেচাকেনা শুরু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাটগুলোতে ট্রাক ও লরিতে করে আনা হচ্ছে কোরবানিযোগ্য গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ। হাটে ক্রেতাও আসতে শুরু করেছে, তবে তাদের বেশিরভাগ দরদামের মধ্যেই আপাতত সীমাবদ্ধ থাকছেন।
ফলে পুরোদমে এখনও জমে ওঠেনি পশুর হাট। হাটগুলো পশুতে ঠাসা থাকলেও বিক্রি সেভাবে জমে ওঠেনি। আশা করা হচ্ছে, আজ বৃহস্পতিবার থেকে পশু কিনবেন নগরবাসী। ইজারাদারদের মতে, শুক্র ও শনিবার দুদিন ক্রেতাদের ঢল নামবে কোরবানির পশুর হাটে। এদিকে, ঢাকার হাটগুলোতে এবার বড় সাইজের গরু সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন খামারে পালিত আমেরিকান ৫০০ ব্রাহমা জাতের গরু বিক্রি হবে এবার কোরবানির হাটে। আকারভেদে প্রতিটির ওজন হবে ৩০ থেকে ৪৫ মণ। শৌখিন ও ধনাঢ্য কোরবানি দাতাদের কাছে এসব গরুর বিশেষ চাহিদা রয়েছে। এছাড়া দেশের সবচেয়ে বড় গরুগুলো কোরবানির হাটে তুলেছেন বেপারিরা। খামার মালিকদেরও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে পশু বিক্রি শুরু করেছেন।
এদিকে, অনেক খামারি দেশ-বিদেশের শীর্ষ তারকাদের নামানুসারে কোরবানির গরু-ছাগলের নাম রেখেছেন। ক্রেতা আকর্ষণে জায়েদ খান, হিরো আলম, শাকিব খান ও অনন্ত জলিলের মতো তারকাদের নামের সঙ্গে মিল রেখে কোরবানির পশুর নাম রাখা হয়েছে। এছাড়া সম্রাট, রাজা, বাদশা, শাহেনশাহ, প্রিন্স, শাহজাদা, চেয়ারম্যান, মেম্বার ও কালোমানিকসহ নানা ধরনের বাহারি নামের কোরবানির গরু আনা হয়েছে ঢাকার হাটে। কোন কোন বেপারি গরুর সঙ্গে ছাগল ফ্রি দিয়ে বেশি দাম হাঁকছেন।
ক্রেতারা হাটে হাটে ঘুরে ঘুরে দেখছেন এসব পশু। ঢাকার সবচেয়ে বড় স্থায়ী পশুর হাট গাবতলীতে বিদেশী পশু উট ও দুম্বা আনা হয়েছে বিক্রির উদ্দেশ্যে। রাজধানীর কমলাপুর- গোপীবাগ-মুগদাপাড়া পশুর হাট ও খিলগাঁও দক্ষিণ শাজাহানপুরের অস্থায়ী হাট ঘুরে দেখা যায়, বিপুল সংখ্যক গরু, ছাগল ও অন্যান্য পশু উঠেছে হাট দুটোতে। বড় সাইজের গরুগুলো দেখতে ক্রেতারা ভিড় করছেন কোন কোন খুঁটির সামনে। অনেকে গরুর সঙ্গে সেলফি তুলছেন। দামে পছন্দ হলে অনেক ক্রেতা কিনে নিচ্ছেন কোরবানির পশু।
তবে বেশিরভাগ ক্রেতা দরদাম করছেন। এক হাট থেকে আরেক হাটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ক্রেতাদের অভিযোগ ছোট ও মাঝারি সাইজের গরুর দাম এবার বেশি। অন্যদিকে সেই তুলনায় বড় গরুর দাম কিছুটা কম। বেপারি কিংবা বিক্রেতারাও এখন বেশি করে দাম চাচ্ছেন। আরও দু’একদিন দেখে হয়ত তারা পশুটি বিক্রি করে দিবেন।
অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, যারা এখন আসছেন তারা শুধু ঘুরে ঘুরে দেখছেন। পশু কিনছেন না। দাম কম বলছে বলেও অভিযোগ রয়েছে বিক্রেতাদের। দাম বেশি কম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার পাল্টপাল্টি অভিযোগ করছেন। কুষ্টিয়া থেকে ঢাকার শাজাহানপুর হাটে পশু নিয়ে এসেছেন জব্বার তালুকদার। তিনি জানান, স্থানীয় খামার থেকে তিনি ২০টি গরু কিনে ঢাকায় নিয়ে এসেছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে মাত্র দুটি। বাকি গরুগুলো আরও দু’একদিন থেকে তিনি বিক্রি করে দিবেন।
তিনি জানান, এখনও হাটে পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হয়েছে। তবে ক্রেতারা আসতে শুরু করেছে। ওই হাটের ইজারাদার আব্দুল লতিফ মিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, হাটে পর্যাপ্ত গরু রয়েছে। এখানে পুলিশের পাশাপাশি হাটকর্তৃপক্ষ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য মাইকে সার্বক্ষণিক দিক-নির্দেশনা ও সতর্কবাণী প্রচার করা হচ্ছে। ফলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হওয়ার কোন সুযোগ নেই হাটে।
করোনা সংক্রমণরোধে মাইকে মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে। এছাড়া মার্কেট কর্তৃপক্ষও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্যানিটাইজার সরবরাহ করছে। এদিকে, শাজাহানপুরের এই হাটে জামালপুর থেকে রাজা বাবু নামে প্রায় ৪০ মণ ওজনের একটি গরু নিয়ে এসেছেন লালমিয়া বেপারি। গরুটি দেখার জন্য ক্রেতারা ভিড় করছেন ক্রেতারা। অনেক ক্রেতা আগ্রহী হয়ে গরুটির সঙ্গে সেলফি তুলছেন। এখন পর্যন্ত গরুটির দাম উঠেছে ৮ লাখ টাকা। আরেকজন ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা দাম বলেছেন।
কিন্তু এই দামে বিক্রি করা হবে না বলে জানিয়েছেন লালমিয়া। উত্তর শাজাহানপুরের এ হাট মূলত শাহাজানপুর রেলওয়ে কলোনির ভেতরের ফাঁকা মাঠে বসে। অস্থায়ী হাট বসায় কলোনিবাসী কিছুটা দুর্ভোগের মুখে পড়লেও অন্যদিকে নিকটেই গরু কেনার সুযোগ পাওয়ায় খুশি তারা।
আমেরিকান ৫০০ ব্রাহমা জাতের গরু কোরবানির হাটে ॥ এবারই দেশে প্রথমবারের মতো আমেরিকান ৫০০ ব্রাহমা জাতের বড় সাইজের গরু কোরবানির পশু হাটে তোলা হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন হাটে এসব গরুর দেখা মিলছে। এর পাশাপাশি কিছু গরু যাবে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে।
মূলত ধনাঢ্য ও শৌখিন ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে দেশের শীর্ষ খামারে এসব গরু লালন-পালন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইমরান হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, আমেরিকান ব্রাহমা বড় জাতের ৫০০ শতাধিক গরু বিক্রির প্রস্তুতি নিয়েছেন খামার মালিকরা। ইতোমধ্যে এসব গরু রাজধানীর বিভিন্ন হাটে তোলা হয়েছে।
এক একটি ব্রাহমা জাতের গরু থেকে ৩০-৪৫ মণ পর্যন্ত মাংস পাওয়া যাবে। ক্রেতাদের কাছে এসব গরুর চাহিদা রয়েছে। এর পাশাপাশি ফিজিয়ান ও অস্ট্রেলিয়ান জাতের বড় গরুগুলো খামারে লালন-পালন করা হয়েছে।