ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত

সুরসুধার সঙ্গে বহুমুখী আনন্দ, জাগে প্রাণ

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

সুরসুধার সঙ্গে বহুমুখী আনন্দ, জাগে প্রাণ

মনোয়ার হোসেন ॥ শহর ঢাকায় বইছে সুরের খেলা। সেই খেলায় জেগেছে অগণন সংস্কৃতিপ্রেমীর প্রাণ। কণ্ঠ ও যন্ত্রসঙ্গীতের সঙ্গে নান্দনিক নৃত্যের মনোমুগ্ধতায় শত বিড়ম্বনার নগরীও হয়েছে রূপময়। রাজধানীতে এখন চলছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের এক মহাযজ্ঞ। সে আসরে ধ্রুপদী সঙ্গীতের মোহময়তায় শহরবাসী খুঁজে নিচ্ছে আনন্দের উৎস। শাস্ত্রীয় আঙ্গিকের নাচের মুদ্রায়, সুরের আবাহনে কিংবা যন্ত্রসঙ্গীতের সুরতরঙ্গে মিটিয়ে নিচ্ছে মনের খোরাক। সঙ্গীতের সাতটি স্বর উপলব্ধির পাশাপাশি বহুমাত্রিক আনন্দের সঞ্চার করেছে এ উৎসব। গান শুনতে শুনতে চলছে নির্মল আড্ডা, বন্ধু বা স্বজনরা মিলে ফুড কোর্টে চলছে জমিয়ে আহার, রকমারি বাদ্যযন্ত্রের প্রদর্শনী দেখা, ব্যানারে মেলে ধরা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের দিকপালদের ছবি বা নিসর্গময় আগামীর ঢাকার রূপরেখা অবলোকন যেখানে বুড়িগঙ্গার দুই তীরকে কেন্দ্র করে পুরান ও নতুন ঢাকার আধুনিকতা। আর এভাবেই সুরসুধার সঙ্গে বহুমুখী আনন্দের উৎসে পরিণত হয়েছে ষষ্ঠতম বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসব। বৃহস্পতিবার ছিল এ উৎসবের তৃতীয় রজনী। এদিনের পরিবেশনার সূচনা হয় সেতারের সুরে। বেজেছে এ উৎসবের নিয়মিত শ্রোতাদের ভিন্ন স্বাদ দেয়া যন্ত্রসঙ্গীত ঘাটম ও কঞ্জিরার যুগলবন্দী বাজনা। শোনা গেছে কণ্ঠশিল্পীর খেয়াল ও ধ্রুপদের সঙ্গে বাঁশরিয়ার বাঁশির সুর। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত ও স্কয়ার নিবেদিত এ উৎসবের সহযোগিতায় আছে ব্র্যাক ব্যাংক। ধানম-ির আবাহনী মাঠে চলা উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানকে। তৃতীয় রাতের পরিবেশনা পর্বের সূচনা হয় সেতারের সুরে। মঞ্চে আসে বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের ৭ সদস্যের শিল্পীদল। সেতারের সুমধুর সুরে নবীন শিল্পীরা আপ্লুত করেন শ্রোতাদের। সুররসিকদের প্রত্যাশাকেও যেন ছাপিয়ে যায় তাদের পরিবেশনা। ঝরে পড়ে মুহুর্মুহু করতালি। বাংলাদেশ ফিরে যাচ্ছে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের হারানো গৌরব সেই দিয়ে যায় পন্ডিত কুশাল কুমার দাশের শিষ্যরা। গুরুর কম্পোজিশনে তারা কিরওয়ানি রাগে সেতার অর্কেস্ট্রা পরিবেশন করেন। দলটির সাত সদস্য হলেন প্রশান্ত মন্ডল, টি এম সেলিম রেজা, রিংকু চন্দ্র দাস, মেহরিন আলম, জ্যোতি বন্দোপাধ্যায়, মোহাম্মদ কাউসার ও জাহাঙ্গীর আলম শ্রাবণ। পরিবেশনা শেষে শিল্পীদের হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেন গ্রামিজয়ী শিল্পী বিদ্বান ভিক্ষু বিনায়ক রাম। সেতারের বাদন শেষে শ্রোতাদের অপার আনন্দে ভাসিয়েছে ভারতের শিল্পীদের পরিবেশিত ঘাটম ও কঞ্জিরার যুগলবন্দী বাজনা। ঘাটম বাজিয়েছেন গ্রামিজয়ী ভিক্ষু বিনায়ক রাম আর কঞ্জিরা কঞ্জিরা বাজিয়েছেন তার ছেলে সেলভাগণেশ বিনায়ক রাম। তাঁদের সঙ্গে কাঞ্জিরা ও কোনাক্কল বাজিয়েছেন স্বামীনাথন এবং মোরসিংয়ে ছিলেন এ. গনেশন। পরিবেশনার শুরুতেই তারা ঘাটমে শিবস্তব করেন। পরের পরিবেশনার শিরোনাম ছিল গুরুবন্দনা ও গনপতি। শিল্পীদের হাতে উৎসবের স্মারক সম্মাননা তুলে দেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপার্সন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। এরপর খেয়াল পরিবেশন করেন সরকারী সঙ্গীত কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। দলটি পরিবেশন করেন রাগ মালকোষ। ১৮ সদস্যের এ দলটিতে ছিলেন আশা খন্দকার, বিটু কুমার শীল, দেবজানি দাস, ড. ফকির সুমন, জি এম সাইফুল ইসলাম, জোহরা হোসাইন, মল্লিকা ওঝা, গোলাম মোস্তফা, মমিন মিয়া, মুরাদ হোসাইন, নিউটন বৈরাগী, নিত্য গোপাল ঠাকুর, অর্বি শর্মি, শারমিন সুলতানা স্মৃতি, কৃষ্ণ গোপাল, সুমা ব্যাপারি, সুস্মিত সাহা ও তমালিকা হালদার। খেয়ালের পরিবেশনা শেষে সরোদ বাজিয়ে শোনান ভারতের প্রখ্যাত সরোদশিল্পী আবির হোসেন। তার সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন যোগেশ শামসি। আবির হোসেনের সরোদে রাগ আভোগী পরিবেশন করেন। এরপর বাঁশিতে সুর তোলেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান বাঁশরিয়া গাজী আবদুল হাকিম বাঁশিতে সুর তোলেন। বাঁশির সুর থামতেই মঞ্চে আসেন ভারতের প-িত উদয় ভাওয়ালকর। বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের এ শিক্ষকের পরিবেশনায় ছিল ধ্রুপদ। তার কণ্ঠের মাধুর্যে সে সময় মাঠে সৃষ্টি হয় এক অনন্য পরিবেশ। তিনি মঞ্চ থেকে নামতেই বেহালা হাতে মঞ্চে আসেন ভারতের বিদুষী কালা রামনাথ। তৃতীয় দিনের শেষ পরিবেশনায় খেয়াল পরিবেশন করেন প-িত অজয় চক্রবর্তী। বুধবার মধ্যরাতের পরিবেশনা : উৎসবের দ্বিতীয় দিন বুধবার মধ্যরাতে খেয়াল পরিবেশন করেন প-িত উলহাস কশলকর। প্রথমে তিনি পরিবেশন করেন রাগ যোগকোষ, পরে গেয়েছেন সোহিনী রাগ। তার সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন সুরেশ তলওয়ালকার। পরিবেশনা শেষে শিল্পীদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এরপরে সেতার পরিবেশন করেন ওস্তাদ শাহিদ পারভেজ খাঁ। তার সঙ্গে তবলায় ছিলেন অভিজিৎ ব্যানার্জি। তিনি শ্রোতাদের শোনান বাগেশ্রী রাগ। পরিবেশনা শেষে শাহিদ পারভেজ খাঁর হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। এর পর বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থী অভিজিত কু-ু পরিবেশন করেন ধ্রুপদ। শিল্পীকে পাখোয়াজে সঙ্গত করেন সুখাদ মু-ে, তানপুরায় ছিলেন জ্যাতাশ্রী রায় চৌধুরী ও টিংকু কুমার শীল। অভিজিত কু-ু পরিবেশন করেন রাগ বেহাগ। পরিবেশনা শেষে শিল্পীর হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি শাহ সৈয়দ কামাল। দ্বিতীয় দিনের আয়োজন শেষ হয় প-িত রণু মজুমদারের বাঁশি এবং প-িত দেবজ্যোতি বোসের সরোদের যুগলবন্দি পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। তাদের সঙ্গে তবলায় ছিলেন যোগেশ সামসি এবং অভিজিৎ ব্যানার্জি। শিল্পীদ্বয় পরিবেশন করেন রাগ আহীর ভৈরব। শেষে দর্শকদের অনুরোধে তারা ভাটিয়ালী ধুন পরিবেশন করেন। পরিবেশনা শেষ হলে তাদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের। আজকের উৎসবসূচী ॥ আজ শুক্রবার উৎসবের চতুর্থ দিন। এদিনের আয়োজন শুরু হবে তিন ঘরানার শাস্ত্রীয় নৃত্য পরিবেশনা মাধ্যমে। মনিপুরি, ভরতনাট্যম ও কত্থক নৃত্য পরিবেশন করবেন সুইটি দাস, অমিত চৌধুরী, ¯œাতা শাহরিন, সুদেষ্ণা স্বয়মপ্রভা, মেহরাজ হক ও জুয়াইরিয়াহ মৌলি। সরোদে সুর তুলবেন বেঙ্গল পরম্পরা সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থীরা। কণ্ঠসঙ্গীতে খেয়াল পরিবেশন করবেন ওস্তাদ রাশিদ খান। সরোদ বাজাবেন প-িত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার। বেহালায় সুর ঝরাবেন ড. মাইশুর মঞ্জুনাথ। খেয়াল পরিবেশন করবেন প-িত যশরাজ। চেলোর বাজনা শোনাবেন সাসকিয়া রাও দ্য-হাস। প-িত বুদ্ধাদিত্য মুখার্জির সেতারের সুরে শেষ হবে এ রাতের পরিবেশনা।
×