
পদ্মা সেতু
পদ্মা সেতু নির্মাণে বিরোধিতাকারীদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা উচিত। তাদের বিচার না করলে ভবিষ্যতেও তারা দেশবিরোধীরা চক্রান্ত চালিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সততা ও সাহসিকতার নির্দশন হিসেবে সেতুটি নির্মাণের ফলে দেশের সব অঞ্চলের মানুষের মধ্যে অর্থনীতির মতো সাংস্কৃতিক যোগাযোগও বাড়বে। বাঙালী জাতীয়তাবাদ বোধের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও জিয়াউর রহমানই ধর্মভিত্তিক বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। আগামীতে ধর্মভিত্তিক বিভাজন ভুলে পদ্মা সেতুকে ঘিরে সম্প্রীতির বাংলাদেশ সৃষ্টি করতে হবে।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ কথা বলেন। ‘পদ্মা সেতু : সম্প্রীতির পথে সাফল্যের অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকটির আয়োজন করে সম্প্রীতি বাংলাদেশ। সংগঠনটির পক্ষ থেকে নড়াইলে শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে দেশব্যাপী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে চলা অপপ্রচার ও গুজব বন্ধের দাবি জানানো হয়।
গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে বিরোধিতা করে দেশের উন্নয়নে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিরোধিতা করেছে, তাদের বিচার হতে হবে। ড. ইউনূস ও তার সঙ্গে যেসব সহযোগী আছে, তাদেরও বিচার করতে হবে। মন্ত্রী বলেন, এখন যদি তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে অনেকে মনে করবে ঘটনা ঘটার পর তো কিছুই হয় না। আমি মনে করি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের উন্নয়নের বিরুদ্ধে অথবা যারা অসত্য তথ্য সরবরাহ করেছে, আমাদের প্রচলিত আইন আছে, দ-বিধি, বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ অন্যান্য আইন আছে, সেই আইনে আমার দৃষ্টিতে তারা অপরাধী। আমি একজন সিনিয়র আইনজীবী, দীর্ঘ ৩৪ বছরের ল-প্রফেশন, আমার দৃষ্টিতে তারা অপরাধ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমার কোন অভিযোগ নেই, কিন্তু অপরাধীরা কখনও পরিত্রাণ পেতে পারে না। প্রত্যেকের বিচার করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সম্প্রীতির বাংলাদেশ। এর একটি ধারাবাহিকতা আছে আমাদের দেশে। একসময় কট্টর ধর্মাবলম্বীরা ভীষণ রক্ষণশীল ছিলেন। সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে বঙ্গবন্ধু সবাইকে ভাষাভিত্তিক ঐক্যের জায়গায় নিয়ে আসতে চেষ্টা করলেন এবং সফল হলেন। আমরা সবাই বাঙালী হলাম। এরপরও সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ জিয়াউর রহমান আইনানুগভাবে চালু করেছিলেন। এরপর ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছিলেন এরশাদ। সেখান থেকে বাংলাদেশকে বের করে আনার চেষ্টা করেছেন শেখ হাসিনা। এজন্য তাকে ২১ বার হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। পাকিস্তানীরা চলে গেছে ঠিকই, কিন্তু তাদের প্রেতাত্মারা এখনও এ দেশে রয়ে গেছে।
আলোচনায় পদ্মা সেতু প্রকল্পে ষড়যন্ত্রে ড. মুহাম্মদ ইউনূস একা ছিলেন না বলে জানিয়েছেন সাংস্কৃতিক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ড. ইউনূস তিনি কি একাই ষড়যন্ত্র করেছিলেন ? তার সঙ্গে কি এ দেশের সংবাদপত্র ছিল না ? সংবাদপত্রের সম্পাদক কয়েকজন ছিল না তার সঙ্গে ? তারাও তার (ড. ইউনূস) সঙ্গে ছিল তো। তারাও ষড়যন্ত্র করেছে। তিনি আরও বলেন, ড. কামাল হোসেনের মেয়ে ছিল তার সঙ্গে। তার নেতৃত্বে গুলশানে, একটি জনপ্রিয় পত্রিকার সম্পাদক, ড. ইউনূস, তার প্রতিনিধি সভা করেছে পদ্মা সেতুর লোন কী করে বাতিল করা যায় বিশ্বব্যাংককে দিয়ে। অনেক প্রচারমাধ্যম ও বুদ্ধিজীবী পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল।
গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত শিক্ষকগণ দেশজুড়ে শিক্ষক সমাজের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বন্ধের দাবি জানান। এছাড়া পদ্মা সেতু নিয়ে সব ধরনের গুজব বন্ধের দাবি করা হয়। আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট অভিনেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠক সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সদস্য সচিব অধ্যাপক ডাঃ আল মাহতাব স্বপ্নীল। সেখানে বক্তব্য রাখেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান, মেজর জেনারেল (অব) মোহাম্মদ আলী শিকদার, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক সুভাষ সিংহ রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অসীম সরকার, অধ্যাপক তন্ময় পোদ্দার, জয়শ্রী কর জয়া প্রমুখ। এতে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. আতিউর রহমান।