ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

সতর্ক থাকুন!

সঙ্গীর এই লক্ষণগুলো দেখলে সতর্ক হন! ভালোবাসার আড়ালে লুকিয়ে থাকা বিপদ

ওয়াহেদ রাজু

প্রকাশিত: ১৭:৪৪, ২১ এপ্রিল ২০২৪; আপডেট: ১৮:১১, ২১ এপ্রিল ২০২৪

সঙ্গীর এই লক্ষণগুলো দেখলে সতর্ক হন! ভালোবাসার আড়ালে লুকিয়ে থাকা বিপদ

সাইকোপ্যাথের ভালোবাসা মিষ্টি বিষের মত মারাত্মক

বিকৃত মানসিকতার মানুষ বা সাইকোপ্যাথের সাথে প্রেম? আসলে কিন্তু প্রতি ১০০ জনের মাঝে একজন মানুষ সাইকোপ্যাথ হতে পারেন। তারমানে, আপনার ভালোবাসার মানুষটিও সাইকোপ্যাথ হওয়ার একটি সম্ভাব্যতা রয়েছে। বুঝবেন কী করে তিনি সাইকোপ্যাথ? চেহারা দেখে তো আর ভেতরটা বোঝা যায় না!

সিনেমা দেখে আমাদের ধারনা হয়ে থাকে সাইকোপ্যাথ মানেই তার চেহারা ক্রূর, আচরণ রুক্ষ ও সে পেশায় খুনি। আসলে বেশিরভাগ সাইকোপ্যাথ আসলে সন্ত্রাসী নয়। বরং তারা সাধারণ মানুষের মতোই জীবনযাপন করেন। এ কারনে সাইকোপ্যাথ বোঝার উপায় কম। 

তবে সব বিশেষজ্ঞই স্বীকার করেন, সাইকোপ্যাথরা সমাজবিমুখী হয়, তাদের সহমর্মিতা, অনুশোচনা কম হয়, তারা মারমুখী স্বভাবের হয় ও হুটহাট সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের অবশ্য কিছু ভালো গুণও থাকে। যেমন তারা মানুষের ব্যাপারে ছোট ছোট বৈশিষ্ট্য খেয়াল করে ও কথোপকথনে সাবলীল হয়। তারা পেশাগত ক্ষেত্রেও সফল হয়। 

কিন্তু কী করে বুঝবেন আপনার প্রিয় মানুষটি সাইকোপ্যাথ! বিশেষ কিছু লক্ষণ যদি ক্রমাগত নজরে পড়তে থাকে, তাহলে অবশ্যই সচেতন হোন।

১. সাইকোপ্যাথের সাথে প্রেম করতে গেলে সবার আগে যে বিষয়টিতে খটকা লাগবে তা হলো প্যাথোলজিক্যাল লাইং বা মিথ্যাচার। তারা সঙ্গীর সামনে ভালো সাজার সমূহ চেষ্টা করে ও তার উদ্দেশ্যে অনেক অনেক মিথ্যা বলে থাকে। তবে তা ধরতে পারা সহজ নয় কারণ তারা অনেক সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যা উপস্থাপন করে।২.নিজেকে নিয়ে খুবই গর্ব বোধ করে সাইকোপ্যাথরা। সঙ্গীকে অনেক সময়েই ছোট করে দেখার প্রবণতা দেখা যায় তাদের মাঝে। এমনকি প্রেমিক বা প্রেমিকাকে নিয়ন্ত্রন করার উদ্দেশ্যে তার আত্মবিশ্বাস ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা চালাতে পারে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘গ্যাসলাইটিং’। তারা সাধারণত এই কাজটি সহজে করতে পারে কারণ তারা প্রেমিক/প্রেমিকাকে খুব কাছে থেকে পর্যবেক্ষণ করে। সঙ্গীকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে প্রচণ্ড রাগারাগিও করে তারা। এমনকি নিজের ফায়দা ওঠাতে অনুনয়ের আশ্রয়ও নেয় তারা।৩.গবেষণা থেকে দেখা যায়, সাইকোপ্যাথদের মস্তিস্ক এমনই, যে তারা সহজে অনুশোচনায় ভোগে না। এতে মানসিকভাবে বেশি আহত হয় তার প্রেমিক বা প্রেমিকা। এমনকি, সে যত বড় সাইকোপ্যাথ, তার মাঝে সম্পর্কে প্রতারণা করা ও প্রেমিক/প্রেমিকাকে লুকিয়ে অন্য সম্পর্কে জড়ানোর প্রবণতা বেশি হয়।৪. সাইকোপ্যাথরা অন্যের প্রতি সহমর্মিতা দেখাতে পারে না বললেই চলে। এ কারনেও তাদের সাথে সম্পর্কে থাকা খুবই যন্ত্রণাদায়ক। গবেষণায় দেখা যায়, তাদের মাঝে আসলে সহমর্মিতা আছে, কিন্তু তারা এই অনুভুতিটাকে এড়িয়ে চলে। এটাও দেখা যায়, তারা আসলে জানে তারা প্রেমিক/প্রেমিকাকে কষ্ট দিচ্ছে, তারপরেও কাজটি করে তারা। সাইকোপ্যাথদের মাঝে সোশিওপ্যাথি ও নার্সিসিজমের বৈশিষ্ট্যও দেখা যায়, এসব কারণেই তারা প্রেমে প্রতারণা করে অহরহ।৫.গবেষণায় দেখা যায়, সাইকোপ্যাথের সাথে প্রেম করতে গিয়ে পুরুষ ও নারী ভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। নারীরা সাইকোপ্যাথ প্রেমিকের আচরণে  হতাশ হয়ে পড়েন ও একটা সময় তাকে ছেড়ে চলে যান। অন্যদিকে পুরুষরা সাইকোপ্যাথ প্রেমিকার সাথে যত সময় কাটান, ততই ভয়ে থাকেন যে প্রেমিকা তাকে ছেড়ে চলে যাবে।আপনার সঙ্গী আপনার মস্তিষ্ককে নিজের মতো নিয়ন্ত্রণ করবে৬. সাইকোপ্যাথের সাথে সম্পর্ক শেষ করতে চাইলে অনেকসময়েই দেখা যায় সে দুঃখিত হয়। কিন্তু সে দুঃখিত হয় শুধুমাত্র এই কারনে, যে প্রেমিক/প্রেমিকাকে নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ হারালো সে। এছাড়া তার সাথে সাধারণত সম্পর্কে ফিরে যাওয়ার চেষ্টাও ব্যর্থ হয়, কারণ তারা নিজের ঘাড়ে দোষ নিতে রাজি হয় না। মাঝে মাঝে নতুন ‘ভিকটিম’ খুঁজে না পেলে তারা প্রাক্তন প্রেমিক বা প্রেমিকার কাছে ফিরে আসে, কারণ সাইকোপ্যাথরা পরজীবী ধরণের জীবনযাপন করে। সে নিজে সঙ্গীর কোনো কাজে না আসলেও সঙ্গীর থেকে দাবি করে ষোলোআনা।৭.অন্যের দুঃখে অদ্ভুত আনন্দ পান তাঁরা। কাউকে শারীরিক কষ্ট দিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগেন এই ধরনের মানুষ। এ সব থেকে বোঝা যায় যে, সাইকোপ্যাথদের সাথে সম্পর্কে থাকাটা খুব সহজ নয়। এরপরেও অনেকে সাইকোপ্যাথদের নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো মেনে নিয়েই তাদের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে থাকে।সাইকোপ্যাথের মস্তিষ্ক সাধারণ মানুষের চেয়ে আলাদা; Image Source: scienceleadership.comআলোচনার স্বার্থে মনে করুন, শারমিন ও রাজু নামের দুজন সম্প্রতি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছে, কিন্তু শারমিনের আচরণের কিছু বিষয় ধীরে ধীরে রাজুকে ভাবিয়ে তুলছে।

এখানে মনে রাখতে হবে, যদিও নারীদের উদাহরণ দেয়া হচ্ছে , তবে একজন সাইকোপ্যাথ নারী-পুরুষ উভয়ই হতে পারে।

সাইকোপ্যাথরা সম্পর্কের শুরুতে অনেক আকর্ষণীয় থাকেন: শারমিন ও রাজু’র অনলাইনে পরিচয়ের পর থেকেই দেখা গেল, শারমিন এই সম্পর্কের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করছে। রাজু কে খুশি করা, তার কাছে নিজেকে আকর্ষণীয় ও ‘আলাদা’ হিসেবে তুলে ধরার কোনো চেষ্টাই শারমিন বাদ দেয়নি। অর্থাৎ, আপনার সঙ্গী যদি একেবারে শুরুর দিকে আপনার মন জয়ের জন্য একেবারে আদা-জল খেয়ে লাগে, তাহলে এই ব্যাপারে একটু সাবধানতা অবলম্বন করা ভালো।

তারা সময় নষ্ট করতে চান না একেবারেই: দুই সপ্তাহের পরিচয়ের পর শারমিন রাজুকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সম্পর্কটা অনেক দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় বলে জানায়। অনেক সময় আপনি এমন মানুষের দেখাও পাবেন, যারা ১-২ দিনের পরিচয়ের পরই আপনার সাথে আজীবন কাটানোর পরিকল্পনা করে ফেলে। 

তারা যা বলেন তা-ই করতে বাধ্য করেন: একবার যখন বিয়ের জন্য শারমিন রাজুকে কোনো রকমে রাজি করে ফেলে, তখন বিয়ের পর ধীরে ধীরে তাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলো। শারমিন ভাবে, সে সবকিছুতেই রাজু থেকে এগিয়ে এবং সে যা ভালো বুঝবে তা-ই রাজুকে করতে হবে। এটি খুব স্বাভাবিক যে, সাইকোপ্যাথরা আপনাকে একবার আবেগাপ্লুত করে ফেলতে পারলে আপনার কাজকর্ম, এমনকি চিন্তাধারাও নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। তারা সবসময় এটা বোঝানোর চেষ্টা করে যে, এই সম্পর্কে তারা হচ্ছে ‘উত্তম’, আর আপনি ‘নিকৃষ্ট’। তারা আপনার বৈশিষ্ট্যগুলো বদলানোর চেষ্টা করবে। যেমন- রাজু’র হয়তো বিয়ের আগে কালো জামা পরতে ভালো লাগতো, কিন্তু শারমিনের কালো রঙ পছন্দ না। সে জোর করে রাজুকে কালো জামা পরা থেকে বিরত রাখবে। এছাড়াও রাজুর শখ-আহ্লাদ, যে বৈশিষ্ট্যগুলো রাজুকে ‘রাজু’ বানিয়েছে, তার সব মুছে শারমিন তার নিজের পছন্দে রাজু কে গড়ে তুলতে চাইবে। 
সঙ্গীর জন্য আমরা অনেকেই আমাদের অভ্যাস কিছুটা বদলাতে পারি, সেটা দোষের নয়। কিন্তু যদি আপনার সামান্যতম মতামতের কোনো গুরুত্ব না দিয়ে আপনাকে আপাদমস্তক বদলে ফেলতে চাওয়া হয়, তখন এটি সাইকোপ্যাথিক সম্পর্কের একটি বড় নিদর্শন।

সাইকোপ্যাথরা সঙ্গীকে ভোলানোর চেষ্টা করে: আপনি ভাবতেই পারেন যে, শারমিনের মতো কেউ যদি আপনাকে আপনার পছন্দের রঙের জামা পরতে নিষেধ করে, তবে আপনি শুনবেন না। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, একজন সাইকোপ্যাথের সাথে সম্পর্ক থাকলে আপনি তাদের কথা শুনবেন। যেমনটা রাজুও শুনেছিল। সে কালো রঙের জামা পরে না আর। এটা হয়, কারণ সাইকোপ্যাথরা তাদের সঙ্গীকে এমনভাবে মগজধোলাই করে, যাতে রাজুর মতো আপনার মনে হবে, “হুম, কালো রঙে আমাকে আসলেই ভালো মানায় না। শারমিন ঠিকই বলেছে।”

কখনো মায়াকাড়া চোখ দিয়ে, কখনো হালকা অভিমান বা কখনো একেবারে গায়ে হাত তুলেও সাইকোপ্যাথরা নিজের সঙ্গীর মগজধোলাই করে। তারা আপনাকে ভালোবাসা ও গুরুত্ব দেবে। আপনার বিশ্বাস জয় করবে। আর একবার যখন আপনি তাদের প্রতি সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পরবেন, তখন তারা আপনাকে প্রায়ই ছেড়ে চলে যাওয়ার ভয় দেখাবে। আর সঙ্গীর প্রতি এতটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন আপনি যে, সে ভয়ে আপনি সব মেনে নেবেন। এটিই সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত মগজধোলাই কৌশল।

তাদের নেই কোনো দায়িত্ববোধ বা অনুতাপ: রাজুকে বদলে ফেলার এই চেষ্টায় অনেকবার তাদের মধ্যে ঝগড়া, মারামারি, কথা-কাটাকাটি হয়েছে। কিন্তু কোনোবারই শারমিন তার দোষ স্বীকার করেনি। বরং বারবার রাজুর ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিয়েছে এবং রাজুকেই প্রতিবার ক্ষমা চাইতে হয়েছে। যদি আপনার সঙ্গীর সাথেও আপনার এমন সম্পর্ক থাকে, তাহলে আশা করি বুঝতেই পারছেন যে, এটি একটি অসুস্থ সম্পর্ক।

তারা এই আছে তো এই নেই: শারমিন আর রাজুর সম্পর্কে যখনই মনোমালিন্য দেখা দিয়েছে, শারমিন সব সময়ই সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছে। কিছুদিন পর আবার সে-ই রাজুর সাথে আবার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। যদি আপনার সঙ্গী আপনার সাথে ‘আজ আছি তো কাল নেই’- এমন ধরনের সম্পর্ক রাখে, তাহলে ভালো হবে তাদের ব্যাপারে নতুন করে ভাবা।

তাদের সম্পর্কের চালিকা শক্তি হলো যৌন চাহিদা: প্রকৃতিগতভাবেই আমরা যাদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্কে জড়াই, তাদের প্রতি শারীরিক আকর্ষণ বোধ করি। কিন্তু সাইকোপ্যাথের সাথে যদি আপনার সম্পর্ক থাকে, তাহলে আপনার প্রতি তার আকর্ষণ শুধু যৌনতাকে ঘিরেই থাকবে। যখন সে আপনার মনের চেয়ে বেশি আপনার শারীরিক সৌন্দর্যে বেশি মজে যাবে, তখন আপনি নিজেই বুঝতে পারেন এটি একটি অস্বাভাবিক সম্পর্কে রুপ নিয়েছে।
তবে এক্ষেত্রে ভালোভাবে জেনেবুঝেই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। এটি একান্তই আপনার আর আপনার সঙ্গীর ব্যক্তিগত ব্যাপার। সমস্যা সমাধানের বাইরে চলে গেলেই বরং একে অস্বাভাবিক বলা যায়।

সাইকোপ্যাথের আত্মরক্ষা কৌশল হলো শারীরিক নির্যাতন: এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সাইকোপ্যাথিক সম্পর্কে কোনো না কোনো সময় আপনার সঙ্গী আপনার উপর শারীরিক নির্যাতন চালাবেই। যেমন ধরি, শুরুতে শারমিন হয়তো রাজু কে শুধু বকাঝকা করতো। কিন্তু ধীরে ধীরে সে রাজুর গায়ে হাত তোলার চেষ্টাও শুরু করেছে এবং বাধা পেয়ে এখন সে আগের চেয়ে বেশি হিংস্রভাবে শারীরিক নির্যাতন করছে।

শারীরিক নির্যাতন একটি অসুস্থ সম্পর্কের প্রধান বৈশিষ্ট্য। সাইকোপ্যাথিক হোক না হোক, এটি কখনোই মেনে নেয়া উচিত না, সেই সম্পর্ক থেকে দ্রুত বেড়িয়ে আসা উচিত। তবে অনেক সাইকোপ্যাথ আছে, যারা হয়তো ইচ্ছা করে তাদের সঙ্গীকে অত্যাচার করে না বরং পরিস্থিতির কারণে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তবে কেউ কেউ আবার খুব পরিকল্পনামাফিক তাদের সঙ্গীদের উপর নির্যাতন করে। যেভাবেই হোক, শারীরিক, মানষিক নির্যাতন যেকোনো সম্পর্কে শেষ করার জন্য যথেষ্ট।

সমস্যা, মনোমালিন্য যেকোনো সম্পর্কের মধ্যেই থাকতে পারে। কিন্তু সব মনোমালিন্যের সাথে মানিয়ে নেয়া কি সম্ভব? কী করবেন আপনার সঙ্গী যদি হন একজন সাইকোপ্যাথ? 

সুত্র: আইএফএলসায়েন্স

 
×