যশোরের ঐতিহাসিক কালেক্টরেট ভবন উদ্ভাসিত আর্কিটেকচারাল লাইটিংয়ে
দেশের ঐতিহাসিক স্থাপনা উপমহাদেশের প্রথম জেলা যশোরের কালেক্টরেট ভবনটি আলোর ঝলকানিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ঐতিহাসিক দিন ২৫ জুন সন্ধ্যায় আর্কিটেকচারাল লাইট জ্বলে উঠেছে ভবনজুড়ে। কালেক্টরেট ভবনে আর্কিটেকচারাল লাইটের উদ্বোধনের জন্য পদ্মা সেতুর উৎসবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২৫ জুনকেই বেছে নেয় জেলা প্রশাসন। ওই মাহেন্দ্রক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখতে জেলা প্রশাসন সেদিন রাতে আয়োজন করে আতশবাজি উৎসবের। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোঃ তমিজুল ইসলাম খানসহ প্রশাসনের সকল উর্ধতন কর্মকর্তা।
যশোরের ঐতিহ্য ও ইতিহাস বহনকারী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ৩৬০ দুয়ারী কালেক্টরেট ভবন নামে খ্যাত। শৈল্পিক নান্দনিকতার এক অনুপম নিদর্শন এই ভবন। শতবর্ষ পেরিয়ে সগৌরবে মাথা উঁচু করে বিমোহিত করছে যশোরসহ দেশী-বিদেশী পর্যটকদের।
১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান কালেক্টরেট ভবনটি একতলা হিসেবে নির্মিত হয়েছিল তখনকার ২ লাখ ৬৩ হাজার ৬শ’ ৭৯ টাকা ব্যয়ে। বাংলায় দীর্ঘতম এই ভবনটি ছিল সেই সময় দর্শনীয় এবং তা ৩৬০ দরজার ঘর নামে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত ছিল দীর্ঘকাল। মূল কাঠামো ও সৌষ্ঠব বজায় রেখে ১৯৮২ সালে এটিকে দোতলায় পরিণত করা হয়। এই ভবনটি এখনও বাংলাদেশের অন্যতম দর্শনীয় ভবন।
আর্কিটেকচারাল লাইটিং একটি স্থাপনার রঙ, গঠন, বিন্যাস ও বিস্তার নান্দনিকভাবে ফুটিয়ে তোলে। আলো ও রঙের এই খেলা একটি স্থাপনার শৈল্পিক এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব দর্শকের সামনে তুলে ধরে।
অবিভক্ত বাংলায় যশোরকে জেলা ঘোষণা করা হয় ১৭৮১ সালে। এর অধীনে ছিল খুলনা, ফরিদপুর, পাবনা, নদীয়া ও চব্বিশ পরগনা জেলার বেশিরভাগ এলাকা। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রাজস্ব সংগ্রহ ও ঔপনিবেশিক শাসন বজায় রাখার জন্য প্রশাসনিক সংস্কারের দিকে গুরুত্ব দেয়। ১৭৮৬ সালের ৪ এপ্রিল মি. টিলম্যান হেঙ্কেল যশোর কালেক্টরেট প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন। তৎকালীন সরকারের কর্তাব্যক্তিরা তার প্রস্তাবে সাড়া দিলে ১৭৮৬ সালে যশোর কালেক্টরেটের যাত্রা শুরু হয়। মিস্টার টিলম্যানকে যশোর জেলার প্রথম কালেক্টর নিযুক্ত করা হয়। মুড়লির একটি পুরাতন কুঠিবাড়িতে তিনি কার্যক্রম শুরু করেন। ১৭৯৩ সালে মুড়লি থেকে কসবায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় সরিয়ে আনা হয়। ১৮০১ সালে যশোর জেলার প্রথম কালেক্টরেট ভবন পুরাতন কসবায় তৈরি করা হয়। ৮৪ বছর সেই ভবনে কাজ হওয়ার পর ১৮৮৫ সালে বর্তমান ভবনটির একতলা নির্মাণ করা হয়। ৩৬০ দরজার এই ভবন ছিল তৎকালীন বাংলার দীর্ঘতম ভবন। আর্কিটেকচারাল লাইটের মূল ভাবনাটি যশোরের সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) প্রকৌশলী আহমেদ জিয়াউর রহমানের। বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ডক্টরাল রিসার্চার। তিনি বলেন, যশোর কালেক্টরেট ভবন একটি অনন্য স্থাপনা। শৈশবের কিছু সময় যশোরে কাটানোর সুবাদে এই ভবনের সঙ্গে যশোরবাসীর আবেগ সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা ছিল। পরবর্তীতে চাকরিসূত্রে যখন এই ভবনেই কাজ করতে শুরু করি তখন মনে হয়েছে দিনের বেলায় যে ভবনটি তার সকল সৌন্দর্য্য নিয়ে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত থাকে, রাতে যেন তার সেই আভিজাত্য ঠিক ধরা পড়ে না। সেখান থেকেই মূলত আর্কিটেকচারাল লাইটিং এর ভাবনাটি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সামনে উপস্থাপন করি। আর্কিটেকচারাল লাইটিং একটি স্থাপনার রঙ, গঠন, বিন্যাস ও বিস্তার নান্দনিকভাবে ফুটিয়ে তোলে। আলো ও রঙের এই খেলা একটি স্থাপনার শৈল্পিক এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব দর্শকের সামনে তুলে ধরে।
গণর্পূত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফুল ইসলাম বলেন, সারা বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী ভবনের স্থাপত্যশৈলীকে নান্দনিকতায় রূপ দিতে আর্কিটেকচারাল লাইট করা হয়। এসব ভবনের কলামসহ অনেক অংশের নান্দনিকতাকে রাতে দেখা যায় না, লাইটে তা দৃশ্যমান হবে এবং নতুন এক শৈল্পিক ব্যঞ্জনা সৃষ্টি হবে।
তিনি আরও জানান, যশোরের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী এই ভবনটিতে নির্দিষ্ট ফেজে আলো জ্বলবে। তা রাত ১২টা পর্যন্ত তা হতে পারে। সময়টা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। আর্কিটেকচারাল লাইট জ্বলবার সময় বাইরের বাগান ও নিরাপত্তা আলো জ্বললেও ভবনের ভেতরের আলো নিভিয়ে রাখা হবে। আবার আর্কিটেকচারাল লাইট শেষ হওয়ার পর ভবনের নিরাপত্তা আলো জ্বলে উঠবে। এই লাইটের জন্য সাড়ে ২৪ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোঃ তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ঐতিহ্যবাহী কালেক্টরেট ভবন যশোরবাসীর গর্বের প্রতীক। যশোরবাসী এই ভবনকে ধারণ করেন। ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার মেলবন্ধনে এর সৌন্দর্য্যবর্ধন করা হয়েছে। আর পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন উৎসবের অংশ হিসেবে এর আনুষ্ঠানিক লাইটিং শুরু হচ্ছে।