ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

ওয়ারেন বাফেটের এই ১০টি পরামর্শ বদলে দিতে পারে আপনার আর্থিক ভবিষ্যৎ!

প্রকাশিত: ১৮:৪৭, ২১ জুলাই ২০২৫

ওয়ারেন বাফেটের এই ১০টি পরামর্শ বদলে দিতে পারে আপনার আর্থিক ভবিষ্যৎ!

বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ও সফল বিনিয়োগকারী হিসেবে ওয়ারেন বাফেটের নাম শুধু বিনিয়োগ জগতে নয়, সাধারণ মানুষদের মধ্যেও এক অনুপ্রেরণার প্রতীক। ‘ওরাকল অব ওমাহা’ নামে পরিচিত এই ধনকুবরের মোট সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ১৫০ বিলিয়ন ডলার। বিনিয়োগ কৌশলে তার মন্ত্র, জীবনবোধ ও অর্থনৈতিক দূরদর্শিতা দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বজুড়ে মানুষ অনুসরণ করে আসছে। অর্থনৈতিক সফলতার পথে এগোতে চাইলে এমন একজন মানুষের পথ অনুসরণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ, যিনি নিজেই বিলিয়ন ডলারের চূড়ায় উঠে দেখিয়েছেন কীভাবে তা সম্ভব।

চলুন জেনে নেওয়া যাক, টাকা ব্যবস্থাপনায় ওয়ারেন বাফেটের ১০টি অমূল্য পরামর্শ:

১. কখনো টাকা হারিও না
বাফেটের সবচেয়ে বিখ্যাত উপদেশগুলোর একটি হলো: "নিয়ম নম্বর ১: কখনো টাকা হারিও না। নিয়ম নম্বর ২: নিয়ম নম্বর ১ ভুলে যেয়ো না।"
একবার যদি লোকসানের পথে পড়ে যান, তাহলে শুধু আগের জায়গায় ফিরতেই অনেক সময় লেগে যায়, মুনাফা তো অনেক দূরের কথা।

২. কম দামে বেশি মূল্য খোঁজো
বাফেট বলেন, “দাম হলো যা তুমি দাও, আর মূল্য হলো যা তুমি পাও।”
জিনিসপত্রে অথবা বিনিয়োগে যদি আপনি এমন কিছু কেনেন যার দাম বেশি কিন্তু মূল্য কম, তাহলে সেটা ক্ষতির মুখে ঠেলে দিতে পারে। অতএব, জীবনে মিতব্যয়ী হন, আর বিনিয়োগে খোঁজ করুন এমন সুযোগের, যেখানে কম দামে ভালো মানের কিছু পাওয়া যায়। বাফেটের ভাষায়, “সামগ্রী হোক বা স্টক আমি তখনই কিনি যখন এগুলো ছাড়ে পাওয়া যায়।”

৩. সুস্থ আর্থিক অভ্যাস গড়ে তুলুন
ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তৃতায় বাফেট বলেন, “মানব আচরণের বেশিরভাগই অভ্যাসগত, আর সেই অভ্যাসের শিকল এতটাই হালকা যে টেরই পাওয়া যায় না, যতক্ষণ না তা ভাঙা অসম্ভব হয়ে ওঠে।”
অতএব, ইতিবাচক অর্থনৈতিক অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং ক্ষতিকর অভ্যাসগুলো ছাড়ার চেষ্টা করুন।

৪. ঋণ এড়িয়ে চলুন, বিশেষ করে ক্রেডিট কার্ডের ঋণ
বাফেট তার জীবনে সুদকে নিজের পক্ষে কাজে লাগিয়েছেন, উল্টোটা করেননি। ১৯৯১ সালে নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বলেন, “আমি দেখেছি অনেকেই নেশা আর ঋণের কারণে ব্যর্থ হয়েছে। এই দুনিয়ায় বেশি ঋণের আসলে দরকার নেই। আপনি যদি বুদ্ধিমান হন, তবে ঋণ ছাড়াই অনেক টাকা উপার্জন করতে পারবেন।”
বিশেষ করে তিনি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে সতর্ক করেন। তার ভাষায়, “ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার খুবই বেশি, অনেক সময় ১৮% বা ২০% পর্যন্ত যায়। আমি যদি এমন হারে টাকা ধার করতাম, তাহলে এখন পর্যন্ত দেউলিয়া হয়ে যেতাম।”

৫. হাতে নগদ রাখুন
আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাফেট সব সময় কিছু পরিমাণ নগদ অর্থ হাতে রাখার পক্ষে।
এক শেয়ারহোল্ডার বার্তায় তিনি লিখেছিলেন, “আমরা সব সময় কমপক্ষে ২০ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ নগদ বা সমমানের সম্পদ হাতে রাখি।”
তাঁর মতে, ব্যবসার ক্ষেত্রে নগদ অর্থ মানুষের জন্য অক্সিজেনের মতো যখন থাকে, তখন মনে হয় না, আর না থাকলেই সেটার অভাব তীব্রভাবে অনুভব হয়। “বিল পরিশোধের সময় কেবল নগদই কার্যকর,” তিনি বলেন।

৬. নিজের ওপর বিনিয়োগ করুন
বাফেট একবার বলেছিলেন, “আপনার নিজের মধ্যে যতটা সম্ভব বিনিয়োগ করুন। আপনি নিজেই আপনার সবচেয়ে বড় সম্পদ।”
সিএনবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আপনার দক্ষতা ও মূল্যবোধ বাড়ানোর জন্য আপনি যা-ই করবেন, তা ভবিষ্যতে প্রকৃত অর্থে ফিরে আসবে।”
এই বিনিয়োগে মুনাফাও বিশাল “নিজের মধ্যে আপনি যা কিছু বিনিয়োগ করবেন, তার দশগুণ ফিরবে,” বলেন বাফেট। আর সবচেয়ে বড় কথা, “এটি কেউ ট্যাক্স দিতে বাধ্য করতে পারবে না, বা কেউ চুরি করতে পারবে না।”

৭. টাকার জ্ঞান অর্জন করুন
নিজের মধ্যে বিনিয়োগের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো আর্থিক জ্ঞান অর্জন।
ফোর্বস-এর এক প্রতিবেদনে বাফেট বলেছেন, “ঝুঁকি তখনই আসে যখন আপনি জানেন না আপনি কী করছেন।”
এই ঝুঁকি কমাতে হলে ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। বাফেটের প্রয়াত সহকর্মী চার্লি মাঙ্গার বলতেন, “যেভাবে ঘুমাতে যাচ্ছেন, তার চেয়ে একটু বেশি জ্ঞান নিয়ে ঘুমাতে যান।”

৮. পোর্টফোলিওতে কম খরচের ইনডেক্স ফান্ড রাখুন
সবাই হয়তো বাফেটের মতো বড় বিনিয়োগকারী নয়, কিন্তু তার একটি পরামর্শ যেকোনো সাধারণ বিনিয়োগকারীও মানতে পারেন: ইনডেক্স ফান্ডে বিনিয়োগ করুন।
তিনি লিখেছেন, “১০% নগদ স্বল্পমেয়াদী সরকারি বন্ডে রাখুন এবং ৯০% খুবই কম খরচের S&P 500 ইনডেক্স ফান্ডে বিনিয়োগ করুন।”
২০০৪ সালের বার্ষিক সভায় তিনি বলেন, “যদি আপনি দশ বছর ধরে ধীরে ধীরে কম খরচের ইনডেক্স ফান্ডে টাকা বিনিয়োগ করেন, তাহলে আপনি ৯০% বিনিয়োগকারীর চেয়েও ভালো করবেন।”

৯. দান করুন, সমাজকে ফেরত দিন
ফোর্বস অনুসারে বাফেট বলেছেন, “আপনি যদি বিশ্বের সবচেয়ে ভাগ্যবান ১ শতাংশের মধ্যে থাকেন, তাহলে বাকি ৯৯ শতাংশের কথা ভাবার দায়িত্বও আপনার।”
এই উপলব্ধি থেকেই তিনি বিল গেটসের সঙ্গে মিলে ‘দ্য গিভিং প্লেজ’ প্রতিষ্ঠা করেছেন, যেখানে শতাধিক বিলিয়নিয়ার তাদের সম্পদ দান করার অঙ্গীকার করেছেন।
যদিও আপনি বিলিয়নিয়ার নন, তবুও দান করার অভ্যাস আপনাকে আরও ধনী মানুষে পরিণত করতে পারে।

১০. টাকা দেখুন দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গিতে
বাফেট বলেন, “কেউ আজ ছায়ায় বসে আছে, কারণ অনেক আগে কেউ একটি গাছ রোপণ করেছিল।”
অর্থাৎ, অর্থনৈতিক নিরাপত্তার বীজ এখন বুনলে ভবিষ্যতে আপনি এর সুফল ভোগ করবেন। সে সুফল হতে পারে ঋণমুক্ত জীবন, নিরাপদ অবসর কিংবা সন্তানের পড়াশোনার খরচ জোগানোর ক্ষমতা।
তিনি বলেন, “বিনিয়োগ করা উচিত বহু দশকব্যাপী লক্ষ্য নিয়ে, যেখানে লক্ষ্য থাকবে দীর্ঘমেয়াদে প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে।”
বাজারের অস্থিরতা বা অর্থনৈতিক সংকটে বিচলিত না হয়ে দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে যেতে তিনি বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানান।

ওয়ারেন বাফেটের আর্থিক দর্শন শুধু ধনীদের জন্য নয় বরং যেকোনো মানুষের জন্য তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগযোগ্য। এসব পরামর্শ মেনে চললে অর্থ ব্যবস্থাপনায় আপনি আরও সচেতন, সংগঠিত ও সফল হতে পারবেন। মনে রাখবেন, প্রকৃত আর্থিক সুরক্ষা গড়ে ওঠে সময় ও সংযমের মাধ্যমে, আর তার সূচনা আজই হতে পারে।

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/mr38y2y9

আফরোজা

×