ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

বসন্ত দিনে ভালবাসায় রঙিন

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২

বসন্ত দিনে ভালবাসায় রঙিন

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ ষড়ঋতুর এই দেশে কিছু কিছু দিন হয়ে ওঠে বড্ড রঙিন। আচার-আনুষ্ঠানিকতায় ভেসে ওঠে সুন্দরের প্রতিচ্ছবি। তেমনই একদিন ছিল সোমবার। মহামারীর বৈরীতাকে পাশ কাটিয়ে এদিন প্রাণের শহরে ভর করেছিল অদ্ভুত এক লাবণ্য। নগর সভ্যতায় বনানী হারিয়ে গেলেও ধুলোমাখা কিছু পথ ঢেকে গিয়েছিল শিমুল, পলাশ কিংবা কৃষ্ণচূড়া ফুলে। যান্ত্রিক শহরেও শোনা গেছে কোকিলের কুহুতাল। এভাবে বহু বর্ণের আবির মেখে হাজির হলো ফাগুন। নগরজুড়ে বয়ে গেল রংয়ের প্লাবন। নাগরিকের শরীর থেকে মন-সবটুকু জুড়েছিল রঙিলা আস্তরণ। তরুণ-তরুণ থেকে মধ্যবয়সী কিংবা শিশুরাও শামিল হলো বসন্তের প্রথমদিন পয়লা ফাগুনের সেই উৎসবে। প্রকৃতির সজীবতা ফিরে পাওয়ার দিনে শহরবাসীর মনেপ্রাণে বয়ে গেছে শিহরণ। রমনার ঝরা পাতার মর্মরধ্বনি জানান দিয়েছে ঋতুচক্রে ঘটেছে পরিবর্তন। কংক্রিটের বৃত্তবন্দী ঢাকা ঝলমল করেছে ঋতুরাজের আগমনী বারতায়। শহীদ মিনারের উর্ধগগনে উঁকি দেয়া রক্তিম পলাশ বলেছে- আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে...। কবির কথা ধার করে কেউবা বলেছে- নীরব কেন-ফাল্গুন যে এসেছে ধরায়/বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায় ? দখিনা সমীর তার গন্ধে হয়েছে কি অধীর আকুল ? দখিনা বাতাসের সেই আকুলতার সঙ্গে এক সূত্রে মিলে গেছে ভালবাসার রং। পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছে প্রেমিক-প্রেমিকার দল। কোলাহলের এই শহরেও কেটেছে তাদের দূরন্ত সময়। শরীরে বসন্তের বাতাস মেখে হয়েছে ভাব বিনিময়। পুরনো সম্পর্কটা আরও বেশি জোরালো। কারও ক্ষেত্রে নতুন সম্পর্কটি পেয়েছে পরিপূর্ণতা। রিক্সায় ঘুরতে ঘুরতে কিংবা রেস্তরাঁয় বসে চলেছে মধুর আলাপচারিতা। কেউবা শাহবাগের ফুলের দোকানে এসে লাল গোলাপটি কিনে গুঁজে দিয়েছেন প্রেমিকার খোপায়। এভাবেই বসন্ত দিনে ভালবাসার রঙে সজীব হয়েছিল শহর ঢাকা। মহামারীর উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে এবার রাজধানীর নানা প্রান্তে অনুষ্ঠিত হয়নি বসন্তের আগমনী উৎসব। তাই বলে ম্লান হয়নি বসন্ত বরণের আনুষ্ঠানিকতা। প্রকৃতিপ্রেমী নাগরিকের মনে সহজাতভাবেই ঢুঁ মেরেছে ঋতুরাজের আগমনী বারতা। আর যারা ঋতুভিত্তিক আনুষ্ঠানিকতা পছন্দ করেন তাদের জন্য অজ¯্র্র রংয়ে রঙিন রূপে ধরা দিয়েছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চ। এখানে সাত-সকালে গানের সুরে বয়ে গেছে ফাগুনের উতাল হাওয়া। কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে হয়েছে বসন্ত বরণ। নৃত্যশিল্পীর নাচের নান্দনিকতায় প্রিয় ঋতুকে বরণ করা হয়েছে। অন্যদিকে যারা ফাগুনের হাওয়ায় আরও বেশি ¯িœগ্ধতা পেয়েছে বিশ্ব ভালবাসা দিবস কিংবা ইতিহাসের পাতায় লেখা সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে। সব মিলিয়ে সোমবার যেন একে অপরের হাত ধরাধরি করে পথে নেমেছিল বসন্ত আর ভালবাসা দিবস। এদিন ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে নর-নারী, শিশু থেকে শুরু করে তরুণ, কিশোর, যুবা, মধ্যবয়সী কিংবা বয়োজ্যেষ্ঠ। শূন্যে উড়েছে লাল, সবুজসহ রকমারি রঙের আবির। সম্প্রীতির বন্ধনে একে অপরের গাল রাঙিয়েছে বর্ণবহুল আবিরের ছোঁয়ায়। কোমল হাতের কব্জিগুলো ছুঁয়েছে ফুলে ফুলে গাঁথা রাখীবন্ধনী। বসনে উঠেছিল বাসন্তী, লাল কিংবা হলদেসহ নানা রঙের শাড়ি। তরুণীর খোঁপায় শোভা পেয়েছে পুষ্পমালা। কারও বা কপালে চেপে বসেছিল গোলাপ, গাঁদায় গড়া টায়রা। পুরুষের পাঞ্জাবি বা ফতুয়ায় দেখা মিলেছে বাসন্তীসহ নানা রঙের ছড়াছড়ি। এভাবেই বহু বর্ণে ঋতুরাজ বলেছে, এই শহরজুড়ে আজ এসেছে বসন্ত। বসন্ত উদ্যাপন ॥ এদিন খুব সকালে বসন্তের কলরব ভেসে বেড়িয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চে। এখানে ‘এসো মিলি প্রাণের উৎসবে’ স্লোগানে অনুষ্ঠিত হয়েছে বসন্ত উৎসব। জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্্যাপন পরিষদ আয়োজিত বসন্ত বরণের সেই প্রভাতী আয়োজনে শামিল হয়েছিল নানা বয়সী মানুষ। নাচ-গান ও কবিতার সমন্বিত পরিবেশনায় সজ্জিত ছিল এ আয়োজনে। এসরাজের সুরে এ অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। সম্মেলকভাবে পরিবেশনাটি উপস্থাপন করেন বেঙ্গল মিউজিকের শিল্পীরা। এরপর বসন্তের আবাহন পাঠ করেন বাচিক শিল্পী মোঃ আহ্্কাম উল্লাহ্্। ফাল্গুন আর ভালবাসার মিশ্রণে আবৃত্তি করেন আরেক খ্যাতিমান আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও একক কণ্ঠে আবৃত্তি পরিবেশন করেন নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলী। সম্মেলক নৃত্য পরিবেশন করে স্বপ্নবিকাশ কলা কেন্দ্র। সকাল সোয়া সাতটায় শুরু হওয়া আয়োজনটি ততক্ষণে পরিপূর্ণতা পেয়েছে বসন্ত এবং ভালবাসা দিবস উদ্যাপনে শামিল হওয়া মানুষের আগমনে। অনুষ্ঠানে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শামা রহমান, মহাদেব ঘোষ, অনিমা মুক্তি গমেজ, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি, মাহমুদুল হাসান, ফেরদৌসি কাকলি, নুসরাত বিনতে নুর, নবনীতা জাইদ চৌধুরী, সঞ্জয় কবিরাজ ও এস.এম মেজবা। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন সুরসপ্তক, সত্যেন সেনশিল্পীগোষ্ঠী ও সুরবিহার সংগঠনের শিশু শিল্পীরা। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন সাধনা সংস্কৃতি ম-ল, নৃত্যম, ধ্রুপদ কলা কেন্দ্র, ভাবনা, ধৃতি নর্তনালয়, স্পন্দন, নৃত্যাক্ষ, কত্থক, ঢাক নৃত্য, নৃক্কন পারফরমিং আর্ট, নবচেতনা, মুদ্রা ক্ল্যাসিক্যাল ডান্স, পুষ্পাঞ্জলিকলা কেন্দ্রের শিল্পীরা। এছাড়াও পরিবেশিত হয় দুটি দ্বৈত নৃত্য। এ অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাঝে অনুষ্ঠিত হয় বসন্ত কথন পর্ব। এই পর্বে উদযাপন পরিষদের সভাপতি স্থপতি শফি উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ বছর করোনা কালের বছর। তবু বসন্ত তার কাল নিয়মে চলে এসেছে। আমরাও সকলে এই বসন্ত পালন করে সেই করোনার যাতনা দূর করতে চাই। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট বলেন, আমরা সবাইকে নিয়ে বসন্তের অবগাহনে মেতে উঠতে চাই। বসন্তের যে রঙের ছটা, তা সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে যাক, বর্ণিল যে আনন্দ, সেটিই আমাদের কাম্য। সহ-সভাপতি কাজল দেবনাথ বলেন, আমরা বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত ভাগ্যবান। পৃথিবীর কোথাও কিন্তু ষড়ঋতু নেই। আর এই ছয় ঋতুর মধ্যে বসন্ত হচ্ছে ঋতুর রাজা। তাই তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, প্রকৃতি আমাদের আসল জায়গা। আমাদের যে অর্জন তার সবকিছুই প্রকৃতির কাছ থেকে। আসুন প্রকৃতির মধ্যে বিলিয়ে দেই নিজেদের। বসন্ত কথন শেষে শুরু হয় আবির মাখার পর্ব। তারপর একে একে মঞ্চে উঠে আসে বসন্তের গান, নৃত্য। বাদ পড়েনি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ভালবাসা দিবসের উদ্্যাপন ॥ ঝড়-বৃষ্টি পেরিয়ে দুর্ঘটনা এড়িয়ে তোমার কাছে আসা/চাওয়া শুধু একটাইÑএকটু ভালবাসা ...। সোমবার এমন তীব্র আকুলতায় ভেসেছেন অনেকেই। সেই নজির রেখে বসন্ত দিনের উতলা বাতাসমাখা ভরদুপুরে পরস্পরের হাতটি ধরে হাঁটছিলেন দুজনে। ফেসবুকের পরিচয় সূত্র ধরে প্রেমের প্রগাঢ় আহ্বানে নারায়ণগঞ্জের ছেলেটি এসেছিল ঢাকার মেয়েটির কাছে। রমনার সবুজ ঘাসে পা ডুবিয়ে চলছিল তাদের ভাব-বিনিময়। কিছুক্ষণ পরপর পরস্পরের মধ্যে হচ্ছিল চোখাচোখি। সে চোখের ভাষায় ছিল একে অপরের মনকে ছুঁয়ে যাওয়ার আহ্বান। মুখে ছিল প্রণয়ের সংলাপ। সুন্দরতম সেই টেনে নিয়ে যায় এই প্রেমিক-প্রেমিকার সম্মুখে। পরিচয়টি পেশ করে জানতে চাই তাদের প্রেমের কথা। সদ্য প্রেমে পড়া এই জুটি পুরো নামটি না বলে জানিয়ে দেন ডাকনামটি। চঞ্চল ও পারমিতা নামের প্রেমিকযুগল বলে ওঠে, এই তো বছরখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আমাদের পরিচয়। শুরুর দিকে সেই অন্তর্জালেই একটু একটু করে জেনেছি একে অপরকে। এরপর মুঠোফোনের কথপোকথনে ধীরে ধীরে বেড়েছে পরস্পরের প্রতি ভালো লাগা। একপর্যায়ে ভালো লাগা রূপান্তরিত হয়েছে ভালবাসায়। আজ প্রেম নিবেদনের বিশেষ দিনে মিলিত হলাম একান্তে। বলে ফেললাম ফোনে বলতে না পারা জমে থাকা মনের সবটুকু কথা। এখন দুজন মিলে প্রেমের মাঝে জীবনের পূর্ণতা খোঁজার চেষ্টা করছি। ভবিষ্যত জীবনসঙ্গীর ভালো লাগা ও মন্দ লাগার বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করছি। ঘটছে আমাদের দুটি হৃদয়ের সবটুকু প্রকাশ। সবকিছু মিলে মনে হচ্ছেÑপ্রেম একটি শিল্প, একটি দর্শন এবং বেঁচে থাকার প্রধান আকর্ষণ। ভালবাসা দিবসে রাজধানীর শাহবাগের পুষ্প বিতানগুলোয় ছিল প্রেমরসিকদের জমজমাট আনাগোনা। ফুলটি কিনে প্রিয়জনকে তুলে দিয়ে একে অপরকে জানিয়েছেন শুভেচ্ছা। বসন্তের দোলা লাগা ফাগুনের রংমাখা পোশাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে দেখা মিলেছে কপোত-কপোতীদের। অধিকাংশ মেয়ের সাজসজ্জায় লালরঙা শাড়ির সঙ্গে খোপায় জুড়ে গেছে রকমারি ফুলের মালা। কারও বা মাথায় চড়ে বসেছিল নানা রঙের ফুলে গড়া টায়রা। এমন বাহারি পোশাক আর বসন্ত বাতাসের ছোয়া লাগা উৎফুল্ল মননে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার চারপাশের চওড়া সড়কের পাশে গল্প করে কেটেছে অসংখ্য প্রেমিক-প্রেমিকার আনন্দময় সময়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা রমনা পার্কে সময় কাটিয়েও ঘটেছে প্রেমের উদ্্যাপন।
×

শীর্ষ সংবাদ:

যেই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে: আমীর খসরু
জামায়াত নেতারা রাজাকার হলে পাকিস্তানে গাড়ি বাড়ি থাকতো : শামীম সাঈদী
এনসিপির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা নেই- উমামা ফাতেমা
‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটকদের অধিকাংশই ভারতীয় মুসলমান
ইয়েমেনে হামলা চালিয়েই সাগরে ডুবে গেল মার্কিন সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান
জামিন পেলেননা তারেক রহমানের খালাতো ভাই তুহিন
লন্ডনে আজ আর্সেনাল পিএসজি মহারণ
১৭ অভিনয়শিল্পীর নামে মামলা, তালিকায় আছেন নুসরাত ফারিয়া-অপু বিশ্বাস-ভাবনাসহ অনেকেই
১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ডের ১১৯তম ড্র অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল
স্বর্ণের দাম, রেকর্ড উচ্চতা থেকে পতনের পথে
কুমিল্লায় পুলিশ-সেনাবাহিনীর চাকরির নামে প্রতারণা: দালালসহ ১৩ জন গ্রেফতার
১২ বছর বয়সী ছেলে শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেফতার