ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আশ্রয়ণে স্বাবলম্বী রাবেয়া

তাহমিন হক ববী

প্রকাশিত: ০১:৪০, ৩১ মার্চ ২০২৩

আশ্রয়ণে স্বাবলম্বী রাবেয়া

দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন, সুপরিসর রাস্তা ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত আশ্রয় প্রকল্প

দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন, সুপরিসর রাস্তা ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত আশ্রয় প্রকল্প দেখে মনে হবে গ্রামের ভেতরে গড়ে উঠেছে একটি আধুনিক গ্রাম। এখানে ঘর বরাদ্দ পেয়ে আশ্রয়হীনরা তাদের আশ্রয়হীনের অপবাদ ঘোচাচ্ছেন। একটি বাড়ি, একটি আশ্রয় বদলে দিয়েছে অসহায় নারীদের জীবন। আশ্রয়ণ মানে কেবল আবাসনের ব্যবস্থা নয়; বরং এটির পরিধি আরও ব্যাপক ও বিস্তৃত। উপকারভোগীরা দুই শতাংশ করে জমি, রঙিন টিনের পাকা ঘর, বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছে। 
এক সময় জ্যৈষ্ঠের তাপদাহ, শ্রাবণের ঝড়োধারা, মাঘের হাড় কাঁপানো শীতসহ সব প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে যাদের খোলা আকাশের নিচে আজন্ম লড়াই করতে হতো, তাদের জন্যই মূলত মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এসব ঘর তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে তারা দরিদ্রতার অভিশাপমুক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হবে।
এ প্রকল্পটি এটি দারিদ্র্য বিমোচনে শেখ হাসিনা মডেলের এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করতে ইতোমধ্যে শুরু করেছে। আশ্রয়ণের জমি ও পাকা ঘর পেয়ে জীবন বদলে যেতে শুরু করেছে অসহায় নারীদের। সারা জীবনের চেষ্টায় যারা মাথাগোঁজার মতো এক টুকরো ভূমি সংগ্রহ করতে পারেনি। আজ তারা সম্পদশালী হতে স্বপ্ন দেখছে। আর এ স্বপ্ন দেখাচ্ছে স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থানীয়রা বলছেন যখন আশ্রয়হীনের মতো ভূমিহীনরা গাছ তলায়, ফুটপথে বা অন্যের ছাদের নিচে পশুপাখির মতো বসবাস করত তারা আজ স্বাবলম্বী হতে শিখছে। এটা কেবল সম্ভব হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়ায়।
উত্তরাঞ্চলের জেলা নীলফামারীর বিভিন্ন স্থানে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়ার পর তারা আজ স্বাবলম্বী। ঘরের পাশে গড়ে তুলেছে, ক্ষুদ্র ব্যবসা, সবজির মাঁচা, গরু-ছাগল পালনের জন্য করেছে গোয়ালঘর। খালি জমিতে বেগুন, মরিচসহ বিভিন্ন ধরনের শাক। এ সবের  সমাহার জানান দিচ্ছে তারা ঘর ও ভূমি পেয়ে স্বাবলম্বী হতে শিখছে। নীলফামারীতে রাবেয়া, মোতাহারা, মুন্নী ও শিরিনার মতো অনেক নারী প্রধানমন্ত্রীর ঘর পাওয়ার পর নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছেন। 
রাবেয়া : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার আশ্রয়ণের রঙিন টিনের পাকা বাড়ি পেয়ে রঙিন স্বপ্ন পূরণ হয়েছে রাবেয়ার। উপহার পাওয়া জমি ও ঘরের ধারে খুলেছে ছোট মুদির দোকান। বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। রাবেয়ার ভাগ্য পরিবর্তনের খবর পেয়ে স্বামী ফিরে এসেছে রাবেয়ার ঘরে। রাবেয়ার জীবনের দুঃখকষ্টের গল্পটা অনেক বড়। এক সময় ভেবেছিল এ জীবন রেখে কি লাভ। কিন্তু না  রাবেয়া  মনোবলকে শক্ত করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সংগ্রামী হয়ে ওঠে। ভূমিহীন গৃহহীন রাবেয়া পেয়ে যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার আশ্রয়ণের ঘর। এখন রাবেয়া ঠান্ডা মাথায় নিজেকে গুছিয়ে তুলছেন। 
রাবেয়ার জীবনের গল্পটা ছিল অন্য রকম। বিয়ের পর থেকে অভাব অনটন লেগেই থাকত নীলফামারী সদরের পলাশবাড়ীর বালাপাড়া গ্রামের রাবেয়া বেগমের সংসারে। অভাব-অনটন ও ধার-দেনার চাপে এলাকা ছেড়ে চলে যান রাবেয়ার স্বামী। এদিকে রাবেয়ার বড় ছেলেও নেয়নি মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব। মাথাগোঁজার ঠাঁই ছিল না তার। পরে ইউনিয়ন পরিষদের মাঠের ধারে একটি ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে নাতনিকে নিয়ে আশ্রয় নেন রাবেয়া। পাশাপাশি কাজ করত কৃষি শ্রমিক হিসাবে। বিভিন্ন কৃষকের জমিতে ফসল তোলা, নিড়ানি দেওয়া, ধান রোপণ করা। এভাবেই চলছিল রাবেয়ার জীবন। স্বামীও ফিরে আসে না, খোঁজখবরও নেয় না। 
কিন্তু আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে রাবেয়ার। নীলফামারীর পলাশবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রী উপহার হিসাবে একটি রঙিন টিনের পাকা সরকারি ঘর পেয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়ে ঘরে ফিরেছেন তার স্বামী। আশ্রয়ণ প্রকল্পের এক পাশে একটি মুদিদোকান খুলে নাম দিয়েছেন রাবেয়া স্টোর। সেই দোকানও প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছেন রাবেয়া বেগম। রাবেয়া বেগম  বলেন, আগে আমি পলাশবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ওখানে ছিলাম। আমার স্বামী ছিল না, একা থাকতাম।

আমার ছেলেও দেখত না, মেয়ে সংসার চালাই তো আর মেয়ের বাচ্চাটাকে নিয়ে আমি থাকতাম মানুষের জায়গায়। এখন আমাকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা ঘর দেওয়ার পর আমার স্বামীও ফিরে আসছে। মুদিরদোকান দিয়ে এলাকায় বেঁচাবিক্রি ভালো হচ্ছে। চলিফিরি খাচ্ছি দোকান দিয়ে। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। 

×