ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর ৪০ বছর পূর্তি উৎসব শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৬ নভেম্বর ২০১৬

ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর ৪০ বছর পূর্তি উৎসব শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘ভয় নেই কোন ভয়, জয় সাম্যের জয়’ সেøাগানে শুরু হলো ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর ৪০ বছরপূর্তি উৎসব। ঢাকার সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত মঞ্চে শুক্রবার বিকেলে বেলুন উড়িয়ে দুই দিনব্যাপী উৎসব উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রেলপথমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক। বিশ্বের সকল গণসঙ্গীতশিল্পীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে উৎসব উৎসর্গ করা হয়। শুরুতে সংগঠনের শিল্পীদের কণ্ঠে পরিবেশিত হয় দলীয় গান ‘আমরা ঋষিজ করি’। ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি ও উৎসব উদযাপন পর্ষদের আহ্বায়ক শিল্পী ফকির আলমগীরের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন শিল্পী ফকির আলমগীর। এরপর শুরু হয় গুণীজন সংবর্ধনা। পর্যায়ক্রমে সংবর্ধনা প্রদান করা হয় অর্থনীতিতে অধ্যাপক মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, নৃত্যকলায় আমানুল হক, নাট্য আন্দোলনে রামেন্দু মজুমদার, মুক্তিযুদ্ধে ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, আবৃত্তিতে আশরাফুল আলম, শিক্ষায় অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও সঙ্গীতে ওস্তাদ শাহাদত হোসেন খানকে। এদের প্রত্যেকের হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন অতিথিরা। ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের অনুপস্থিতিতে তার পক্ষে ক্রেস্ট ও সনদ গ্রহণ করেন তার সহধর্মিণী ড. ইয়াসমিন হক। সংবর্ধিত ব্যক্তিরা প্রতিক্রিয়ায় বলেন, দেশের বর্তমান সঙ্কটে ঋষিজের মতো সাংস্কৃতিক সংগঠনের খুবই প্রয়োজন, যারা গান গেয়ে অন্ধকার থেকে আলোতে আসার আশা জাগাবে দেশের মানুষকে। উদ্বোধক হিসেবে কথাসাহিত্যক হাসান আজিজুল হকের অনুপস্থিতিতে তার পাঠানো উদ্বোধনী বাণী পড়ে শোনান নায়লা তাবান্নুম চৌধুরী। আলোচনা অনুষ্ঠানে অতিথিরা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের ভিত্তিতে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করেই ঋষিজের জন্ম। আজ যারা পদক পেলেন তাদের অনেকেই রাষ্ট্রীয় পদক পেয়েছেন। যারা পাননি তারা প্রত্যেকেই রাষ্ট্রীয় পদক পাওয়ার যোগ্য। ঋষিজের অর্জন সকল সাংস্কৃতিককর্মীর অর্জন। সাংস্কৃতিক পুনঃজাগরণের ফলে আমরা সকল অন্ধকারের অপশক্তিকে প্রতিহত করতে পারি। জীবনকে আলোতিক ও সংস্কৃতিসমৃদ্ধ করতে হলে সাংস্কৃতিক চর্চার বিকল্প নেই। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে ভারতের মাদল, রাঙ্গামাটির গিরিসুর, সিলেটের অন্বেষণ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র শিল্পী দল, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, স্বভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র ও আনন্দন সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের শিল্পীরা। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী রফিকুল আলম, সুবির নন্দী, তিমির নন্দী, আবু বকর সিদ্দিক, লিলি ইসলাম, খায়রুল আনাম শাকিল, আরিফ রহমান, আবিদা রহমান সেতু। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন ভারতের লহরী ও ঢাকার স্পন্দনের শিল্পীরা। অনুষ্ঠানে একক আবৃত্তি করেন মোঃ আহ্কামউল্লাহ্, ইকবাল খোরশেদ, ঝর্ণা সরকার এবং দলীয় আবৃত্তিতে অংশ নেয় স্বরশ্রুতি। উৎসবের সমাপনী দিন আজ বিকেল চারটায় শুরু হবে অনুষ্ঠান। এতে বাংলা সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ নৃত্যকলায় বিশেষ অবদানের জন্য ভারতের ড. মহুয়া মুখার্জী ও সঙ্গীতে বিশেষ অবদানের জন্য অমিতাভ মুখোপাধ্যায় এবং গণসঙ্গীতে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশের কামরুদ্দীন আফসারকে সংবর্ধনা দেয়া হবে। এ সমাপনী আয়োজনে প্রধান অতিথি থাকবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ অভিনয়ের ৪০ বছরপূর্তিতে বিশেষ মঞ্চায়ন সৈয়দ শামসুল হক রচিত ও আবদুল্লাহ আল মামুন নির্দেশিত থিয়েটার প্রযোজনা মুক্তিযুদ্ধের নাটক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’। কালজয়ী এ কাব্যনাট্য প্রদর্শনীর ৪০ বছর পূর্ণ হলো শুক্রবার। চার দশক আগে এই দিনে মহিলা সমিতিতে প্রথম মঞ্চায়ন হয় এ নাটকটি। মঞ্চে আসার পর দর্শকমহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয় নাটকটি। ১৯৮১ সালের ২০ মার্চ দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে আইটিআই আয়োজিত বিশ্ব নাট্যোৎসবে নাটকটির দুটি প্রদর্শনী হয়। ভারতের বাইরে বহির্বিশ্বে এটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম কোন নাট্যদলের মঞ্চায়ন। ১৯৯০ সালের ২৩ মার্চ নাটকটির শততম মঞ্চায়ন হয়। মাঝে প্রায় দশ বছর নাটকটির মঞ্চায়ন হয়নি। বিরতির পর নতুনভাবে এ প্রযোজনার নির্দেশনা দিয়েছেন সুদীপ চক্রবর্তী। একমাত্র ফেরদৌসী মজুমদারই নাটকটির সব প্রদর্শনীতে অভিনয় করেছেন। প্রথম মঞ্চায়নের অভিনয়শিল্পী কেরামত মওলা এখন আবার নিয়মিত অভিনয় করছেন। এছাড়া গত ৪০ বছরে প্রায় ৭০ জন অভিনয়শিল্পী বিভিন্ন পর্যায়ে এ নাটকে অভিনয় করেছেন। অভিনয়ের ৪০ বছরপূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে নাটকটির ১৭৪তম মঞ্চায়ন হয়। শুরুতে ছিল ৪০ বছরপূর্তির সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতা।
×