জাতীয় পতাকা
জাতীয় দিবস ছাড়া সরকারী দফতরে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের কোন নিয়ম নেই বলে ‘ফতোয়া’ দিয়ে বিপাকে পড়েছেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী। স্থানীয় রাজনীতিক নেতারা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার এই ঘোষণাকে জাতীয় পতাকার অবমাননাকর বলে আখ্যায়িত করে তার শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তার ঘোষণায় অটল থেকে এই ধরনের দাবিকে আবেগ বলে উল্লেখ করেছেন। এর আগেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করাতে উপজেলা প্রশাসন থেকে সতর্ক করা হয়েছিল।
সর্বশেষ গত সোমবার অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় পতাকা উত্তোলন দিয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার ফতোয়ার ঘটনা ঘটে। ওইদিন সকালে পরিষদের সভাকক্ষে উপজেলা চেয়ারম্যান অনিল কুমার সরকারের সভাপতিত্বে সভা শুরু হয়। সভায় নরদাশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারওয়ার উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রেগুলোতে অফিস চলাকালীন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না বলে অভিযোগ করেন। তিনি তার ইউনিয়নের একটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কথা সভায় উল্লেখ করে এর প্রতিকার চান। এ সময় সেখানে উপস্থিত থাকা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ওই জনপ্রতিনিধির অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরকারী দফতরে জাতীয় পতাকা টাঙানোর কোন বিধান নেই বলে জানান। পতাকা টাঙাতে বাধ্য নয় বলে জানিয়ে বক্তব্য দেন তিনি। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ উপস্থিত সভার সদস্যরা দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেন এবং বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সভার সদস্যদের তোপের মুখে নিজের বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন।
এদিকে এই ঘটনাটি গোপন রাখা হয়। এরপরেও অনেক উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে দাফতরিক কার্যক্রম চলাকালীন পতাকা উত্তোলন করা হয়নি। বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর ক্ষমতাসীন দলের নেতা ছাড়াও বিভিন্ন দলের কর্মীরা এর প্রতিবাদ জানান। তারা ফেসবুকের নিজস্ব এ্যাকাউন্ট থেকে এর প্রতিকার চেয়ে স্ট্যাটাস দেন।
ভবানীগঞ্জ সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি নাদিরুজ্জামান বলেন, জাতীয় পতাকা বিষয়ে তিনি ফতোয়া (বক্তব্য) দিয়ে পরোক্ষভাবে অবমাননা করেছেন। এর প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি কর্মসূচী দেয়ার কথা ভাবছেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
নরদাশ ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার বলেন, তিনি কয়েকটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে পতাকা না টাঙানোর বিষয়টি নজরে আসার পর উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় তুলে ধরে সেখানেও ব্যর্থ হয়েছেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জাতীয় পতাকা টাঙানোর বিষয়টি তাচ্ছিল্যভাবে উপস্থাপন করেছেন। যা জাতীয় পতাকা অবমাননার শামিল।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অনিল কুমার সরকার জানান, তিনিও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার এমন জবাবে বিস্মিত। তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সভায় নিজের বক্তব্য প্রত্যাহার করে ভুল স্বীকার করেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী বলেন, সভায় তার দেয়া বক্তব্যে তিনি এখনও অটল রয়েছেন। জাতীয় দিবস ছাড়া সরকারী দফতরে পতাকা উত্তোলনের কোন বিধান নেই বলে তিনি জানিয়েছেন। সভায় এ সংক্রান্ত নিজের বক্তব্য প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে স্বীকার করেন। ফেসবুকে লেখালেখি ও স্থানীয়ভাবে প্রতিবাদের বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি এটাকে আবেগ বলে উল্লেখ করেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক সুফিয়ান জানান, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সভায় বক্তব্য প্রত্যাহার করেছেন। তবে সরকারী দফতরে কার্যক্রম চলাকালীন জাতীয় পতাকা টাঙানোর বিধান রয়েছে বলে জানান। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বক্তব্য থেকে ফিরে আসেননি বলে জানালে তিনি বলেন, সভার রেজুলেশন করে উর্ধতন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হবে।