ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

প্রযুক্তিতে কি নারী পিছিয়ে?

নাজনীন বেগম

প্রকাশিত: ০১:১৩, ৯ আগস্ট ২০২৪

প্রযুক্তিতে কি নারী পিছিয়ে?

ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশে সমসংখ্যক নারীর এগিয়ে যাওয়া অবধারিত কর্মযোগ

ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশে সমসংখ্যক নারীর এগিয়ে যাওয়া অবধারিত কর্মযোগ। শুধু বাংলাদেশ নয় আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির নতুন বাংলাদেশ, সময়ের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন তাল মিলিয়ে নারীর কর্মক্ষেত্রে সক্ষমতা যুগের দাবি। গত শতকের শেষ অবধি এবং চলমান অবস্থায় নারীদের নানামাত্রিক পেশা বাছাই, পছন্দ এবং সম্পৃক্ত হতে কিছু ব্যতিক্রমী ধারা নিজেদের সামনে দৃশ্যমান করা সত্যিই এক অনন্য তাগিদ।

কোনো এক সময় মেয়েরা শিক্ষকতা এবং চিকিৎসকের মতো মানব সেবামূলক কাজের জায়গা তৈরি কতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করা চিরস্থায়ী ঐতিহ্যিক সম্ভারে গভীরভাবে সমর্পণ করা। তার সঙ্গে একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশক পেছনে ফেলা আসা সময়কে যেন জোর কদমে অতিক্রম করতে বদ্ধপরিকর। নারীদের এই নব আঙিনা সমতাভিত্তিক সমাজ ও তথ্যপ্রযুক্তির বলয়েও নিরন্তর এগিয়ে যাওয়া। বিশেষ করে যে ব্যবসা-বাণিজ্যে নারীদের যোগসাজশ ছিল হাতেগোনার অবস্থায়।

সেখানে তারা আজ ক্রমবর্ধমান ধারায় নিজেদের সাবলীলভাবে তৈরি করে নতুন সময়ের অনুষঙ্গ হচ্ছে বিশেষ করে উদ্যোক্তা তৈরিতে বাংলার নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অভিগমন সারাদেশের এক অনন্য কর্মযাত্রা তো বটেই। উদ্যোক্তা বনে যাওয়া বর্তমান নারীদের রন্ধন ও বুটিক শিল্পে যে অবারিত প্রসার তা সত্যিই সমসংখ্যককে স্বাবলম্বী করার সহজাত প্রয়াস।

মানুষের নিত্য জীবনের আহার যোগ যা প্রয়োজন এবং জৈবিক তাড়না, চাহিদায় করতে হয়। তেমন নিত্য সাংসারিক কর্মপ্রবাহ আজ পারিবারিক জায়গা থেকে সামাজিক বলয়কে পূর্ণ থেকে পূর্ণতর করে যাচ্ছে। হোটেল, রেস্তোরাঁয় ভিড় তা কিন্তু বলা যাবে না। তবে হাতে তৈরি রান্নার কদর বেড়েছে বহুগুণ। যা গৃহস্থালির ছোট পরিসরকে বৃহত্তর সমাজের অনুষঙ্গ করেছে।

যার কারণে দৃশ্যমান হতে সময় লাগছে না অনেক পাকা রাঁধুনি গৃহিণীরা প্রায়শ গৃহকোণে তেরি করা রন্ধন শিল্পীদের মজাদার বৈচিত্র্যিক খাবারে অভ্যস্ত হচ্ছেন। আর বুটিক শিল্পে নারীদের সহজাত সংযোগ সেই পুরাকালেরই ঐতিহ্য। কাঁথা সেলাই করা বহু যুগ-যুগান্তরের নারী সমাজ আজও তেমন সুূঁই সুতার ফোঁড় থেকে মোটেও বিচ্ছিন্ন নয়। সেখানে নিত্য নতুন আধুনিকতার বুটিক শিল্পের অনন্য বাহার বিমুগ্ধ এবং চমকৃৎ হওয়ার মতোই।

এখানে সবচেয়ে বড় সুযোগ-সুবিধা ঘরে বসেই পারিবারিক আঙিনায় তৈরি করা পোশাকের বাহারি পণ্য আজ বাজারজাত হতেও সময় লাগছে না। তৈরি করা সালোয়ার কামিজে নিপুণ হাতে শিল্পকর্ম নজর কাড়াই নয় বরং গ্রাহকদের মনোরঞ্জনেও সমানভাবে এগিয়ে থাকে। আর এমন সব কর্মযাত্রায় বর্তমান সময়ে প্রযুক্তিনির্ভর হওয়া ছাড়াও কোনো গত্যন্তর নেই।

কম সময়ে স্বল্প খরচ বিকিনির যে সুলভ ব্যবস্থাপনা তাও এ যুগের বহু পেশাকে হাতের নাগালে এনে দেয়। আধুনিক ও তথ্যপ্রযুক্তির বাংলাদেশে নারীদের শৈল্পিক অগ্রগামিতায় যন্ত্র সভ্যতাকেও আয়ত্বে আনতে সবাইকে মনোযোগ দেওয়া আর সেখানে নারীদের কিছুটা পশ্চাৎবর্তিতা উঠে আসে গবেষণা প্রতিবেদনে। বলা হচ্ছে যন্ত্রকে প্রতিনিয়ত ব্যবহারে নারীরা পুরুষদের তুলনায় কিছুটা পশ্চাৎবর্তী তো হয়েই যাচ্ছে। ক্ষুদ্র মুঠো ফোনটিও এখন বাংলার ঘরে ঘরে সিংহভাগ মানুষের হাতে।

সেখানে নারী-পুরুষ সকলের হাতে ছোট্ট যন্ত্রটি শোভা পেলেও ব্যবহারে মেয়েরা নাকি পেছনে পড়ে আছে। বিশেষ করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে যখন টাকা পয়সা লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রযুক্তির ব্যবহারে পুরুষের এগিয়ে থাকার দৃশ্য প্রতীয়মান হচ্ছে। মোবাইলে নাকি লেনদেন হচ্ছে কোটি কোটি অর্থ। অর্থনৈতিক যোগসাজশে মোবাইল ব্যাংকিং এখন সময় বাঁচাচ্ছে, পণ্য সরবরাহে গ্রাহকের কাছে সম্পৃক্ত হতেও দেরি লাগছে না।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ওপর এক সামাজিক জরিপ চালানো হয় সম্প্রতি। আর এমন প্রযুক্তির সেবায় নারীদের চেয়ে পুরুষের অংশীদারিত্ব বেশি বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে আসে। নারী-পুরুষের এমন পার্থক্য প্রায় ৩৫.৪২ শতাংশ। জরিপে দৃশ্যমান পুরুষরা লেনদেনে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করছেন ৮২.৫৮ শতাংশ। শুধু তাই নয় তাদের হিসাব নম্বরও আছে। সেখানে নারীরা এমন ব্যাংকিংয়ে যুক্ত হচ্ছেন মাত্র ৪৭.১৬ শতাংশ।

মুঠোফোন প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘গ্লোবাল ডিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশনস অ্যাসোসিয়েশন’-এর (জিএসএমএ) ‘দ্য মোবাইল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২৪’ প্রতিবেদনে এমন সুস্পষ্ট তারতম্য উঠে আসে। যা সমতাভিত্তিক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বিপরীত পর্যায়। এখানে আরও প্রতীয়মান হয় বাংলাদেশে ৮৫ শতাংশ পুরুষ ও ৬৮ শতাংশ নারী মুঠোফোনের মালিক।

এখানেই মালিকানায় নারী ১৭ শতাংশ পেছনে চলে যাওয়ার তথ্য মোটেও স্বস্তিদায়ক নয়। কারণ জনসংখ্যায় তারা সমসংখ্যক। আবার ইন্টারনেট ব্যবহারে পুরুষরা ৪০ শতাংশ হলে নারীরা সেখানে ২৪ শতাংশ । এখানেও পার্থক্য ১৬ শতাংশের মতো। যা নারীদের পশ্চাৎবর্তিতাকে দৃশ্যমান করে তুলছে। যা সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণকে অনেক বেশি পেছনে নিয়ে যাবে। নারী-পুরুষের এমন তারতম্যে হরেক কারণও উপস্থাপিত হয়েছে।

সবার আগে নির্দেশিত হয়েছে গৃহকোণে আটকাপড়া নারীদের বাইরে যাওয়ার সুযোগ কম। যা পুরুষের বেলায় নিয়তই দৃশ্যমান হয়ে থাকে। ফলে তাদের প্রযুক্তির আঙিনায় অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য আর অবারিত করতে পারছে। তা ছাড়া মেয়েদের যন্ত্র সভ্যতায় অনাগ্রহের কারণও উপেক্ষণীয় নয়। এটাও বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হয়েছে। তবে যেসব কারণ উঠে আসছে তা যৌক্তিক, সত্য এবং বাস্তবিক।

কিন্তু অতি অবশ্যই এমন পেছনে পড়া অতিক্রম করা মোটেও কঠিন নয়। নারী সমাজ অনেক উন্নয়ন কর্মযোগে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসাই শুধু নয় সফলকাম হওয়াও পরিবেশ পরিস্থিতির অপরিহার্যতা। সুতরাং আধুনিক প্রযুক্তির বদলে যাওয়া বাংলাদেশ নারী পুরুষের সহগামিতায় আরও এগিয়ে যাবে।

×