
,
শুরু হয়েছে নতুন অফিস সূচী। বলতে গেলে তিন ধাপে বিভক্ত হয়ে গেছে এই সময়। সকাল ৮টা- বেলা ৩টা সরকারী অফিস। সকাল ৯টা –বিকেল ৫টা ব্যাংক। বেসরকারীগুলো কেউ এগিয়েছে, কেউ সকাল ১০ টায়ই রেখেছে। প্রধানত বিদ্যুত ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্যে পরিবর্তন হয়েছে এই সময়সূচী। দীর্ঘদিনের এই সময়সূচী হুট করে বদলের ঘোষণায় সবার মাঝে একটা উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়। গৃহিণীরা বিপাকে পড়েন আগের থেকে আরও এক ঘণ্টা আগে উঠে রান্নায় ব্যস্ত হতে হবে। তবে যাদের সকালে উঠার অভ্যাস, তাদের জন্যে উৎকণ্ঠার কোন কারণ নেই। সার্বিকভাবে একটা সুবিধা হয়েছে সকালের কাজ আগে শেষ হওয়ায় তারা বেলা থাকতেই ফ্রি হয়ে যায়। চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে যাদের সংসারের কাজ করতে হয় না, সকালটা ঘুমিয়ে কাটায়। তাদের এক ঘণ্টা আগে উঠে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়াটা কষ্টকর হয়ে গেছে। কথা হলো একজন বয়োজ্যেষ্ঠ চাকরিজীবী মায়ের সঙ্গে। তিনি একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। আর মেয়ে ব্যাংকে। সকালে মেয়েকে নামিয়ে তিনি অফিসে যান। তিনি বলেন, ‘আমি তো খুব সকালে ঘুম থেকে উঠি। তাই আমার কোন সমস্যা হয় না।
সকালের কাজ সেরে নির্ঝঞ্জাটভাবেই বের হতে পারি। সমস্যা হয়ে যায় আমার মেয়ের। তার জন্যে এক ঘণ্টা আগে ঘুম থেকে উঠাটা কষ্টকর হয়ে গেছে। আমার জন্যে বরং সুবিধা হয়েছে। যেহেতু সরকারী অফিস ৮টা থেকে ৩টা। সকাল-বিকাল দুই সময়েই এখন আর জ্যামে পড়তে হয় না। ফলে আমার গাড়ির জ্বালানি খরচও কমেছে। আর আগের থেকে বেশ কিছু সময় আগে বাসায় চলে যাওয়ায় রাতের কাজকর্মও আগে শেষ হয়ে যায়। এতে নিজের জন্যে কিছুটা সময়ও পাওয়া যায়।’ একজন সরকারী চাকরিজীবী মা বললেন, ‘সকালে ঘরের কাজ সেরে, মেয়েকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে, সময়তো অফিস যাওয়াটা কষ্টকর হয়ে গেছে।
সরকার যদি স্কুলের সময়ের সঙ্গে মিল রেখে অফিস সময়টা বদলাত, তাহলে খুব ভাল হতো।’ আরেকজন মা বললেন, ‘সকালবেলাটা রান্না করে বের হতে একটু কষ্ট হলেও, বিকেলে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে ঘরের টুকিটাকি কাজ করে পরিবারের সবাইকে সময় দিতে পারি, নিজেও কিছুটা সময় পাই। এদিক দিয়ে ভাবলে ভালই হয়েছে।’ সরকারী-বেসরকারী চাকরিজীবী কয়েকজন পুরুষের সঙ্গে কথা হলো। তারা মূল সমস্যা বললেন সকালে নিত্যদিনের কাঁচাবাজারটা এখন আর সময় স্বল্পতার জন্যে হচ্ছে না। আবার বেশি সকালে অফিস সময়ের জন্যে দুপুরের খাবার নিয়ে যাওয়াটাও বেশিরভাগ সময়ে হয়ে উঠছে না। যারা সকালে বাচ্চাদের স্কুলে দিয়ে আসেন, তাদের অফিস আর স্কুল সময় মিলছে না বলে বিশাল একটা সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
বাচ্চাকে স্কুলে দেয়ার কাজটা করতে পারছেন না। সকাল ৮টায় যাদের অফিস তাদের কারও মতে, সময়সূচী পরিবর্তনের জন্য এখন যানজট কম থাকায় সময়মতো অফিসে যেতে পারছেন। বিকেলেও জ্যাম কম থাকায় কিছুটা সময় বেঁচে যায়। একটু আড্ডা দিয়ে, বাইরের টুকটাক কাজ সেরে আগেই বাড়ি ফিরতে পারি। নিজেরও একটু রেস্ট হয়।’বেসরকারী চাকরিজীবী এক তরুণী বললেন, ‘সকালে এখন ঘণ্টা আগে ঘুম থেকে উঠতে হয়। তবে বিকেলে একটু আগে বাসায় ফিরতে পারি তাই ভাললাগে। কিন্তু রাস্তায় জ্যাম কমেনি। বরং জ্যামের সময় বদলেছে। সকাল-বিকেল দুইবেলাই জ্যামে বসে থাকতে হয়।’
সবশেষে সবার এক মত- ছুটির পর আগে ঘরে ফেরায় নিজের ও পরিবারের জন্যে কিছুটা সময় পাওয়ায় প্রায় সবাই খুশি। বিশেষ করে যারা গৃহকর্মে সম্পৃক্ত তারা একটু কষ্ট হলেও আগে বাড়ি ফিরাটা সুখের মনে করছেন। আর ২/৩ সময়ে অফিস হওয়াতে কেউ বলছেন জ্যাম কমেছে, কেউ বলছেন জ্যামের সময় বদলে আরও দীর্ঘ হয়েছে। পরিশেষে- কিছুটা এলোমেলো হলেও আশা থাকবে একটু অভ্যস্ত হলে নতুন সময় আমাদের উদ্দেশ্য সফল করবে।