ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

গত ছয় দশকে দেখা যায়নি এমন গ্রীষ্ম

প্রকাশিত: ২১:৩০, ৩০ মে ২০২০

গত ছয় দশকে দেখা যায়নি এমন গ্রীষ্ম

মোরসালিন মিজান ॥ গ্রীষ্ম মানেই গরমাগরম অবস্থা। সকাল হলো কী হলো না, চোখ রাঙাতে শুরু করে সূর্য। প্রখর রোদে টেকা মুশকিল হয়ে যায়। শরীর অনবরত ঘামে। অল্পতেই ক্লান্তিবোধ হয়। ত্বকে জ্বালা করে। রুক্ষ শুষ্ক গ্রীষ্ম তাই অনেকের পছন্দ নয়। বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ ব্যস্ত রাজধানী শহর এ সময় হিট ইঞ্জিনে পরিণত হয়। দুর্বিসহ হয়ে পড়ে প্রতিদিনের জীবন। তবে এবারের গ্রীষ্মের ছবিটা আলাদা। ষড়ঋতুর প্রথমটি এবার চরিত্র যথেষ্ট পাল্টে নিয়েছে। বিগত বছরগুলোর মতো গরম অনুভূত হচ্ছে না। অসহনীয় অবস্থায় পড়তে হচ্ছে না নগরবাসীকে। সবাই এ পরিবর্তন অনুভব করতে পারবেন এমন নয়। তবে একটু খেয়াল করলে সেটি ঠিক বোঝা যাবে। আর আবহাওয়াবিদরা যে তথ্য দিচ্ছেন তাতে তো চমকিত না হয়ে পারা যায় না। বলা হচ্ছে, সবচেয়ে কম তাপমাত্রা বিরাজ করছে এ বছর। গত ছয় দশকে দেখা যায়নি এমন গ্রীষ্ম। দীর্ঘ সময় ধরে চলা সাধারণ ছুটি, অঘোষিত লকডাউনের সুফল বলা হচ্ছে এটিকে। করোনাভাইরাসের অতিরিক্ত সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। শেষ হওয়ার কথা ছিল ৪ এপ্রিল। তা হয়নি। বরং সাত দফা সময় বাড়ানো হয়েছে। আগামীকাল ৩১ মে সাধারণ ছুটি শেষ হচ্ছে। তার আগে পর্যন্ত সময়টা মোটামুটি ঘরে বসেই কাটিয়েছেন রাজধানীবাসী। সরকারী-বেসরকারী অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব বন্ধ ছিল। মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা ভবনের পরতে পরতে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র। কোনটিই চলেনি। ঢাকার রাস্তায় ছিল না গণপরিবহন। ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বেশিরভাগ সময়ই ছিল হাতেগোনা। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এসব কারণে গ্রীষ্মে কমেছে তাপদাহ। মাঝে মধ্যে গরম বা ভ্যাপসা গরম পড়লেও, আগের সেই উষ্ণতা অনুভূত হচ্ছে না। আবহাওয়া অধিদফতরের দেয়া তথ্য মতে, ১৯৫৪ সাল থেকে যত গ্রীষ্ম এসেছে সবগুলোর তথ্য সংগ্রহ করে দেখা গেছে, এবারের গ্রীষ্মের তাপমাত্রা কম। সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে ঢাকার তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রীর বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে তার চেয়ে অনেক কম। শুক্রবারের কথাই ধরা যাক, এদিন ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বিগত বছরগুলোতে গ্রীষ্মকালে স্বাভাবিকের চেয়ে তাপমাত্রা ১ থেকে ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস উপরে উঠতে দেখা গেছে। এবার তা ১ থেকে ৩ ডিগ্রী। ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়ার ধরন এবং তাপপ্রবাহের গতি প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, একটু সচেতন হলে এবং কিছু পদক্ষেপ নেয়া গেলে গ্রীষ্মের তাপদাহ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তারা বলছেন, স্বাভাবিক সময়ে ঢাকার রাস্তায় অসংখ্য যানবাহন চলাচল করে। যেখানে সেখানে ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলা হয়েছে, সেগুলো দিন রাত চলে। এসির ব্যবহারও তুঙ্গে থাকে। ফলে ঢাকায় প্রচুর পরিমাণে গ্রীনহাউস গ্যাস উৎপন্ন হয়। এর প্রভাব পড়ে প্রকৃতিতে। গ্রীষ্মের গরম আরও বাড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখে গ্রীনহাউস গ্যাস। বহুদিন ধরে অঘোষিত লকডাউন চলায় সেটি হয়নি। গ্রীষ্ম তাই অন্যান্য বছরের তুলনায় কম উষ্ণ। গ্রীষ্মে এবার বৃষ্টিও হচ্ছে বেশ। গত কয়েকদিন ধরে তো টানা বর্ষণ। ঝড়ো হাওয়া। ফলে সূর্য আর তেমন উঁকি দেয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। চোখ রাঙাবে কখন? তাপদাহ এ কারণেও কম বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। কিন্তু আগামী রবিবার সাধারণ ছুটি শেষে সীমিত আকারে সব কিছু খুলে দেয়া হচ্ছে। এরই মাঝে ঢাকার রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বেড়েছে। নামছে গণপরিহনও। বিভিন্ন জেলা থেকে ফিরতে শুরু করেছে মানুষজন। ‘সীমিত পরিসর’ কতটা সীমিত থাকবে? এটা এখন বড় প্রশ্ন। এ অবস্থায় করণীয় কী? স্থিতাবস্থা বজায় রাখা সম্ভব হবে? নাকি গ্রীষ্ম ফিরে যাবে চেনা রূপে? উত্তরে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার নির্বাহী সহ-সভাপতি ডাঃ আবদুল মতিন বলছেন, আমাদের একটা বড় শিক্ষা তো হলো। এখন যদি আত্মোপলব্ধি ঘটে এবং সেভাবে কাজ করি তাহলে পরিবেশ প্রকৃতি ভাল থাকবে। প্রকৃতি পরিবেশ ভাল থাকলে গ্রীষ্মের তাপদাহ আর নাও বাড়তে পারে। তিনি বলেন, এ জন্য গ্রীনহাউস গ্যাস উৎপাদন কমাতে হবে। বায়ুদূষণ করা চলবে না। নির্মল হাওয়া গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। গাছ লাগাতে হবে। এসির ব্যবহার, গাড়ির চাপ কমাতে হবে। কল কারখানা শহরের বাইরে নিয়ে যেতে হবে। ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে হবে। প্রকৃতি বান্ধব কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা গেলে সামগ্রিক আবহাওয়া ও জলবায়ুতে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে। আর তা হলে গ্রীষ্ম সহনীয় থাকবে বলেই মনে করেন তিনি।
×