
ছবিঃ সংগৃহীত
লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে (LHR) লাগেজ লোডিংয়ের সময় কর্মীদের পড়ে যাওয়ার দুটি গুরুতর ঘটনার পর ব্রিটিশ এয়ারওয়েজকে (BA) £৩.২ মিলিয়ন জরিমানা করা হয়েছে। দুর্ঘটনাগুলোর কয়েক মাস আগেই নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল, কিন্তু যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় এই শাস্তি দেওয়া হয়।
দুটি পৃথক দুর্ঘটনায় ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের কর্মীরা বিমানে লাগেজ তোলার সময় উচ্চতা থেকে পড়ে গুরুতর আঘাত পান।
২০২২ সালের আগস্টে, ৫৪ বছর বয়সী ব্যাগেজ হ্যান্ডলার রবিন্দর তেজি একটি A320 বিমানে লাগেজ তোলার সময় একটি টেলিভেটরের অরক্ষিত ফাঁকা জায়গা দিয়ে ১.৫ মিটার নিচে পড়ে যান। এতে তার পাঁজরে ভাঙা ও মাথায় আঘাত লাগে।
এর সাত মাস পর, ২০২৩ সালের মার্চে, ৪৩ বছর বয়সী শাহজাহান মালিক তুষারপূর্ণ আবহাওয়ায় একটি TLD এলিভেটর থেকে তিন মিটার নিচে পড়ে যান। তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, একাধিক হাড় ভাঙা ও মুখে গুরুতর আঘাত হয়।
এর আগে ২০২২ সালের মার্চ মাসে একটি স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিরীক্ষায় ব্রিটিশ এয়ারওয়েজকে স্পষ্ট করে সতর্ক করা হয়েছিল যে লাগেজ লোডিং প্ল্যাটফর্মে গার্ড রেইল অনুপযুক্ত, ফলে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
ওই নিরীক্ষায় গার্ড রেইলের ফাঁকফোকরগুলো চিহ্নিত করা হলেও, BA সময়মতো ব্যবস্থা নেয়নি।
সাউথওয়ার্ক ক্রাউন কোর্টে বিচারক ব্রেন্ডান ফিনুকেন KC বলেন, গার্ড রেইল বাড়ানো সহজসাধ্য ছিল এবং তা ঘটলে এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। তিনি ঘটনাগুলোকে বিমান শিল্পের জন্য একটি "রেড ওয়ার্নিং লাইট" হিসেবে উল্লেখ করেন।
দুটি ঘটনায় যথাক্রমে £১.৩৩৩ মিলিয়ন এবং £১.৮৭৫ মিলিয়ন জরিমানা ধার্য করে আদালত, যার মোট পরিমাণ দাঁড়ায় £৩.২ মিলিয়ন। সঙ্গে আরও £২০,৯৩৫ মামলার খরচ এবং £১২০ ভিকটিম সারচার্জ ধার্য করা হয়।
BA স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা লঙ্ঘনের দুটি অভিযোগ স্বীকার করেছে। স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নির্বাহী সংস্থা (HSE)-এর তদন্তেই এই মামলা গড়ায়।
প্রসিকিউটর অ্যান্ড্রু ম্যাগি জানান, ওই যন্ত্রপাতি উপযুক্ত গার্ডিং ছাড়া ছিল, যা বিশেষ করে ভেজা ও তুষারপূর্ণ অবস্থায় গুরুতর বিপদ তৈরি করে। HSE-এর আইনজীবী রেবেকা শোয়ার্টজ বলেন, ভুক্তভোগীরা "বেঁচে যাওয়াটাই সৌভাগ্যের বিষয়"।
BA-এর পক্ষ থেকে জেমস লিওনার্ড KC দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। তবে তিনি জানান, মালিকের পড়ার ঠিক আগে করা একটি নিরাপত্তা পরিদর্শনে যন্ত্রপাতিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি, যা ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহৃত প্রচলিত সেটআপ ছিল।
তবু আদালত মনে করে, ২০২২ সালের সতর্কতা উপেক্ষা করায় BA দায় এড়াতে পারে না।
তেজি ও মালিক দুজনেই দুর্ঘটনার মানসিক প্রভাব ভোগ করেছেন এবং এখন অন্য দায়িত্বে ফেরত এসেছেন। তেজি বলেন, তিনি মাথায় আঘাত পেয়ে নিজেই রিকভারি পজিশনে যান। মালিককে রক্তক্ষরণজনিত কারণে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আদালত আরও জানায়, আগেও তিনজন BA কর্মী একই যন্ত্রপাতিতে পিছলে পড়েছেন, যদিও ততটা গুরুতর হয়নি - যা চলমান ঝুঁকির প্রমাণ।
এই ঘটনাগুলো এভিয়েশন খাতে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জকেই সামনে এনে দিয়েছে, যেখানে সময়চাপ আর প্রতিকূল পরিবেশে কর্মীদের ঝুঁকি নিতে হয়।
বিচারক ফিনুকেন জোর দিয়ে বলেন, বৈশ্বিক এয়ারলাইন ও বিমানবন্দর অপারেটরদের উচিত নিরাপত্তা প্রোটোকল অগ্রাধিকার দেওয়া।
BA জানায়, তারা HSE-এর সঙ্গে যৌথভাবে এখন নিয়মাবলি পর্যালোচনা করেছে এবং পরিবর্তন এনেছে, তবে এই মামলাটি প্রমাণ করে যে নিরাপত্তা নিরীক্ষার সুপারিশগুলো দ্রুত কার্যকর করাই জরুরি।
মুমু