
ছবি: সংগৃহীত
একটি সাম্প্রতিক বিশাল গবেষণা অনুযায়ী, যারা রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যান, তারা পরের দিন তুলনামূলকভাবে বেশি শারীরিক পরিশ্রম করেন। ১৯,৯৬৩ প্রাপ্তবয়স্কের ওপর পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, যারা রাত ৯টার আগে ঘুমায়, তারা রাত ১টায় ঘুমানোদের তুলনায় পরদিন ৩০ মিনিট বেশি শারীরিক পরিশ্রম করে! এই গবেষণাটি ২০২৫ সালে PNAS জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণার মূল ফলাফল:
বায়োমেডিক্যাল ডিভাইস ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে সংগৃহীত ৫৯,৯৫,০৮০ "ব্যক্তি-রাত"-এর ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে:
-
রাত ৯টায় ঘুমানো বনাম রাত ১টায় ঘুমানো: যারা রাত ৯টায় ঘুমাতে যান, তারা পরের দিন রাত ১টায় ঘুমানো ব্যক্তিদের তুলনায় ৩০ মিনিট বেশি মডারেট-টু-ভাইগরাস ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি (মাঝারি থেকে তীব্র শারীরিক কার্যকলাপ) করেন।
-
রাত ৯টায় বনাম রাত ১১টায়: এমনকি রাত ১১টায় ঘুমানো ব্যক্তিদের তুলনায় রাত ৯টায় ঘুমানো ব্যক্তিরা ১৫ মিনিট বেশি ব্যায়াম করেন।
কেন এই গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ?
এই ফলাফলগুলো স্বাস্থ্যের জন্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ:
-
স্বাস্থ্য সুবিধা: নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের বয়সজনিত ক্ষয় কমাতে সাহায্য করে। ২০১৭ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে ৫ দিন ৩০-৪০ মিনিট জগিং বায়োলজিক্যাল এজিং প্রায় ৯ বছর কমাতে পারে।
-
সামাজিক প্রভাব: জনস্বাস্থ্য প্রচারে শুধু "ব্যায়াম করুন" বলার বদলে "তাড়াতাড়ি ঘুমান"—এই বার্তাটি যোগ করলে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার অভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আরও ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।
কীভাবে এটি কাজ করে?
গবেষকরা মনে করছেন, এর কারণ হলো একটি সহজ সমীকরণ: তাড়াতাড়ি ঘুমালে আপনি তাড়াতাড়ি জাগতে পারবেন, যা আপনাকে সকালে ব্যায়ামের জন্য পর্যাপ্ত সময় দেবে। অন্যদিকে, রাত জাগলে শরীরের সার্কাডিয়ান রিদম (ঘুম ও জাগরণের প্রাকৃতিক চক্র) বিঘ্নিত হয়, যা দিনের বেলায় আপনার শক্তির স্তর কমিয়ে দেয় এবং ব্যায়ামের আগ্রহ কমিয়ে দেয়। গবেষণার প্রধান লেখক, মোনাশ ইউনিভার্সিটির ডা. জোশ লিওটা বলেছেন, "স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন শুধু ব্যায়াম বা ডায়েট নয়—ঘুমের সময়ও সমান গুরুত্বপূর্ণ।" একটি মজার বিষয় হলো, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা রাত জাগার অভ্যাস পরিবর্তন করে আগে ঘুমাতে শুরু করেছিলেন, তাদের অ্যাক্টিভিটি লেভেল স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেড়ে গিয়েছিল!
এই অভ্যাসটি আপনার জীবনে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কিছু সহজ টিপস:
-
ছোট শুরু করুন: প্রথমে প্রতিদিন মাত্র ১৫ মিনিট আগে ঘুমাতে যাওয়া শুরু করুন।
-
সকালের রুটিন: জগিং, ইয়োগা বা হাঁটার জন্য আপনার সকালের রুটিনে আলাদা সময় বরাদ্দ করুন।
-
স্ক্রিন টাইম কমান: ঘুমোতে যাওয়ার অন্তত এক-দুই ঘণ্টা আগে, অর্থাৎ রাত ৮টার পর ফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। স্ক্রিনের নীল আলো ঘুমের হরমোন মেলাটোনিন উৎপাদনে বাধা দেয়।
সূত্র: ইনকম্যাগাজিন
সাব্বির