ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

সকালের নাস্তা বাদ দিলে শুধু ওজন নয়, মনও খারাপ থাকবে দিনভর

প্রকাশিত: ০৮:০৯, ২১ জুলাই ২০২৫

সকালের নাস্তা বাদ দিলে শুধু ওজন নয়, মনও খারাপ থাকবে দিনভর

ছ‌বি: প্রতীকী

সকালের নাস্তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শুধু শরীরের শক্তির চাহিদা পূরণ করে না, মনকেও করে সতেজ ও সজাগ। তবে অনেকেই ওজন কমানোর আশায় বা সময়ের অভাবে নাস্তা বাদ দিয়ে থাকেন। তারা ভাবেন, কম খেলে শরীরের ওজন কমবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দিনের শুরুতে খাবার না খেলে শরীর যেমন দুর্বল হয়ে পড়ে, মনও তেমনি খারাপ থাকতে শুরু করে।

সকালের নাস্তা হলো রাতের দীর্ঘ উপবাসের পর প্রথম খাবার। আমরা যখন রাতে ঘুমাই, তখন শরীর কোনো খাবার পায় না। এই উপবাস চলতে থাকে প্রায় ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। সকালে উঠে শরীর নতুন শক্তি চায়। সেই চাহিদা পূরণ হয় একটি পুষ্টিকর নাস্তার মাধ্যমে। যদি এই নাস্তা না খাওয়া হয়, তাহলে শরীর প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ পায় না। এতে মাথাব্যথা, ঝিমুনি, রাগ, মনমরা ভাব দেখা দেয়।

মন খারাপের বিষয়টিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, সকালে খালি পেটে থাকার কারণে শরীরের কর্টিসল হরমোন বেড়ে যায়। এটি হলো স্ট্রেস বা মানসিক চাপের হরমোন। ফলে সারা দিন মেজাজ খিটখিটে থাকে। অনেকেই সকালে অফিসে গিয়ে মনোযোগ দিতে পারেন না, কাজে ভুল হয়, ঝগড়ার প্রবণতা বাড়ে। ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে ভালোভাবে মনোযোগ দিতে পারে না। ফলে সাফল্যের পথে বাঁধা পড়ে।

অনেকেই সকালে কেবল চা খেয়ে দিন শুরু করেন। কেউ কেউ এক কাপ কফি খেয়ে অফিসে যান। কিন্তু এতে করে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি থেকেই যায়। শুধু চা বা কফি খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ দ্রুত কমে যায়, যা মাথা ঘোরা বা দুর্বলতার কারণ হতে পারে। আবার দীর্ঘদিন নাস্তা বাদ দেওয়ার ফলে হজমের সমস্যা, আলসার, গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদির ঝুঁকিও বাড়ে। শরীরে ইনসুলিনের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হয়, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

সকালের নাস্তা না খাওয়ার ফলে ওজন কমার যে ধারণা, তা ভুল। বরং অনিয়মিত খাওয়ার কারণে শরীর ‘স্টারভেশন মোডে’ চলে যায়। এতে শরীর খুব সহজে ক্যালরি পুড়িয়ে ফেলে না, বরং যতটুকু ক্যালরি পাওয়া যায়, তা জমিয়ে রাখে। ফলে ওজন কমার বদলে বাড়তেও পারে। পাশাপাশি দিনের অন্য সময় অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতাও বেড়ে যায়।

অন্যদিকে যারা নিয়মিত সকালে পুষ্টিকর নাস্তা খান, তারা সারাদিন বেশি চনমনে থাকেন। কাজের প্রতি আগ্রহ ও মনোযোগ থাকে। হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে, ফলে মানসিক চাপ কমে যায়। শরীরও ঠিকভাবে কাজ করে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

সুতরাং, যারা ভাবছেন ওজন কমানোর জন্য নাস্তা বাদ দেবেন, তাদের এই ধারণা বদলানো উচিত। বরং একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও স্বাস্থ্যকর নাস্তা যেমন: ডিম, দুধ, ফল, ওটস, বা রুটি–এই ধরনের খাবার দিয়ে দিনের শুরু করলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে। এক কাপ চা বা কফির সঙ্গে শুধু বিস্কুট নয়, বরং পেটভরে স্বাস্থ্যকর কিছু খাওয়া উচিত।

দিনের ভালো শুরু মানেই সফল দিনের প্রথম ধাপ। আর সেই শুরুটি হয় এক পুষ্টিকর সকালের নাস্তায়। শরীরের চাহিদা মেটানো যেমন জরুরি, মন ভালো রাখা ততটাই দরকার। তাই সকালটা শুরু হোক এক মজাদার ও পুষ্টিকর নাস্তার মাধ্যমে— যা শুধু শরীর নয়, মনকেও দেবে আনন্দ আর প্রশান্তি।

এম.কে.

×