ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বার কাউন্সিলের সেই উপসচিবের থলের বিড়াল বেরিয়ে এসেছে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৩ এপ্রিল ২০১৭

বার কাউন্সিলের সেই উপসচিবের থলের বিড়াল বেরিয়ে এসেছে

আরাফাত মুন্না ॥ আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সেই উপ-সচিব আফজাল-উর রহমানের থলের বিড়াল বেরিয়ে এসেছে। এবার স্বাধীনতা দিবস পালন থেকে বার কাউন্সিলকে বিরত রেখে এই কর্মকর্তা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন। অভিযোগ উঠেছে, নিজের নিয়োগ থেকে শুরু করে সংস্থার গেজেটÑসবখানেই জালিয়াতির জাল বুনেছেন এই কর্মকর্তা। দুর্নীতিতে সিদ্ধহস্ত এই কর্মকর্তা নিজের বেতন নিজেই বাড়িয়ে নিয়েছেন। গাড়ি কিনতে গিয়ে নিজের পকেট ভারি করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) এক আইনজীবীর দায়ের করা অভিযোগে উঠে এসেছে এসব তথ্য। ইতোমধ্যে দুর্নীতি-অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতিসহ নানা ধরনের অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। বার কাউন্সিল সূত্র জানায়, নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য বার কাউন্সিলের অনুমোদন ছাড়াই সচিবের ক্ষমতা কর্তন করে তিনি একটি ভুয়া গেজেট জারি করিয়েছেন। এছাড়া আইনজীবী এনরোলমেন্ট (অন্তর্ভুক্তিকরণ) পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেয়ার নামে উৎকোচ গ্রহণ এবং দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে বার কাউন্সিলের এই কর্মকর্তা বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। সূত্রটি আরও জানায়, ২০০৬ সালে বার কাউন্সিলের চাকরিতে যোগদানের পর এই কর্মকর্তা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। একাধিক বাড়ি ও গাড়িরও মালিক তিনি। কাউন্সিলের একাধিক কর্মকর্তা এসব বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। সূত্র জানায়, ঢাকা আইনজীবী সমিতির এ্যাডভোকেট মোঃ ফরিদ বার কাউন্সিলের উপ-সচিবের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের জন্য দুদকসহ বিভিন্ন জায়গায় আবেদন দাখিল করেন। এই অভিযোগ দুদকে দাখিল করার পরে গত বছরের ১৮ অক্টোবর দুদক বার কাউন্সিলের কাছে কাগজ-পত্র চেয়ে চিঠি পাঠায়। এরপর বার কাউন্সিল থেকে কগজ-পত্র দাখিল করা হয়। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে বলেন, বার কাউন্সিলের উপ-সচিব আফজাল-উর রহমানের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। নিয়োগ জালিয়াতি জানা গেছে, ২০০৬ সালে এই উপ-সচিব পদে নিয়োগের জন্য ওই বছরের ২৩ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই পদে আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে আফজাল-উর রহমানের এলএল.বি ডিগ্রী ছিল না। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ না করেই তিনি জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করে ওই পদে নিয়োগ লাভ করেন। পরবর্তীতে এই বিষয়ে কেউ যাতে প্রশ্ন তুলতে না পারে সেজন্য চাকরির রেকর্ড থেকে পত্রিকার বিজ্ঞাপন সরিয়ে ফেলেন। নিজেই নিজের বেতন গ্রেড পরিবর্তন করেন অভিযোগে জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৩ জুলাই বার কাউন্সিলের এক মিটিংয়ের একটি আলোচ্যসূচীর বিষয়বস্তু ছিল ‘কতিপয় এ্যাডভোকেটের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও অন্যান্য বিষয়ে এক্সিকিউটিভ কমিটির সুপারিশ বিবেচনা’। সচিবের ক্ষমতা কর্তন অভিযোগে আরও জানা গেছে, বার কাউন্সিলের এই কর্মকর্তা নিজেকে সর্বোচ্চ নির্বাহী ক্ষমতাসম্পন্ন কর্মকর্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য ২০১২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলের অনুমোদন ছাড়াই একটি গেজেট প্রকাশ করান। গাড়ি ক্রয়ে অনিয়ম দুদকে দায়ের করা অভিযোগ অনুযায়ী, বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্যদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে একটি মাইক্রোবাস ক্রয়ের জন্য অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান শাখা পে-অর্ডারের মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা প্রদান করে। আরও যত অনিয়ম অভিযোগ অনুযায়ী, বার কাউন্সিলের ওই কর্মকর্তা চট্টগ্রামের সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়কে বার কাউন্সিল এনরোলমেন্ট পরীক্ষায় লিস্টে অন্তর্ভুক্তি দিয়েছেন বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে।
×