ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মরণ নেশা ইয়াবা পাচার বন্ধেও সহযোগিতা নেই মিয়ানমারের

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২৭ জুন ২০১৮

মরণ নেশা ইয়াবা পাচার বন্ধেও সহযোগিতা নেই মিয়ানমারের

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ মিয়ানমার সরকারের অসহযোগিতার কারণে সে দেশ থেকে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গা ইস্যুর সমাধানের পথ তিরোহিত হয়ে আছে, তেমনি ইয়াবা চোরাচালান নিয়ন্ত্রণেও কোন সহযোগিতা মিলছে না। এই দুই ইস্যুতে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। দফায় দফায় বৈঠকের মাধ্যমে আহ্বান জানানো হলেও মিয়ানমার সরকার এ দুই ইস্যুতে কোন কর্ণপাত করছে না। বিশ্লেষকদের মতে, ওরা গণহত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘর জ্বালাও পোড়াও এবং এর পাশাপাশি গণহত্যা চালিয়ে রোহিঙ্গাদের দেশছাড়া করেছে। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়স্থল এখন বাংলাদেশ। এ ইস্যুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভয়ানক মাদকের আগ্রাসনের বিষয়টি। সে দেশে উৎপাদিত মরণ নেশার মাদক ইয়াবার চালান বাংলাদেশে পাচারের সুযোগ অবাধভাবে প্রসারিত রেখেছে। যা এদেশের যুব সমাজকে প্রকারান্তরে ধংসের মুখে নিপতিত করেছে। সে দেশের মাদক ইয়াবার চোরাচালান ও এর যে হিংস্র ছোবল এদেশে চলছে তা রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা ইস্যুর চেয়ে কোন অংশে কম নয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, মিয়ানমার রোহিঙ্গা ইস্যুতে যেমন কোন মহলের কর্ণপাত করেনি, তেমনি তাদের দেশে উৎপাদিত ইয়াবার চোরাচালান রোধ নিয়েও কোন ব্যবস্থা যে নিচ্ছে না তা স্পষ্ট প্রতীয়মান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মঙ্গলবার ঢাকায় স্বীকার করেছেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে মিয়ানমারের কোন সহযোগিতা মিলছে না। যে কারণে সে দেশের সীমান্ত গলিয়ে মাদক নিয়ে আসছে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতরা। এদিকে, রোহিঙ্গা নির্যাতন ইস্যুতে মিয়ানমার সরকার সে দেশের এক জেনারেলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিয়ানমারের ৭ সেনার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সারাবিশ্ব সোচ্চার হওয়ার কারণে এ নিয়ে আগামীতে আরও নানামুখী ব্যবস্থা গৃহীত হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু মাদক ইয়াবা নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে মিয়ানমার পক্ষে ইতোমধ্যে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত এবং এর উৎপাদন কারখানাগুলো বন্ধের আহ্বান জানানো হলেও এ নিয়ে মিয়ানমার সরকার এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে এগিয়ে আসেনি। এদিকে, সরকার ইতোমধ্যে ইয়াবাসহ মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করে তা চলমান রেখেছে। কিন্তু মিয়ানমার পক্ষ সে দেশে উৎপাদিত ইয়াবার চালান আসার পথ বন্ধ করার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ না নিলে সুফল প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিষয়টি প্রশ্নবোধক হয়ে দাঁড়ায়। অথচ, বন্ধুসলভ দেশ হিসেবে মাদক ইয়াবার চালান যাতে বাংলাদেশে চোরাপথে আসার সুযোগ না পায় সেক্ষেত্রে মিয়ানমার সরকারের ভূমিকা অপরিসীম। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, যুগের পর যুগ সেনা শাসনে থেকে এবং বর্তমানে পরোক্ষভাবে সেনা ইঙ্গিতে চলতে গিয়ে মিয়ানমার সরকার সারাবিশ্বে সমালোচিত এবং রীতিমত নিন্দিত। সেটা তাদের একান্ত নিজস্ব বিষয়। কিন্তু তাদের অপশাসনের জের হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা ভারে এদেশ যেন জর্জরিত তেমনি মাদক ইয়াবার দংশনে ছারখার হয়ে যাচ্ছে এ দেশের যুব সমাজ ও নানা শ্রেণী পেশার মানুষ। দুদেশের সীমান্ত রেখা নিয়েও মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সকল রীতিনীতির তোয়াক্কা করছে না। মানা হচ্ছে না জিরো লাইন নিয়ে কোন নিয়ম কানুন। সীমান্তের ওপারে সে দেশের জিরো লাইন জুড়ে স্থলমাইন পোঁতার বেশকিছু স্পটে বিস্ফোরণ ঘটে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। অনাহূতভাবে শূন্যরেখা সংলগ্ন এলাকায় বাঙ্কার খনন করে সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে মিয়ানমার সেনাবাহিনী কি জানান দিতে চায় এমন প্রশ্নেরও কমতি নেই।
×