ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিপ্লবীর রিভলবার

খুররম মমতাজ

প্রকাশিত: ০১:২৯, ১২ আগস্ট ২০২২

বিপ্লবীর রিভলবার

রিভলবার

কলকাতায়

রিভলবারটা দেখার খুব ইচ্ছা ছিল আমারসৌম্য বলল, ‘এখানেই আছে সেই রিভলবার- এই মিউজিয়ামেএকটা বিল্ডিংয়ের সামনে এসে দাঁড়াল ট্যাক্সিটাট্যাক্সি থেকে নামলাম আমি আর সৌম্য

সৌম্যর বয়স তিরিশের মতো, সে পর্বতারোহীবছর কয়েক আগে পাহাড়ে উঠেছিল সৌম্য আর তার টিমচূড়া ছোঁয়ার পর নিচে নামছিল তারাচারজনের দলনামার পথে কঠিন একটা চড়াই পার হচ্ছিল দলটা, তখন ঘটল দুর্ঘটনাপা পিছলে গেল সৌম্যর, দড়িতে ঝুলছিল সে- তার শরীরের ভারে টান খেয়ে ব্যালান্স হারাল আরও একজন- সামলে নেওয়ার সময়ই পেল নাঅবস্থা এমন হলো একটু পরে সবাই একে একে ঝুলতে থাকবে- পুরো দলটাই পড়ে যাবে ভয়ানক বিপর্যয়েসৌম্যর ভুলের জন্য মারা যাবে তিনজন মানুষ

দ্রুত সিদ্ধান্ত নিল সৌম্য এবং হার্নেস থেকে নিজেকে খুলে নিলএই সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ ছিল নাধপ করে উঁচু থেকে পড়লো সৌম্যর শরীর, তারপর গড়িয়ে গড়িয়ে প্রায় শখানেক মিটার নেমে স্থির হয়ে গেলএরপর ও আর কিছুই জানে নানৈনিতাল হাসপাতালে যখন চোখ খুললো সৌম্য, ওর দেহের বাঁ পাশটা অসার হয়ে গেছেভাঙা হাত-পা কোনমতে জোড়া দিলেন ডাক্তার, কিন্তু বাঁ চোখটা আর বাঁচাতে পারলেন না- নষ্ট চোখটা সরিয়ে পাথরের চোখ বসিয়ে দিলেন তিনি

পুলিশ মিউজিয়ামটা মানিকতলায়ভেতরে ঢুকে বাঁ দিক দিয়ে এগোতেই দেয়ালে বিপ্লবীদের ছবিবিপ্লবী কানাইলালের চোখে চশমাজ্বলজ্বল করছে তার চোখদুপাশে দুটো পুলিশ, মাঝখানে বন্দী কানাইকে বলবে ক্ষীণদেহী, নিরীহ দেখতে এই বিপ্লবীর শরীরে আর মনে এত তেজ, এত শক্তি ছিলজ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি যেন

ছবি তোলা নিষেধ লেখা আছে দেয়ালেভেতরে ঢোকার সময় গার্ডও মনে করিয়ে দিয়েছেকী আর করামিউজিয়ামের মধ্যে ঘুরে ঘুরে দেখলাম বিল্পবীদের অস্ত্রশস্ত্র আর বোমাএসবের মধ্যে একটা বই-বোমাও আছেমোটা বইয়ের পৃষ্ঠা কেটে, চারকোনা খোপ বানিয়ে তার মধ্যে বোম বসিয়ে বিপ্লবীরা পাঠিয়ে দিয়েছিল বড়লাটের কাছেবড়লাটের ভাগ্য ভাল বইটা তিনি খোলেননিখুললে খবর ছিলএইসব দেখলাম ঘুরে ঘুরে

লড়াই ও সশস্ত্র সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস আছে এই ভূখ-েরঅগ্নিযুগের বিপ্লবী খুদিরাম আর প্রফুল্ল চাকি অত্যাচারী বড়লাট কিংসফোর্ডকে মারতে গিয়েছিল ১৯০৮ সালেভুল করে তারা বড়লাটের গাড়ির মতো দেখতে আরেকটা গাড়িতে বোমা মারেবোমার আঘাতে মারা যায় অন্য দুজন মানুষখুদিরামের বিখ্যাত সেই গানেই আছে এই কাহিনী-

বড়লাটকে মারতে গিয়ে মারলাম

আরেক ইংল্যান্ডবাসী

একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি...

 

অগ্নিযুগ

অনুশীলন সমিতি গড়ে ওঠে কলকাতায় ১৯০২ সালেঅল্প কিছুকাল পরেই ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল থেকে শুরু করে সুদূর চট্টগ্রামেও ছড়িয়ে পড়ে এর শাখা-উপশাখাপ্রথমে তরুণ ছেলেদের ব্যায়াম, লাঠিখেলা, শরীরচর্চার কেন্দ্র ছিল এসব সমিতি- অনেকটা পাড়ার ক্লাবের মতোতিন-চার বছরের মধ্যেই তা গোপন বিপ্লবী সংস্থায় পরিণত হলো

সারা বাংলার তরুণরা তখন টগবগ করে ফুটছে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধেএদের মুখপত্র ছিল যুগান্তরপত্রিকাএছাড়াও সন্ধ্যা’, ‘সোনার বাংলা’, ‘বন্দে মাতরমনামে পত্রিকাগুলো ব্রিটিশ সরকারের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছিল এবং অনলবর্ষী লেখালেখির মধ্যে দিয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছিল বিপ্লবের মন্ত্র

ব্রিটিশরাজ নড়েচড়ে বসলোতারা প্রথমে নিষেধাজ্ঞা দিল পত্রিকার ওপর, তারপর লেখক ও সম্পাদকদের গ্রেফতার করতে শুরু করলোবিচার বসে কলকাতা চিফ ম্যাজিস্ট্রেট ডগলাস কিংসফোর্ডের আদালতেবিচারক কিংসফোর্ড শাস্তি দেন লেখক ও সম্পাদকদেরযেদিন বিচার হচ্ছিল বন্দে মাতরমপত্রিকার সম্পাদক অরবিন্দ ঘোষের, সেদিন আদালতের বাইরে ছাত্র-জনতার ভিড়জরিমানা হয় সম্পাদকেরততদিনে অরবিন্দ ক্ষুব্ধ তারুণ্যের প্রতীকপরিণত হয়েছেন তিনি বিপ্লবীদের অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতায়এই অরবিন্দকে নিয়েই ১৯০৭ সালে নমস্কারকবিতায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন-

এ উদাত্ত সঙ্গীতের তরঙ্গ মাঝার

অরবিন্দ রবীন্দ্রের লহ নমস্কার

 

অরবিন্দ ঘোষের পিতা কৃষ্ণধন ঘোষ ছিলেন ব্রিটিশ সরকারের উঁচু পদে আসীন ডাক্তার এবং আপাদমস্তক সাহেবি মেজাজের মানুষঅরবিন্দর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ইংল্যান্ডেসেখানেই তার লেখাপড়া ও বেড়ে ওঠাবাবার ইচ্ছা ছিল ছেলে আইসিএস পরীক্ষা দিয়ে সরকারী চাকরি করবে উঁচু পদেছেলের তা ইচ্ছা ছিল নাবাবার ইচ্ছায় অরবিন্দ আইসিএস পরীক্ষা দিলেন ঠিকই, কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণও হলেনকিন্তু যেদিন ঘোড়ায় চড়া ও অশ্বচালনার পরীক্ষা ছিল, সেদিন তিনি ইচ্ছা করে দেরিতে গেলেন এবং পরীক্ষা থেকে বাদ পড়লেনপিতার ইচ্ছা আর পূরণ হলো নাছেলে তার নিজের পথে এগিয়ে চললো

বরোদা স্টেট সাভির্সে যোগ দিয়ে অরবিন্দ ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে এলেনএখানে বরোদা কলেজে ইংরেজী পড়ানো থেকে শুরু করে বরোদার মহারাজের বক্তৃতা লিখে দেওয়া সবরকম কাজই তিনি করতে থাকেনপরে কলেজের অধ্যক্ষ হনফাঁকে ফাঁকে চলছিল পত্রিকায় লেখালেখিদেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদী ভাবধারা থেকে ধীরে ধীরে স্বদেশী আন্দোলনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়লেন যুবক অরবিন্দবরোদায় একদিন তাঁর সঙ্গে দেখা হলো সিস্টার নিবেদিতার

নিবেদিতা আইরিশ নারী- আয়ারল্যান্ড তাঁর দেশদেশে থাকতে তিনি শিক্ষকতা করতেন, ছিলেন সামাজিক এ্যাকটিভিস্টসেখানে তাঁর নাম ছিল মার্গারেট নোবেলএকদিন সব ছেড়েছুড়ে এদেশে চলে এলেন স্বামী বিবেকানন্দর শিষ্য হয়েবাংলাকে ভালবেসে তাঁর নবজন্ম হলো- মার্গারেট নতুন নাম নিলেন নিবেদিতাকলকাতার পিছিয়ে পড়া মেয়েদের জন্য স্কুল খুললেন

কলকাতায় প্লেগ মহামারী দেখা দিলে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করলেন নিবেদিতাহতদরিদ্র, অসহায়, অসুস্থ মানুষের নার্সিং শুরু করলেন, হলেন সিস্টার নিবেদিতাধীরে ধীরে বাংলার শিল্প, সাহিত্য ও বিজ্ঞানের জগতে ছড়িয়ে পড়লো এই মহিয়সীর নামজগদীশচন্দ্র বসুর বিজ্ঞান চর্চা ও বসু বিজ্ঞান মন্দির গড়ে তোলার পিছনে নিবেদিতার অবদান এখন সবার জানারবীন্দ্রনাথ তাঁর দেশপ্রেমে মুগ্ধ হয়ে নাম দিলেন লোকমাতা

এসবের আড়ালে তাঁর আরেকটি পরিচয় চাপা পড়ে গেছেভারতীয় ধর্ম ও সংস্কৃতি নিয়ে আগে থেকেই তিনি লেখালেখি করছিলেন, বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতা দিচ্ছিলেনএকসময় অনুশীলন সমিতির সদস্যদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ও যোগাযোগ ঘটে এবং তিনি স্বদেশী আন্দোলনের সক্রিয় সমর্থকে পরিণত হনবিবেকানন্দর মৃত্যুর পর রামকৃষ্ণ মিশনের কর্মকা- থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন নিবেদিতা

বরোদায় গিয়ে তিনি অরবিন্দর সঙ্গে দেখা করলেননিবেদিতার দেশ আয়ারল্যান্ডে তখন সশস্ত্র সংগ্রাম চলছেআইরিশ রিপাবলিকানরা সেখানে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধেবাংলায় সশস্ত্র বিপ্লবের সুযোগ ও সম্ভাবনা নিয়ে দুজনের মধ্যে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা হয়

নিবেদিতার কাছ থেকে আইরিশ বিপ্লবের তথ্য, বই, লিফলেট পেলেন অরবিন্দনিবেদিতার লেখা কধষর ঃযব গড়ঃযববইটি তাঁকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছিলভাই বারিন ঘোষকে আগেই তিনি কলকাতায় পাঠিয়েছিলেন, এবার অনুপ্রাণিত অরবিন্দ নিজেও কলকাতায় চলে এলেন এবং বিপ্লবের কাজে পুরোপুরি আত্মনিয়োগ করলেন

 

চন্দননগরে

এটা আমার কলেজসুলগ্না চক্রবর্তী বললেনএখানে আমি দুবছর পড়েছিসুলগ্না একজন শিক্ষক, গবেষক ও চন্দননগরের আদি বাসিন্দাএই শহরের অলিগলি রাজপথ তার আশৈশবের চেনা

আমি এসেছি কলকাতা বইমেলা দেখতেইচ্ছা ছিল এবার আন্দামান ঘুরে আসবদেখে আসব সেই জেলখানা, যেখানে অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের বন্দী করে রাখা হতোএত অল্প নোটিসে প্ল্যান অনুযায়ী আন্দামানের টিকিট পেলাম নাসুলগ্না বললেন, ‘তাহলে চন্দননগর ঘুরে যানএকসময় বিপ্লবীদের অভয়াশ্রম ছিল এই চন্দননগর- অগ্নিযুগের অনেক ইতিহাস এখানে ছড়িয়ে আছে

অটো নিয়ে ঘুরছি আমি আর সুলগ্না চন্দননগরেঘুরতে ঘুরতে শহরের গোন্দলপাড়া নামে একটা জায়গায় চলে এলো অটো, থামলো পুকুরপাড়ে গাছের ছায়ায়সাদামাটা ছোট্ট পুকুর, এপাশটায় কচুরিপানা দিয়ে ঢাকাওপাশে ভাঙা, পুরনো শতবর্ষী একটা বাড়িবাড়িটা দেখিয়ে সুলগ্না বললেন- ‘ঐ বাড়িতে থাকতো বিপ্লবী মাখনলাল ঘোষাল আর পুঁটিদি

সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল করার মিশন শুরু হয় ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল রাতেমাখনলাল ছিল ছয়জনের একটি দলেছয়জনের আরেকটি দল শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত টেলিগ্রাফ-টেলিফোন অফিস দখল করে ধ্বংস করে দেয়ট্রেনলাইন উপড়ে ফেলেএভাবে বাইরের জগত থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন চট্টগ্রামকে স্বাধীন ঘোষণা করেন সূর্য সেনব্রিটিশের দম্ভ চূর্ণ হয়, যদিও চট্টগ্রাম স্বাধীন ছিল মাত্র চারদিনের জন্য২২ এপ্রিল বিকেলের দিকে ব্রিটিশ সৈন্যরা আক্রমণ করে বিপ্লবীদের ঘাঁটিজালালাবাদ পাহাড়ে শুরু হয় সন্মুখযুদ্ধ

একদিকে প্রশিক্ষিত বিশাল ব্রিটিশ বাহিনী, অন্যদিকে সূর্য সেনের নেতৃত্বে কয়েকজন মাত্র বিপ্লবীবারো জন বিপ্লবী শহীদ হলেনটিকতে না পেরে পিছিয়ে গেলেন বাকিরাদলছুট হয়ে মাখনলাল, আনন্দ, লোকনাথ বল, গণেশ ঘোষ আর অনন্ত সিংহ চলে আসেন চন্দননগরে

তারা আশ্রয় পেলেন সুহাসিনী গাঙ্গুলি ও শশধর আচার্যর গোন্দলপাড়ার এই বাড়িতেসুহাসিনীই বিপ্লবীদের পুঁটিদিতাঁর জন্ম খুলনায়, লেখাপড়া ঢাকা শহরেইডেন কলেজে পড়ার সময় কলকাতায় মূক ও বধিরদের স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পেয়ে তিনি কলকাতায় চলে আসেনএখানে যুগান্তর দলে যোগ দেন সুহাসিনী- বিপ্লবের কাজে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে থাকেনপুলিশের কাছে তার কর্মকা-ের খবর পৌঁছে যায়

পুলিশের নজর এড়াতে তিনি চন্দননগরে এসে একটা পাঠশালায় পড়াতে থাকেনএমন সময় সুহাসিনী জানতে পারলেন পলাতক বিপ্লবীদের একটা আশ্রয় দরকারসেজন্য তাঁকে শশধর আচার্য নামে একজনের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী সেজে এক বাড়িতে থাকতে হবেসেই বাড়িতে আশ্রয় নেবে বিপ্লবীরা

স্বামী-স্ত্রী সেজে অভিনয় করে যাওয়া! প্রস্তাবটা পেয়ে অবাক হলেন সুহাসিনীসেই সময়ের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়া একুশ বছরের যে কোন যুবতীর পক্ষে প্রায় অসম্ভব কাজকিন্তু সুহাসিনী বিপ্লবী নারী, নির্দ্বিধায় রাজি হলেন তিনি- এও তো দেশেরই কাজতাদের বাড়িতে গোপনে আশ্রয় নিলেন বিপ্লবীরাএদের মধ্যে অনন্ত সিংহ সবাইকে অবাক করে দিয়ে একদিন পুলিশ স্টেশনে গিয়ে আত্মসমর্পণ করলেনবাকিরা থেকে গেলেন সুহাসিনীর আশ্রয়ে আত্মগোপন করে

বাড়িতে ছয়জন মানুষআশপাশের প্রতিবেশীরা যেন বুঝতে না পারে, সেজন্য সুহাসিনী মুদি দোকান থেকে জিনিস কিনতেন খুব সাবধানেসতর্ক থাকতে হতো বাজার-সওদা করার সময়ছদ্মনাম নিয়েছিলেন বিপ্লবীরা সবাইতারপরও শেষ রক্ষা হলো নাখবর পেয়ে যায় পুলিশএকদিন গভীর রাতে কমিশনার চার্লস টেগার্টের নেতৃত্বে বাড়ি ঘিরে ফেলে পুলিশ বাহিনীফরাসী পুলিশের অনুমতি না নিয়ে গোপনে এসেছিল তারা

টের পেয়ে অস্ত্র হাতে অন্ধকারে বেরিয়ে এলেন বিপ্লবীরাসবার সামনে মাখনদেয়াল টপকে সে ঝুপ করে নামলো পুকুর পাড়েনামতেই জ্বলে উঠলো সার্চলাইটছুটে এলো গুলির ঝাঁকশত্রুর সব গুলি যেন তাকেই খুঁজে নিললুটিয়ে পড়ল মাখনএখানে এই পুকুর পাড়ে এভাবেই প্রাণ দিয়েছেন অগ্নিযুগের মহান বিপ্লবী মাখনলাল ঘোষাল

তখন তাঁর বয়স মাত্র আঠারো বছরজন্ম চট্টগ্রামে, শহীদ হলেন দূরের শহর চন্দননগরে এসেতরুণ এই বীরের শবযাত্রায় মানুষের ঢল নেমেছিলতাঁর স্মরণে এখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ আছেনদীর ধারে শ্মশানঘাটেও তাঁর স্মারক আছেমাখন মারা যাওয়ার পর সেদিন ধরা পড়েছিলেন বাকি তিনজন বিপ্লবী- গণেশ ঘোষ, লোকনাথ বল ও আনন্দ গুপ্ত

সবাই অক্ষত ছিলেন, শুধু আনন্দের পায়ে গুলি লেগেছিলতার বয়স চৌদ্দ বছর, সে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলশশধর আর সুুহাসিনীকেও গ্রেফতার করেছিল পুলিশভয়াবহ পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন সুহাসিনী- নারী বলে তাঁকে রেহাই দেয়নি তারাপরে তাঁকে আন্দামানে পাঠিয়ে দেয়ছয় বছর দ্বীপান্তরে বন্দী ছিলেন এই সাহসিনী নারী

সুলগ্নার মুখে ইতিহাসের রক্তক্ষরা এইসব কাহিনী শুনে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম পুকুর পাড়েএপার থেকে দেখলাম মাখন আর তার পুঁটিদির স্মৃতিঘেরা ভগ্নপ্রায় বাড়িটিকেচৈত্রের মাঝামাঝি, গাছের ছায়ায় চমকার হাওয়া দিচ্ছেপুঁটিদির কথা ভাবছিলাম- কী দারুণ সাহস নিয়ে প্রায় শতবর্ষ আগে এই মহীয়সী নারী বিপ্লবের কাজে নিজেকে উসর্গ করেছিলেন-

সুলগ্নার ডাকে চমক ভাঙলোচলুন, এবার আমরা যাব হেরিটেজ মিউজিয়ামেসুলগ্না বললেনঅরুণদা অপেক্ষা করছেন আমাদের জন্য

চশমা চোখে, পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা সৌম্য চেহারার অরুণ চক্রবর্তী দাঁড়িয়ে আছেন মিউজিয়ামের সামনেতিনি আমাদের ভেতরে নিয়ে গেলেনএকতলায় রবীন্দ্রনাথের ছবিকবির সঙ্গে চন্দননগরের বিশেষ সম্পর্কের কথা আর এই শহরের ইতিহাস বললেন তিনিবালক বয়সে রবীন্দ্রনাথ এসেছিলেন এখানেঅগ্রজ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ও তাঁর স্ত্রী কাদম্বরী দেবীও তখন ছিলেন চন্দননগরে মোরাণ সাহেবের বাড়ি ভাড়া নিয়েসেই বাড়ির প্রসঙ্গ আছে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিকথায়- এখানে বসেই তিনি রচনা করেছেন সন্ধ্যাসঙ্গীতআর বৌঠাকুরাণীর হাটবাড়িটি এখন আর নেই, গঙ্গা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে

চন্দননগরে ছিল ফরাসীদের কুঠিডাচ, ওলন্দাজ, ব্রিটিশদের মতো ফরাসীরাও এসেছিল এদেশে বাণিজ্য করতেএদের মধ্যে ব্রিটিশরা ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী১৬৯৬ সালের দিকে দুর্গ তৈরি করে চন্দননগরে উপনিবেশ গড়ে তোলে ফরাসীরাতারাও বাংলার গ্রামে গ্রামে চাষীদের দিয়ে জোর করে নীলের চাষ করাতোফ্রেঞ্চ উপনিবেশ হওয়ায় ফরাসীদের অনুমতি না নিয়ে হুট করে চন্দননগরে ঢুকে পড়তে পারতো না ব্রিটিশ পুলিশএ কারণেই বিপ্লবীদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছিল শহরটা

ব্রিটিশ পুলিশের তাড়া খেলে কিংবা ধরপাকড় ও গ্রেফতার শুরু হলে গঙ্গা পার হয়ে বিপ্লবীরা ঢুকে পড়তো এই শহরেদুই সা¤্রাজ্যবাদী শক্তির মধ্যে রেষারেষি আর যুদ্ধ-বিগ্রহ তখন লেগেই ছিলযে কারণে চন্দননগর অনেকবার হাতবদল হয়েছে ব্রিটিশ আর ফরাসীদের মধ্যেবন্দুকের দোকান ছিল চন্দননগরেএই শহরের ধনী বাসিন্দারা লাইসেন্স করা অস্ত্রশস্ত্র কিনতে পারতেনতা আবার হাতবদল হয়ে চলে যেত বিপ্লবীদের কাছেতাদের অস্ত্রের বড় জোগান আসতো এই চন্দননগর থেকেকলকতার বিখ্যাত অস্ত্র ব্যবসায়ী রডা কোম্পানির দোকান লুট করেও প্রচুর অস্ত্র পেয়েছিল বিপ্লবীরা

এসব ইতিহাস শেষে আমরা গেলাম পাশের ঘরেএই ঘরে রাধানাথ শিকদারের ব্যবহার করা যন্ত্রপাতি, ক্যামেরা, পাহাড়ে চড়ার গিয়ার এসব রাখা আছে প্রদর্শনীর জন্যরাধানাথ শিকদার ছিলেন হিন্দু কলেজের গণিত বিভাগের মেধাবী ছাত্রপরে তিনি সারভেয়ার হিসেবে তাঁর পেশাজীবন শুরু করেনএভারেস্ট চূড়ার উচ্চতা তিনিই নির্ণয় করেছিলেন জরিপের জটিল সূত্র ব্যবহার করে, যদিও চূড়ার নাম রাখা হয় তার প্রাক্তন বস জর্জ এভারেস্টের নামে

এ হচ্ছে কৃতিত্ব ছিনতাইয়ের ঘটনাঅরুণ চক্রবর্তী বলেনরাধানাথের কৃতিত্ব নিয়ে নিলেন প্রাক্তন সারভেয়ার-জেনারেল জর্জ এভারেস্টহিমালয়ের সর্বোচ্চ চূড়ার উচ্চতা যখন জানা গেল, মিস্টার এভারেস্ট তখন চাকরি ছেড়ে অবসরে চলে গেছেনঅথচ তার নামেই এখন সবাই চেনে পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ারাধানাথ শিকদারকে কে চেনে? কেউ নাআমরা তাঁর স্মৃতি ধরে রেখেছি এখানেরাধানাথ যখন কলেজে পড়তেন তখন সেই কলেজের শিক্ষক ছিলেন হেনরি ডিরোজিওতাঁর নেতৃত্বে চলছিল ইয়াং বেঙ্গলআন্দোলনরাধানাথ ছিলেন ডিরোজিওর শিষ্য

ব্রিটিশদের অন্যায় আর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন রাধানাথ সবসময়ব্রিটিশ অফিসাররা শ্রমিকদের বিনা পারিশ্রমিকে খাটাতোএর প্রতিবাদ করেছিলেন তিনিএ নিয়ে অফিসারদের সঙ্গে তাঁর বাদ-প্রতিবাদের ঘটনা ঘটেএই ঘটনা আদালত পর্যন্ত গড়ায়বিচারক রাধানাথকে দুশো রুপি অন্যায়ভাবে জরিমানা করেছিলেনদীর্ঘশ্বাস ফেলে অরুণ চক্রবর্তী বলেন, ‘এই হচ্ছে ব্রিটিশ বিচারকের পক্ষপাতিত্বের ছোট্ট একটি নমুনাযাক, আসুন আমি আপনাদের নিয়ে যাই আমার উপাসনালয়েসিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে একটা ঘরের সামনে দাঁড়ান তিনিজুতো খুলে ভেতরে প্রবেশ করেনআমরাও তাঁর দেখাদেখি জুতো খুলি

আমি ভেবেছি বোধহয় ভেতরে আছে কোনো বিগ্রহ কিংবা মূর্তিদেখি ঘরের দেয়াল জুড়ে বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর বড় একটা ছবিটেবিলে বসুর লেখা অনেক বইচারপাশে তাঁর ব্যবহার করা স্মারক আর জাপানের স্মৃতিচারপাশটা দেখিয়ে অরুণ চক্রবর্তী বললেন, ‘এই আমার উপাসনালয়

রাসবিহারী বসুর পরিকল্পনায় লর্ড হার্ডিঞ্জের ওপর বোমা হামলা হয়েছিল- ১৯১২ সালের ২৩ ডিসেম্বরতখন কেবলি কলকাতা থেকে রাজধানী নিয়ে যাওয়া হয়েছে দিল্লীতেসেই উপলক্ষে অনুষ্ঠান হচ্ছে জাঁকজমকের সঙ্গেঅনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছেন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ হাতির পিঠে চড়েসুদৃশ্য হাওদায় সস্ত্রীক বসে আছেন হার্ডিঞ্জ, পিছনে ছাতা ধরে আছে চামরবাহকসামনে মাহুতপ্রচ- শব্দে বোমা ফাটলো হাওদার ওপরবোমাটা ছুড়েছিল নদীয়ার বিপ্লবী বসন্ত বিশ্বাসঅল্পের জন্য বেঁচে গেলেন হার্ডিঞ্জ

হামলার পরিকল্পনাকারী রাসবিহারী বসুকে খুঁজতে থাকে পুলিশপালিয়ে বেড়ান বসুভারতের বিভিন্ন জায়গায় যান তিনিগোপনে বিপ্লবীদের সংগঠিত করতে থাকেনঅসাধারণ সংগঠন ক্ষমতা ছিল তাঁরপুলিশের চোখ ফাঁকি দেওয়ার দক্ষতাও ছিল অতুলনীয়বারবার পুলিশ তাঁর আস্তানা আক্রমণ করেছে, বারবার তাদের চোখে ধুলো দিয়ে তিনি নির্বিঘ্নে সরে পড়েছেন- ঠিক যেন ডিটেকটিভ গল্প, থ্রিলার মুভি

অথচ গল্প নয় এই কাহিনী, বানানো মুভিও নয়- ইতিহাসের সত্যসারা উপমহাদেশ জুড়ে তখন ব্রিটিশের জাল বিছানোতার ভেতর দিয়ে তিন বছর ধরে চলেছিল পুলিশের সঙ্গে দুঃসাহসী এই বিপ্লবীর লুকোচুরি খেলাধরা পড়লে পরিণতি হতো প্রাণঘাতী- এমন খেলা সবাই খেলতে পারে নাকেউ কেউ পারেরাসবিহারি ছিলেন তেমনি একজন বিপ্লবী। 

স্বাধীনতার লক্ষ্যে প্রবাসী পাঞ্জাবীরা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন গদর পার্টিএই পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন রাসবিহারী- নেতৃত্বের আসনে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেনসিপাহী বিদ্রোহের আদলে একটি অভ্যুত্থানের প্ল্যান করেছিলেন গদর বিপ্লবীরাঅভ্যুত্থানের দিন ঠিক হয় ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৫ভারতীয় বিপ্লবীদের সশস্ত্র সংগ্রামে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করতে সম্মত হয়েছিল জার্মান সরকার

অস্ত্র সংগ্রহের উদ্যোগটা শুরু হয়েছিল বহুদিন আগে বাংলার আরেক বিপ্লবী বাঘা যতীনের (যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়) মাধ্যমে১৯১২ সালে জার্মানির যুবরাজ কলকাতায় এলে যতীন তার সঙ্গে দেখা করে অস্ত্র সাহায্য চেয়েছিলেনতারপর এই উপলক্ষে বহুবার বহু সূত্রে জার্মান সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন প্রবাসী বিপ্লবীরা, সহায়তা চেয়েছেনশেষ পর্যন্ত অস্ত্র ভর্তি জাহাজ পাঠাতে রাজি হয়েছিল জার্মান সরকার

কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, গদর পার্টির প্ল্যানটা জেনে যায় ব্রিটিশ পুলিশব্যর্থ হয় অভ্যুত্থানের চেষ্টাধরা পড়তে থাকেন নেতারারাসবিহারীর আস্তানায়ও হানা দেয় পুলিশ- টের পেয়ে পুলিশকে বোকা বানিয়ে আবার পালালেন বসুজাহাজ ভর্তি অস্ত্র পাঠানোর তথ্যও পেয়ে যায় ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্সএকটি জাহাজ আসবার কথা ছিল উড়িষ্যার উপকণ্ঠে

সেই অস্ত্রের চালান সংগ্রহ করার জন্য কয়েকজন সঙ্গীসহ উড়িষ্যার বালেশ্বরে আত্মগোপন করে ছিলেন বাঘা যতীনসেই খবরও পেয়ে যায় পুলিশতাদের তাড়া খেয়ে বুড়িবালাম নদীর তীরে আত্মরক্ষার জন্য প্রস্তুত হলেন যতীন ও তাঁর চারজন সঙ্গীতাঁদের হাতে রডা কোম্পানি থেকে লুট করা মাউজার পিস্তলঅন্যদিকে প্রতিপক্ষ ব্রিটিশ বাহিনী

নেতৃত্ব দিচ্ছে লেফটেন্যান্ট রাদারফোর্ডবিপ্লবীদের গুলি ফুরিয়ে গেলে যুদ্ধ শেষ হলোপাঁচজন বিপ্লবীর সবাই আহত অথবা নিহতপরদিন বালেশ্বর হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস নিলেন বাঘা যতীনদিনটা ছিল ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯১৫ সাল

এরপর রাসবিহারী বসুকে আবার দেখা গেল জাপানেছদ্মনামে পাসপোর্ট তৈরি করে পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে কলকাতা বন্দর থেকে জাহাজে চেপে তিনি চলে যান জাপানভাষা জানা নেই, নতুন এক দেশধীরে ধীরে সেখানে কিভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন তিনি, বিয়ে করে সংসার পাতলেন, তারপর ইন্ডিয়ান কারির রেস্টুরেন্ট খুললেন টোকিওতে- সেসব আরেক কাহিনী, দীর্ঘ ইতিহাস- যেমন বিস্ময়ের তেমনি রোমাঞ্চকরব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি চলতে থাকলো দেশের কাজধীরে ধীরে বসুর এই রেস্টুরেন্ট হয়ে উঠলো প্রবাসী বিপ্লবীদের নিরাপদ আশ্রয় ও শক্তিশালী ঘাঁটি

জাপানে এসেছিলেন বিপ্লবী মানবেন্দ্রনাথ রায় (এম এন রায়)অস্ত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে ফিলিপিন্স, জাপান, চীন, আমেরিকা ঘুরে তিনি চলে যান মেক্সিকোতেসেখানে পৌঁছে তাঁর জীবনের গতিপথ যায় পাল্টেধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের (কমিন্টার্ন) একজন গুরুত্বপূর্ণ তাত্ত্বিক নেতা১৯২০ সালে এম এন রায় মস্কো গিয়েছিলেন কমিন্টার্নের ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার জন্য

ভ্লাাদিমির লেনিন তাঁকে উষ্ণ সংবর্ধনা জানিয়েছিলেনলেনিনের নির্দেশে তাসখন্দ যান এম এন রায়সেখানে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন তিনিলেনিনের মৃত্যুর পর স্তালিনের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ দেখা দিলে দেশে ফিরে আসেন এম এন রায়এভাবে মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়েছিলেন অদম্য সাহসী বাঙালী বিপ্লবীরা

প্রবাসীদের নিয়ে জাপানে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি গড়ে তুলেছিলেন রাসবিহারী বসুদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নেতাজির আজাদ হিন্দ ফৌজের সঙ্গে যোগ দেয় বসুর ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মিযে স্বাধীনতার জন্য এত আত্মত্যাগ, তা দেখে যেতে পারেননি বসুতিনি প্রয়াত হয়েছেন জাপানে ১৯৪৫ সালে, সেখানেই সমাহিত তিনিমৃত্যুর সময় বিপ্লবীর শেষ ইচ্ছা ছিল তাঁর দেহাবশেষ যেন চন্দননগরে নিয়ে আসা হয়সেই ইচ্ছা পূরণ হয়েছেতাঁর দেহভস্ম এনে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে যথাযোগ্য মর্যাদায়

অরুণ চক্রবর্তী বললেন, ‘আমরা এখানে রাসবিহারী রিসার্চ ইনস্টিটিউট গড়েছি, তাঁর স্মরণেআজও তিনি জাপানে অত্যন্ত সম্মানিতজাপানী তরুণ-তরুণীরা আসে এখানে- এই মহান বিপ্লবীর জীবন সম্পর্কে জানার জন্যএখানে থাকে তারা যতদিন খুশি- গবেষণার রসদ জোগাড় করে নিয়ে যায়

বিপ্লবী কানাইলাল দত্ত

অরুণ চক্রবর্তীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে এলাম আমি আর সুলগ্নাবাইরে দুপুরের রোদ, তার ভেতর দিয়ে এগোই আমরাআমাদের পরবর্তী লক্ষ্য প্রবর্তক সংঘের আশ্রমসেখানে দেখা পাবো শর্বরী বোসেরতিনি বিপ্লবী কানাইলালের নাতনিঅটোতে উঠতে উঠতে সুলগ্না বলেন, ‘চলুন, এবার নাতনির মুখে শুনবেন বিপ্লবী দাদুর জীবন কাহিনী’ (চলবে...)

×