ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

একগুচ্ছ তুর্কি কবিতা

কবতিা

মোরশেদুল ইসলাম

প্রকাশিত: ২১:৩৩, ৫ জানুয়ারি ২০২৩

কবতিা

-

মূল তুর্কি থেকে 
ভাষান্তর করেছেন মোরশেদুল ইসলাম


প্রেমের আলিঙ্গন

বারিস আরদোয়ান

বন্ধু, আমার বাবা একজন কুলি
রোজ সন্ধ্যায় বাজার থেকে
আমার মায়ের জন্য
প্রেমের আলিঙ্গন কিনে আনেন।

বন্ধু, আমার মা একজন কুলি
সকাল থেকে সন্ধ্যা তক
বাবার জন্য খাবারের বদলে
ভালোবাসা রাঁধেন। 

ক্স বারিস আরদোয়ান (১৯৬৫–) তুরস্কের 
মার্সিনে জন্ম নেওয়া একজন 
প্রখ্যাত শিল্পী ও কবি।


** আমি ছাড়াও আলিফ নুরেই

সন্ধ্যার ধুপে আমার গলা জ্বলে 
ছেয়ে যায় প্রচ- দুশ্চিন্তা
কপালে আমার পাপের পহেলা চিহ্ন
খোদাই করা ক্ষতের মতো দেখায়।

এটা অতীতের একটা দুষ্পাঠ্য মানচিত্র
উপরে রয়েছে পরীক্ষিত শক্তিশালী ক্ষত
তবে গর্ত গভীর নয়
প্রসারমান হৃদয় আমার
তুমি হেলান দিয়ে জুড়িয়েছ যেখানে
আর নিয়েছ পড়ে

দেয়াল দিয়ে ঢাকা যায় না যে কপাল
চলছে স্বাভাবিক নিয়মেই
সামনে
তোমার বাড়ির আড়ম্বরি ভাবায় আমায়
যদি মুক্তি পেতাম
দ্বারগুলো পুরনো পাহাড়ের মতো ঠেকে চোখে।

এ মিছেমিছি তাড়াহুড়ো নীড়ের জন্য
ভালো করে আগলে রেখো আমায়,
এ বুকের গহিনে, আমি ছাড়াও
বয়ে চলে এক জীবন্ত নদী। 


** প্রতীক্ষিত

০১.
প্রতীক্ষা স্মোকিং এর চেয়েও খারাপ,
তাই প্রতীক্ষা করি না।
আমার জানালার আলো কেটে ফেলে গাছগুলো,
ঐ তুষার, ঐ শূন্যতা, আমি কাঁদি।
বেদনার যে সুর কানে বাজে তা পড়ে দেখো।
নির্বাক হলেও অতীতের জিহ্বায় দিয়েছি তালা।

ক্ষমার বিশালতার বাইরেও
বেদনা বের করার একটা রাস্তা থাকে।
পৃথিবীর প্রান্তে দাঁড়িয়ে জেনেছি
যেখানে তুমি পড়েছ সেখানে ফুল নেই,
যতক্ষণ নীরব থাকবে, শুধুই আগুন।

০২.
আশা স্মোকিং এর চেয়েও খারাপ,
তাই আশা করা বাদ দিয়েছি।
আমার জানালায় কাঠের মতো মৃত আশা,
কী ঠা-া, আমি প্রার্থনা করি।
অপূর্ণ প্রার্থনাগুলো হারিয়ে যায়
ঐ অস্থির শূন্যতায়।

যদি কোনো শিশু নীরব থাকে,
বিশ্বজগতের প্রত্যাখ্যান।
বিধাতা শিশির ছিটায়
আমার বিষণ্ণতায়।

* আলিফ নুরেই (জন্ম ১৯৮৮) তুরস্কের এক জনপ্রিয় তরুণ কবি। তাঁর বহুল আলোচিত কাব্যগ্রন্থ (ও কোরকুন্স মাহারেৎ) (ভয়ানক দক্ষতা)। গণিতবিদ এই নারী ইস্তানবুল কমার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক। 


** কোঁয়াজ্বর 

গোলাম কিবরিয়া পিনু

ফেরিওয়ালা হয়েও-
          বিক্রি করতে পারছো না,
                তোমার হাতের পণ্য! 
ফেরিঘাটে গিয়ে ফেরিওয়ালা সেজেছো-
অলিতেগলিতেও গিয়েছো,
              লোকালয়েও!

মাথায় ঝুড়ি-ঠেলাগাড়িতেও পণ্য,
      তবুও কিছুই বিক্রি হলো না! 
চৈত্র সংক্রান্তি কিংবা বৈশাখের মেলায় বিক্রি হলো না!
তোমার পণ্য কারও পছন্দ হলো না! 
ফেরি করেও দরোজায় দরোজায় গিয়ে
          সবকিছু বিক্রি হয় না!

অথচ কী-এক সম্মোহনে
       আমরা সহজে ফেরিওয়ালা হয়ে যাচ্ছি!
          কত রকমের হাঁক-ডাক!
কুণ্ঠিত হচ্ছি না-ভূলণ্ঠিত হওয়ার পরও!
এতটা কুদাকুদির পর-কোঁয়াজ্বরে বিছানায় পড়ে থাকি!
       লজ্জাটুকু থাকছে না
            সঙ্কোচটুকু থাকছে না 
                 চোখের পর্দাও থাকছে না! 
ফেরিওয়ালা হয়ে কোথায় না পা রাখছি!


** হেমন্ত অঙ্কুর

আফিফ জাহাঙ্গীর আলি

ছাতিম ফুলের গন্ধে মাদকতা রাতে
আঙিনায় শিউলি ঝরা স্নিগ্ধ সৌরভ ভোরে
মুগ্ধতা ছড়িয়ে চিত্তাকর্ষক কলমিলতা-
কচুরিপানা ফুলে ফুলে অপরূপ জলাশয়
শিশির গায়ে মেখে নবান্ন উপঢৌকনে
রস-পিঠা-পায়েসের রসনা বিলাস
পাতা ঝরার নিঃশব্দ বিষণ্ণতার
হলুদ আবিরের রংতুলি প্রকৃতির
ঝুড়িতে পেঁয়াজ রসুন আলুতে হেমন্ত অঙ্কুর

×