ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৬ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সারাদেশের স্কুলে চলছে কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানো

প্রকাশিত: ০১:৫১, ২২ মার্চ ২০২২

সারাদেশের স্কুলে চলছে কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানো

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশজুড়ে শুরু হয়েছে ২৬ তম ‘জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ’। রাজধানীসহ দেশের সব জায়গার স্কুলগুলোতে চলছে কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানোর বিশেষ ক্যাম্পেন। এই ক্যাম্পেনের আওতায় ৬ দিনে অন্তত ৪ কোটি শিশুকে কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, রবিবার থেকে শুরু হওয়া এ কার্যক্রমের আওতায় দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের ৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও স্কুলবহির্ভূত, স্কুল থেকে ঝরে পড়া, পথশিশু, কর্মজীবী শিশুকে কৃমিনাশক ওষুধ বিনামূল্যে খাওয়ানো হচ্ছে। এ সব শিশুকে এক ডোজ কৃমিনাশক ওষুধ (মেবোজল বা ভারমক্স ৫০০ মিলিগ্রাম) ভরা পেটে খাওয়ানো হচ্ছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডাঃ সামিউল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কৃমি নির্মূলের লক্ষ্যে ৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশুদের এক ডোজ কৃমিনাশক ওষুধ বিনামূল্যে খাওয়ানো হবে। একই সঙ্গে কৃমির পুনঃসংক্রমণ রোধে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করা হবে। তিনি বলেন, শুধু ওষুধ খেলেই হবে না পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহারে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য শিক্ষা দেয়ার ফলে তা অভ্যাসে পরিণত হবে। শিশুর ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিচর্যার বিষয়ে সচেতন হবে। যা থেকে ভবিষ্যতে শিশুরা কৃমিসহ অন্য পরজীবীবাহিত রোগব্যাধি থেকেও পরিত্রাণ পাবে। এর আগে গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহের বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, এক সপ্তাহে প্রাথমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির মাধ্যমে পাঁচ থেকে ১১ বছর বয়সী সব শিশুকে এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির মাধ্যমে ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সী সব শিশুকে এক ডোজ কৃমিনাশক ওষুধ (মেবেন্ডাজল বা ভারমা ৫০০ মিলিগ্রাম) ভরা পেটে খাওয়ানো হবে। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সমীক্ষা অনুযায়ী ২০০৫ সালে বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ ছেলে মেয়ে কৃমি রোগাক্রান্ত ছিল, বর্তমানে যা ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। মন্ত্রী বলেন, আমরা যদি সব কিছু ভালভাবে মেনে চলি তাহলে কৃমি আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ২০০৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মাধ্যমে একটা সমীক্ষা হয়েছিল। সেখানে বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ ছেলে মেয়ে রোগাক্রান্ত ছিল। সেটা খুবই উদ্বেগজনক ছিল। পরবর্তীতে কৃমির ওষুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়। এখন পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ফলটা কেমন। ফলটি খুবই ভাল, আশাপূর্ণ। কৃমি আক্রান্ত রোগী সাত শতাংশের কাছাকাছি চলে এসেছে। আমরা মনে করি কৃমি প্রতিরোধে যেসব স্বাস্থ্যবিধি আছে সেগুলো মেনে চললে কৃমি আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা যাবে। এই কার্যক্রমটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এ কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৮ সালের পহেলা নবেম্বর থেকে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় গিয়ে সেখানে ছাত্রদের কৃমির ওষুধ খাওয়ানো হয়। স্কুলে খুদে ডাক্তার থাকে, অন্য অভিভাবকরা থাকেন, শিক্ষকরা থাকেন, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীরাও থাকেন। তাদের তত্ত্বাবধানে এই কৃমির ওষুধ ছেলেমেয়েদের খাওয়ানো হয়। ছেলেমেয়েদের জন্য কৃমির ওষুধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কৃমির ওষুধ খাওয়ানোর আগে আপনার ছেলে মেয়েদের পেট ভরে খাইয়ে আনবেন। ভরা পেটে কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে। তাহলে ছেলে মেয়েরা সুস্থ থাকবে, ভাল থাকবে। কৃমিতে আক্রান্ত হলে মানুষ শারীরিকভাবে ভালভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। তারা শারীরিকভাবে খর্বকায় হয়ে যায়। পুষ্টিহীনতায় ভোগে। আমাদের চেষ্টা করতে হবে ছেলেমেদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে রাখার। এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, ৫ থেকে ১৬ বছর বয়সে দুইটা পর্যায়ে প্রাইমারী এবং হাই স্কুল পর্যায়ে কৃমির ওষুধ খাওয়ানো হয়। আমরা ছোটবেলায় দেখেছি অনেক গ্রামগঞ্জে শিশুদের শরীর থেকে পেটের পরিধি অনেক বড় ছিল। এখন সেটা দেখা যায় না। এই পেটের পরিধি বড় হওয়ার অর্থ এই কৃমি তার শরীরের পুষ্টি ও শক্তির স্তরটা চুষে খেতো এবং অনেক ধরনের অসুখ হতো। এটা গ্রামাঞ্চলে বেশি হয়। বিশেষ করে মা-বাবারা সচেতন না থাকার কারণে। সচিব বলেন, ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রচারের কারণে গ্রামগঞ্জের অনেক মা-বাবা সচেতন হয়েছেন। সারাদেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে কৃমির ওষুধ বছরের সাধারণত দুই বার খাওয়ানো হয়ে থাকে। একজন স্বাভাবিক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের বছরে অন্তত দুইবার কৃমির বড়ি খাওয়া উচিত। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, কৃমির সংক্রমণ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের চেয়ে শিশুদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি। শূন্য থেকে ৪ বছর বয়সীদের মধ্যে কৃমির সংক্রমণের হার ৭ শতাংশ। ৫-১৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ৩২ শতাংশ, ১৫-২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ১৫ শতাংশ, ২৫-৪৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ৭ শতাংশ, ৪৫-৫৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ৫ শতাংশ এবং পঞ্চান্ন-উর্ধদের মধ্যে এ হার ৪ শতাংশ।
×