ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

প্রজন্ম জানবে প্রকৃত ইতিহাস, জাতির পিতার অবদান

প্রকাশিত: ১০:১৬, ১১ জানুয়ারি ২০২০

প্রজন্ম জানবে প্রকৃত  ইতিহাস, জাতির  পিতার অবদান

হারেজুজ্জামান হারেজ ॥ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসর দালাল ও রাজাকাররা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তাদের পরাজয় দালিলিকভাবে স্বীকার করে নিলেও এক মুহূর্তের জন্যেও তারা থেমে থাকেনি, বন্ধ করেনি তাদের প্রাসাদ ষড়যন্ত্র। বরং তারা প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। আর নানাভাবে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে থাকে বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন মুখোশধারীদের। এদিকে, দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া এই দেশ পুনর্গঠনে ঠিকঠাকমতো কার্যক্রম শুরু করতে না করতেই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট কালরাতে রাজধানীর ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাসভবনে একাত্তরের পরাজিত শক্তির মদদপুষ্ট একটি গোষ্ঠী সপরিবারে হত্যা করে স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এরপর শুরু হয় তাদের আরেক ষড়যন্ত্র। এবার তারা এ দেশের ইতিহাসের চাকা উল্টো দিকে ঘোরানোর সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে থাকে। শুধু তাই নয়, সেই ঘাতকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এবং তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনেতিহাস ঘিরে নানান বানোয়াট কল্প-কাহিনী রচনা আর রটনা শুরু করে। এমনকি তারা খোদ বঙ্গবন্ধুকে নানাভাবে অপদস্ত করবার জন্য নানাভাবে ন্যাক্কারজনক অপচেষ্টা চালাতে থাকে। একইসঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করবার নেতিবাচক মিশনও অব্যাহত রাখে তারা। এদিকে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিগত ১১ বছর ধরে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে। তাই বর্তমান সরকার দেশব্যাপী উদ্যোগ নিয়েছে স্বাধীনতা বিরোধীদের তৈরি বিকৃত ইতিহাস ঝেড়ে ফেলে বর্তমান ও আগামী প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানানোর। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার সেই উদ্যোগ বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে সফলতার মুখ দেখতে শুরু করেছে। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজেও স্থাপন করা হয়েছে ’বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বুক কর্নার’। উপজেলার ৯৮ প্রাথমিক ও অর্ধশত মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ১১ কলেজে ইতোমধ্যে ৮০ ভাগ প্রতিষ্ঠানে ওই দুটি ‘বুক কর্নার’ স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। স্থাপিত বুক কর্নারে মিলছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাঁকে নিয়ে রচিত বই-পুস্তকের সম্ভার। সেইসঙ্গে মিলছে মহান মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঘটনাবলী নিয়ে রচিত প্রকৃত ইতিহাসসমৃদ্ধ বই-পুস্তক। এই দুই বুক কর্নার থেকে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জানছে বঙ্গবন্ধুর জীবনী ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য। সম্প্রতি আদমদীঘি উপজেলার বিভিন্ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি স্কুলে বঙ্গবন্ধু বুক কর্নার ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। সরকারী নির্দেশনার আলোকে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা নিজস্ব অর্থায়নে এই দুটি কর্নার স্থাপন করেছেন। এস,এম,আই একাডেমি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিসেস খোরশেদা খানম জানান, কর্নারগুলো থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও শিক্ষার্থীরা জানতে পারছে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ’৬৬ সালের ৬ দফা, এবং ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস। আদমদীঘি মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, শালগ্রাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সান্তাহার হার্ভে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সান্তাহার দাখিল মাদ্রাসা এবং সান্তাহার মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা জানায়, কর্ণার বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পেরে আমরা গর্বিত। এখান থেকে সহজেই বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা সংগ্রাম তথা মুক্তিযুদ্ধের নানা বই পড়তে পারছেন তারা। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুল ইসলাম দেওয়ান এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুব হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানাতেই এই বুক কর্নার প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। উপজেলার ৯৮ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ইতোমধ্যে ৯০টিতে স্থাপন এবং শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
×