ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আইএসআই মদদ দিচ্ছে জঙ্গী কাণ্ডে

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২৯ নভেম্বর ২০১৫

আইএসআই মদদ দিচ্ছে জঙ্গী কাণ্ডে

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশের জন্য ক্রমেই হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) গোপন তৎপরতা। বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে ও জঙ্গী তৎপরতায় মদদ দিচ্ছে এই গোয়েন্দা সংস্থাটি। এ জন্য পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাটি বাংলাদেশে এজেন্ট নিয়োগ ও বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করছে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের বাংলাদেশী এজেন্ট হিসেবে ছিলেন ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াতও আইএসআইয়ের মদদ পাচ্ছে। জামায়াতের সহযোগিতায় বাংলাদেশের জঙ্গীদের পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ দিয়ে আবার বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে নাশকতা চালানো হচ্ছে। এই ধরনের তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশের বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের মদদে সম্প্রতি পাকিস্তানে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছে জেএমবির ৭ জঙ্গী সদস্য। প্রশিক্ষণ গ্রহণকালে বিভিন্ন সময়ে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে বাংলাদেশের ৪ জঙ্গী সদস্য। জেএমবির অপর ৩ জঙ্গী সদস্য প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে এসেছে বাংলাদেশে। পাকিস্তানে ৩ জঙ্গী সদস্য প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে। ধরা পড়া ৩ জঙ্গীর দেয়া জবানবন্দীতে জামায়াতের সহযোগিতায় পাকিস্তানে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে এসে নাশকতা চালানোর ছক কষা হয় বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে গিয়ে জঙ্গী প্রশিক্ষণ নিয়ে বন্দুকযুদ্ধে যে ৪ জঙ্গী মারা গেছে তার মধ্যে ২ জঙ্গীর নাম জানতে পেরেছে গোয়েন্দারা। এই দুই জঙ্গীর নাম হচ্ছে, সাইজুদ্দিন ওরফে কারগিল ও শামিম। নিহত অপর ২ জঙ্গীর নাম সংগ্রহের চেষ্টা করছে গোয়েন্দারা। বাংলাদেশের যে ৩ জঙ্গী পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে এসে ধরা পড়েছে তারা হচ্ছে, শাখাওয়াতুল কবীর, আনোয়ার হোসেন বাতেন ও নজরুল ইসলাম। এই ৩ জঙ্গীর মধ্যে শাখাওয়াতুল কবীর জিজ্ঞাসাবাদে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে বলেছে, তার ভায়রাভাই হচ্ছে, সাইজুদ্দিন ওরফে কারগিল, যে পাকিস্তানে জঙ্গী প্রশিক্ষণ নিয়ে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। ধরা পড়া অপর জঙ্গী আনোয়ার হোসেন বাতেন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে বলেছে, শামিম হচ্ছে তার ভগ্নিপতি, যে পাকিস্তানে গিয়ে জঙ্গী প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে আসার সময়ে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়া ২ জঙ্গী হচ্ছে, মোতাকাব্বির ওরফে সনি ও আশরাফুল ওরফে রনি। তারা জেএমবির জঙ্গীগোষ্ঠীর সদস্য। বাংলাদেশের জঙ্গীদের পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে ড্রোন, রকেটলঞ্চার তৈরি থেকে শুরু করে চালনার প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। পাকিস্তানের প্রশিক্ষণ পাওয়া জেএমবির জঙ্গীরাই পশ্চিমবঙ্গে খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণের আগে কলকাতায় রকেটলঞ্চারের পরীক্ষা চালিয়েছে বলে জানতে পেরেছে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। গোয়েন্দা সংস্থার একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা বলেন, ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করা বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে জীবদ্দশায় ওআইসির মহাসচিব পদে নির্বাচন করার জন্য বাংলাদেশের পক্ষে মনোনয়ন দিতে পরামর্শ দিয়েছিল পাকিস্তান। তখন বিএনপি সরকার ক্ষমতায় ছিল। যদিও ওআইসি মহাসচিব পদে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বিজয়ী হতে পারেননি। যুদ্ধাপরাধের কারণে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকর করার পর প্রকাশ্যেই বাংলাদেশে পাকিস্তানের হাইকমিশন ও পাকিস্তানের সরকারী পর্যায়ে এবং জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান বাংলাদেশের বিরুদ্ধাচরণ করেছে। বাংলাদেশের নাগরিকদের বিচার বাংলাদেশের আইনে করার ঘটনায় পাকিস্তানের নাক গলানোর বিষয়টি অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল বলে মনে করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, পাকিস্তানের মানবাধিকার কর্মকর্তা আসমা জাহাঙ্গির বিবৃতি দিয়েই বলেছেন, ফাঁসিতে ঝোলানো দুই যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বনই প্রমাণ দিচ্ছে, দুই যুদ্ধাপরাধী ছিল পাকিস্তানের চর (এজেন্ট)। গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, বিজ্ঞানমনষ্ক লেখক ও ব্লগার ড. অভিজিত রায় হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করে প্রাচ্য ভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন আলকায়দা বাংলায় ভিডিও বার্তা প্রচার করেছে তা পাকিস্তান থেকেই। এর আগে আলকায়েদা জঙ্গী সংগঠনটি হত্যার দায় স্বীকার করে আরবী, উর্দু ও ইংরেজীতে যে ভিডিও-বার্তা প্রচার করে সেটাও পাকিস্তান থেকেই। তিন ভাষায় প্রচারিত ভিডিও বার্তার পাশাপাশি বাংলা অনুবাদ জুড়ে দেয়ার ঘটনায় প্রমাণ করে বাংলাদেশের জঙ্গীরা অবস্থান করছে পাকিস্তানেই। গোয়েন্দারা তদন্ত করে দেখতে পেয়েছেন, এই ভিডিও বার্তা পাকিস্তান থেকে আপলোড করা হয়েছে। বাংলা অনুবাদ প্রচার করার পেছনে বাংলাদেশের কেউ জড়িত থাকতে পারে। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গী সংগঠনগুলোর মেরুদ- ভেঙ্গে পড়ায় তাদের তৎপরতাও সীমিত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ থেকে তাড়া খেয়ে জঙ্গীরা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ঘাঁটি গড়ে তোলে। বাংলাদেশের যেসব জঙ্গী সদস্য ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ঘাঁটি গেড়ে তুলেছে তাদের অনেকেই পাকিস্তানের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। বাংলাদেশে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী তৎপরতায় আগে থেকেই আইএসআইয়ের মদদ দেয়ার অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
×