ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এলএনজি আমদানির উৎস চূড়ান্ত করতে ৩ সদস্যের কমিটি

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ২৮ মে ২০১৫

এলএনজি আমদানির উৎস চূড়ান্ত করতে ৩ সদস্যের কমিটি

রশিদ মামুন ॥ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির উৎস চূড়ান্ত করতে কমিটি গঠন করেছে জ্বালানি বিভাগ। ওই কমিটি এলএনজি ক্রয়ের জন্য সরবরাহকারীর সঙ্গে দরকষাকষি এবং আন্তর্জাতিক বাজার পর্যালোচনা করে জ্বালানি বিভাগের কাছে প্রস্তাব উপস্থাপন করবে। ওই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে জ্বালানি বিভাগ সরকারের অনুমোদন নিয়ে এলএনজি ক্রয়ে চূড়ান্ত চুক্তি করবে। গ্যাস সঙ্কট দূর করতে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চলতি বছরের শেষ দিকে মহেশখালিতে একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ শুরু হবে। এছাড়া স্থলভাগে বিদ্যুত বিভাগের একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। দুটি টার্মিনাল নির্মাণ হলে দেশে দৈনিক অন্তত এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করা হবে। কিন্তু এখনও এলএনজি ক্রয়ের উৎস চূড়ান্ত হয়নি। মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, দেশে এলএনজি নতুন ধরনের জ্বালানি। ভারত-পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে এলএনজি ব্যবহার হলেও আমাদের এখানে এখনও ব্যবহার শুরু হয়নি। মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরপরই দেশে গ্যাস সঙ্কট দূর করতে এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নেয়। কিন্তু জ্বালানি বিভাগের ব্যর্থতায় তা ঝুলে যায়। ওই সরকারের পরিকল্পনায় বলা হয় ২০১২ সালের শেষ দিকে দেশে এলএনজি আসবে। কিন্তু ফ্লোটিং স্টোরেজ এ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশনের জন্য পেট্রোবাংলা গত ২৫ ফেব্রুয়ারি টার্মশীট স্বাক্ষর করে। ওই কোম্পানি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করবে। একই সঙ্গে তারা রি- গ্যাসিফিকেশন (এলএনজিকে পুনরায় গ্যাসে রূপান্তর) করে দেবে। কোম্পানিটি এলএনজি পরিবহনের ব্যবস্থাও করবে। কিন্তু এলএনজি আমদানির উৎস এবং দর নির্ধারণ করবে সরকার। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, দেশে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের বিষয়টি এখন চূড়ান্ত হওয়ায় বিভিন্ন কোম্পানি এলএনজি বিক্রির প্রস্তাব দিচ্ছে। এসব প্রস্তাব পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। বিভিন্ন কোম্পানির প্রস্তাব পর্যালোচনা করে সুবিধাজনকটি গ্রহণ করা হবে। এলএনজি আমদানির জন্য কাতারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) রয়েছে সরকারের। সম্প্রতি সরকারের অনুরোধে কাতার ওই এমওইউর মেয়াদ বাড়িয়েছে। জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, যেহেতু আমরা দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি আমদানি করবো তাই বিভিন্ন উৎস নির্ধারণ করাই উত্তম। ইতোমধ্যে বিভিন্ন কোম্পানি এলএনজি রফতানির জন্য প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে আসছে। জ্বালানি বিভাগ তাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এলএনজি ক্রয় করতে চায়। আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষণ করে দরকষাকষির মাধ্যমে এলএনজি কেনা হলে লাভবান হওয়া সম্ভব বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা। জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জ্বালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব উন্নয়নকে আহ্বায়ক করে গঠিত তিন সদস্যের কমিটিতে অন্য দুজন হচ্ছেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) এবং জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ বিভাগের উপসচিব (উন্নয়ন-২)। গত ২৬ মে মঙ্গলবার জ্বালানি বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এ কমিটি বিভিন্ন বেসরকারী কোম্পানির এলএনজি রফতানির প্রস্তাব পর্যালোচনা করবে। পর্যালোচনার ক্ষেত্রে এলএনজির দাম, কোম্পানি প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা, আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষণ করে তুলনামূলক চিত্র জ্বালানি বিভাগের কাছে উপস্থাপন করবে। জ্বালানি বিভাগ এ কমিটির প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অনুমোদন নিয়ে এলএনজি আমদানি চুক্তি করবে। দেশে যে টার্মিনালটি নির্মাণ করা হচ্ছে সেটির ধারণ ক্ষমতা হবে দুই লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার। দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি গ্যাসে রুপান্তর করা যাবে। এ জন্য প্রতিদিন রি-গ্যাসিফিকেশনের জন্য দুই লাখ ৩৮ হাজার ডলার খরচ পড়বে। এর মধ্যে স্থায়ী ব্যয় ধরা হয়েছে দৈনিক এক লাখ ৫৯ হাজার ১৮৬ ডলার, পরিচালনা ব্যয় ৪৫ হাজার ৮১৪ ডলার এবং অন্যান্য ব্যয় ৩২ হাজার ডলার। এই চুক্তি ১৫ বছর বলবৎ থাকবে। প্রতি ইউনিট গ্যাসের রি-গ্যাসিফিকেশনের জন্য দশমিক ৪১ ডলার লাগবে অন্য সব খরচ যোগ করে যা দাঁড়াবে দশমিক ৪৭৪ ডলার। প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এরপর দরপত্রসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া এগুলেও কাজ দেয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে বিদ্যুত জ্বালানি সরবরাহ বিশেষ আইনে দরপত্রের সর্বনিম্ন দরদাতা এক্সিলারেট এনার্জি পার্টনারশীপকে কাজটি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া পাওয়ারসেল আরও একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করছে একই স্থান মহেশখালিতে। যদিও সরকারের এ কমিটি শুধুমাত্র পেট্রোবাংলার নির্মাণ করা এলএনজি টার্মিনালের জন্য এলএনজি আমদানির বিষয়টি পর্যালোচনা করবে।
×