
ছবি: প্রতীকী
সকালের শুরুটা যেমন হয়, সারা দিনটা অনেকটা তেমনই কেটে যায়। সকালে বিছানা থেকে উঠে যদি একটু শরীরচর্চা করা যায়, তাহলে মন এবং শরীর—দুটোই চাঙা থাকে। অনেকেই সকালে তাড়াহুড়ো করে অফিস বা কাজে বের হয়ে পড়েন, অথবা ঘুম ভেঙেই মোবাইল স্ক্রল করতে থাকেন। কিন্তু এমন অভ্যাস শরীরের পক্ষে মোটেও ভালো নয়। বরং যারা সকালে একটু হেঁটে নেয়, শরীর একটু নড়াচড়া করায়, হালকা স্ট্রেচিং করে কিংবা ধীরে ধীরে দম নিয়ন্ত্রণের ব্যায়াম করে, তাদের দিনটা শুরু হয় সতেজভাবে।
সকালে হালকা এক্সারসাইজ করলে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। এতে মস্তিষ্কে অক্সিজেন ঠিকভাবে পৌঁছে যায়। ফলে মন থাকে পরিষ্কার, মাথা ঝিমঝিম করে না, মনোযোগ বাড়ে। অফিসের কাজে বা পড়াশোনায় মন বসে সহজে। অন্যদিকে, সকালে ঘুম ভেঙেই যদি বসে থাকা হয় বা কিছু না করে অলসভাবে সময় পার করা হয়, তাহলে শরীর ভারী লাগে, মন বিষণ্ন হয়, এবং অনেক সময় মাথাব্যথা বা ঝিমুনি আসে।
আরও একটি বিষয় হলো, রাতে দীর্ঘসময় ঘুমানোর ফলে শরীর কিছুটা জড়তা অনুভব করে। শরীর তখন পুরোপুরি সচল হতে সময় নেয়। এই জড়তা দূর করতে হালকা শরীরচর্চা সবচেয়ে কার্যকর উপায়। সকালে নরম রোদে কিছুক্ষণ হাঁটা, ছাদের ওপর বা খোলা বারান্দায় কিছুক্ষণ স্ট্রেচিং করা বা জাম্পিং জ্যাক্সের মতো সাধারণ ব্যায়াম শরীরের পেশিকে সচল করে তোলে। এমনকি ১০ মিনিটের হালকা শরীরচর্চাও অনেক বড় পার্থক্য গড়ে দেয়।
যারা কাজের চাপে বা মানসিক দুশ্চিন্তায় থাকেন, তাদের জন্য সকালে এক্সারসাইজ করা বিশেষভাবে উপকারী। সকালে ব্যায়াম করলে শরীরে ‘এন্ডোরফিন’ নামে একধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মন ভালো রাখে। এই হরমোনকে অনেক সময় 'হ্যাপি হরমোন'ও বলা হয়। এটা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং হতাশা বা খিটখিটে মেজাজ কমে যায়। তাই সকালেই এক্সারসাইজ করলে সারাদিন স্বাভাবিকভাবে ভালো মুডে থাকা যায়।
এছাড়া হালকা ব্যায়াম হজমশক্তিও বাড়ায়। অনেকেই সকালে উঠে ভারী কিছু না খেলেও কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করেন। অথচ সকালের ব্যায়াম পাকস্থলীর রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে হজম প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে। যারা গ্যাস্ট্রিক বা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন, তাদের জন্য এটি আরও বেশি জরুরি।
শরীরচর্চার পাশাপাশি সকালে হালকা ব্যায়াম করলে ঘুমও ভালো হয় রাতে। কারণ দিনের শুরুতে শরীর সচল রাখলে দিন শেষে শরীর নিজের মতো বিশ্রাম নিতে চায়। ফলে রাতে গভীর ঘুম আসে সহজে। আর ভালো ঘুম মানেই পরদিন আরও ভালোভাবে দিন শুরু করা সম্ভব।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ওজন নিয়ন্ত্রণ। যদিও সকাল-বিকেল যেকোনো সময় শরীরচর্চা করলে উপকার হয়, কিন্তু সকালে করলে তা বেশি কার্যকর। কারণ খালি পেটে এক্সারসাইজ করলে শরীর জমে থাকা চর্বি ভাঙাতে শুরু করে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, হালকা ব্যায়াম করতে জিমে যাওয়ার দরকার নেই, আলাদা কোনো যন্ত্রপাতিও লাগে না। নিজের ঘরে বা ছাদে দাঁড়িয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট হাঁটা, বসে দাঁড়ানো, হাত-পা ঘোরানো বা গলা ও কোমরের স্ট্রেচিং করলেই হয়।
তবে যাদের আগে থেকে কোনো শারীরিক সমস্যা আছে, তাদের উচিত ব্যায়ামের ধরনটি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঠিক করা। তবে হালকা হাঁটা বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম সাধারণত সবার পক্ষেই নিরাপদ।
অতএব বলা যায়, সকালে এক্সারসাইজ না করলে সারাদিনে অলসতা, ক্লান্তি, মনমরা ভাব এবং কাজে অমনোযোগিতার সমস্যা দেখা দিতেই পারে। একটু সময় বের করে সকালে নিজের শরীরকে সচল রাখলেই দিনটা হয়ে উঠতে পারে অনেক বেশি ফলপ্রসূ ও ইতিবাচক। তাই আজ থেকেই শুরু করুন, সকালে ১০ মিনিট হলেও হালকা এক্সারসাইজ— নিজের ভালোর জন্য।
এম.কে.