শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। আর তেমন অধিকার সব নাগরিকের। ছাত্রছাত্রীর মহাসম্মিলনে শিক্ষার বলয় মুখরিত হবে এটাই দেশ-জাতির জন্য অনন্য পাওয়া। আর সমসংখ্যক নারী যেমন দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতন, অন্যায় অবিচারের শিকার হয় সেখানে লেখাপড়ার পবিত্রতম অঙ্গনটিও বিচ্ছিন্ন কিংবা আলাদা থাকে না। তাই সহপাঠী কিংবা শিক্ষকের হাতে ছাত্রী লাঞ্ছিত হওয়ার অপদৃশ্য সত্যিই ভাবিয়ে তোলার মতো। শিশু কন্যা থেকে কিশোরী পরবর্তীতে উদীয়মান তরুণীরা কোথায় নিরাপদ?
তেমন প্রশ্ন গণমাধ্যমের খবর হচ্ছে ধারাবাহিকভাবে। সেটা সমাজের আদি ও মৌলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর লাগাতার এক অসহনীয় দুর্ভোগ। ক্ষুদ্র পারিবারিক আঙিনা থেকে বৃহত্তর সামাজিক বলয় কোথায় সমসংখ্যকের স্বচ্ছ-স্বাভাবিক জীবনের নিরাপত্তা, স্বাচ্ছন্দ্যময় সময়? বিভিন্ন অনুষ্ঠান আর প্রতিষ্ঠানে সব সময় সরব হওয়া এক অনাকাক্সিক্ষত দমন-পীড়ন। সম্প্রতি মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন সংগঠনও এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, প্রতিবাদে মুখর হয়। ছাত্রীদের সুরক্ষার বলয় নিশ্চিত করা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের জন্য জরুরিই শুধু নয় সচেতন দায়বদ্ধতাও।
সারাদেশে নানামাত্রিক দুর্যোগ আর অভিযোগে ছাত্রী হয়রানির এক অনাকাক্সিক্ষত দুর্ভোগ। যা থামাতে না পারলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যথার্থ মর্যাদা ক্ষুণ্ণই নয় ছাত্রীদের ওপরও এক অনাবশ্যক হেনস্তা আর হয়রানির কূটকৌশল সংগঠনটি আপত্তি করছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ছাত্রীদের জন্য যথার্থ নিরাপত্তার বেষ্টনী দিতে অনীহা কিংবা উদাসীনতার অসহনীয় চিত্রও উঠে আসতে দেরি হচ্ছে না। শুধু তাই নয় জঘন্যতম এমন অনাচার দৃশ্যমান হয় ঠিকই কিন্তু প্রতিরোধ, প্রতিকারের কোনো ব্যবস্থা কেমন যেন পেছনে পড়ে থাকে। যেসব অনিয়ম বিশৃঙ্খল সামনেই আসে না সেখানে বিচারিক ব্যবস্থা তো একেবারে অতল গহ্বরে। তাই অপরাধী পার পেয়ে যাওয়াও নিয়মতান্ত্রিক এক অব্যবস্থাপনা বলতে অসুবিধাই থাকে না।
আর শিক্ষকের হাতে ছাত্রী লাঞ্ছিত দুঃসহ অঘটন দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা এক জঘন্য অপসংস্কার। সঙ্গতকারণে একই প্রতিষ্ঠানে যখন শিক্ষকের হাতে কোনো ছাত্রী অপমানিত, অসম্মানিত কিংবা শারীরিক মানসিকভাবে হেনস্তার আবর্তে পড়ে সেটা যেন বিচারহীনতার কবলে পড়া আর এক অবর্ণনীয় দুঃসহ যন্ত্রণা। এমন দেখা গেছে ছাত্রী লাঞ্ছিত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট শিক্ষক আন্দোলনের ঝড় ঝাপটায় সাময়িক বরখাস্ত হন। চাকরি হারান না কিন্তু পরবর্তীতে সেই শিক্ষকই বহাল তবিয়তে তার প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়ে পেশাকে সাবলীলভাবে এগিয়ে নিচ্ছেন।
এটা শুধু যে আইনগত, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা তা কিন্তু নয় অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় সংশ্লিষ্ট ছাত্রীর অভিভাবকও মানসম্মান নষ্ট হওয়ার ভয়ে শেষ নিষ্পত্তি পর্যন্ত যেতেই চায় না। এটাও আর এক দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক অপসংস্কার। শাস্তির আওতা পর্যন্ত যেতে না পারাও প্রাতিষ্ঠানিক দায়বদ্ধতার চরম আশাহতের নিঃশব্দ বেদনা। কবি গুরুর ভাষায় ‘প্রতিকারহীন শক্তির অপরাধে, বিচারের বাণী নীরবে, নিভৃতে কাঁদে।’
এমন তথ্য ও বিড়ম্বিত করে ভুক্তভোগীদের। সংশ্লিষ্ট শিক্ষক জেল হাজত পর্যন্ত যান। সেটাও ওইটুকুই। তারপর সবার চোখের সামনে সেই অপরাধী জেল থেকে ছাড়াও পান। কোনো বিচার ব্যবস্থার আওতাই আসেন না। সত্যিই আর এক অপসংস্কারের অনন্তকালের দুরারোগ্য ব্যাধি।
অপরাধী যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আসতে না পারে তা হলে জঘন্য অপকর্মের সুরাহা কোথায়? আসলেই কোনো প্রতিকার, প্রতিবাদ কখনো সেভাবে ভুক্তভোগীর জন্য স্বস্তিদায়ক এবং সম্মানজনক হতে পারেও না। এমন তথ্য ও হতাশাব্যঞ্জক অভিযুক্ত শিক্ষক পুনরায় তার নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত হয়ে বহাল তবিয়তে কর্মজীবনের অনুষঙ্গ হতে কখনো বেগ পেতে হয়ইনি। শুধু কি তাই? এমনও জানা গেছে, অন্য আর একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেতে। যা কি না ছাত্রীদের প্রতিষ্ঠান। আবার অন্য চিত্রও সুখকর কিংবা আইনানুগ নয়ই। দেখা গেছে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে পিটিয়ে একেবারে মেরে ফেলা। সেটাও সঙ্গত কিংবা কাক্সিক্ষত হতে পারে না।
তবে বিজ্ঞজনদের কাছ থেকে উপদেশ-পরামর্শ আসছে ছাত্রীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুরুষ শিক্ষক নিয়োগের আগে তার জীবনের বিভিন্ন সময় এবং কার্যক্রমেরও পর্যালোচনা পরিস্থিতির ন্যায্যতা। সেখানে বিচার ব্যবস্থারও হরেক পর্যালোচনা জরুরি এবং সচেতনতার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। শুধু তাই নয় নিয়মানুগ কিছু প্রয়োজনীয় কর্মযোগও নিতান্ত আবশ্যক।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে হাইকোর্ট নির্দেশিত আইনকানুন, বিধি-নিয়ম কড়াভাবে প্রচলন করাও পরিবেশ পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনার আর এক সুষম বিচারিক ব্যবস্থাপনার নির্ণায়ক। তবে সব ধরনের বিধি ব্যবস্থা যতই জরুরি হোক না কেন গুরুত্বপূর্ণ হলো শিক্ষার্থীদের নির্বিশেষে মানুষ ভাবতে হবে। ছাত্র কিংবা ছাত্রী নয়। তারা প্রত্যেকেই শিক্ষা অর্জনের জন্য পবিত্র অঙ্গনটিতে সম্পৃক্ত হয়। ছাত্র কিংবা ছাত্রী হিসেবে নয় বরং জাতি গড়ার মহান প্রতিষ্ঠানে শুধু নিজেকে তৈরি করতে নিঃশেষে নিবেদন করে।
অপরাজিতা প্রতিবেদক