
বিনিয়োগ জগতে দীর্ঘমেয়াদে সফল হতে চাইলে শুধু পুঁজির জোরই যথেষ্ট নয় প্রয়োজন সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত, ধৈর্য ও প্রজ্ঞার। যুক্তরাজ্যের জনপ্রিয় Stocks and Shares ISA (Individual Savings Account) এর মতো বিনিয়োগ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনেকে লক্ষ্য স্থির করেন মিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত পোর্টফোলিও গড়ে তোলার। এটা সহজ কাজ নয়, তবে অসম্ভবও নয় যদি আপনি অনুসরণ করেন কিংবদন্তিতুল্য বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেটের প্রমাণিত কিছু কৌশল।
বহু দশকের অভিজ্ঞতায় বাফেট যেভাবে ধারাবাহিক মুনাফা তুলেছেন, তা বিশ্বের কোটি বিনিয়োগকারীর জন্য অনুপ্রেরণা। নিচে তার তিনটি প্রধান নীতির কথা তুলে ধরা হলো, যেগুলো অনুসরণ করলে আইএসএ পোর্টফোলিও হয়ে উঠতে পারে মিলিয়ন পাউন্ডের দিকে ধাবমান এক শক্তিশালী যাত্রা।
সময়কে সঙ্গী করে বিনিয়োগ
ওয়ারেন বাফেট একবার বলেছিলেন, "আমার প্রিয় হোল্ডিং পিরিয়ড হলো চিরদিন।" তার এই বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, তিনি স্বল্পমেয়াদি কেনাবেচার পক্ষে নন, বরং দীর্ঘমেয়াদে শেয়ার ধরে রাখার কৌশলে বিশ্বাসী। কারণ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মুনাফা সুদে-আসলে বাড়ে এটাই হলো কম্পাউন্ডিংয়ের শক্তি।
ধরুন, ব্রিটিশ কোম্পানি ইনভেস্টেক (Investec)–এর কথাই বিবেচনা করি। গত এক বছরে তাদের শেয়ারের দাম ৯ শতাংশ কমেছে। অনেকেই হয়তো এতে হতাশ হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিতে পারেন। কিন্তু পাঁচ বছর আগে যিনি ইনভেস্টেকে বিনিয়োগ করেছিলেন, তার বিনিয়োগে এখন ২৩৯ শতাংশ লাভ যা থেকেই স্পষ্ট, ধৈর্যশীল বিনিয়োগই সত্যিকারের সুফল দেয়।
প্যান্ডেমিক পরবর্তী সময়ের সুদ বৃদ্ধির কারণে ব্যাংকটির নেট ইন্টারেস্ট ইনকাম বেড়েছে। পাশাপাশি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট খাতেও বেড়েছে কার্যক্রম, যার ফলে এসেছে অতিরিক্ত রাজস্ব। যুক্তরাজ্যে আগের মতো নিম্ন সুদের হার দ্রুত ফিরবে না এমনটাই আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে, এই প্রবণতা ইনভেস্টেকের মতো ব্যাংকের ভবিষ্যৎ মজবুত করতে পারে।
নিশ্চয়ই স্বল্পমেয়াদে শেয়ারের দাম আরও কমে যেতে পারে। ইনভেস্টেক হয়তো ফিনটেক কোম্পানিগুলোর মতো চটপটে নয় কিংবা ওয়াল স্ট্রিটের বড় প্লেয়ারদের মতো শক্তিশালী নয়। তবুও, দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গিতে এটি একটি বিবেচনাযোগ্য শেয়ার, বিশেষ করে বাফেটীয় কৌশল প্রয়োগের জন্য।
ন্যায্য মূল্যে মানসম্মত কোম্পানি নির্বাচন
বাফেটের আরেকটি বিখ্যাত উক্তি হলো, "অসাধারণ কোম্পানি যদি ন্যায্য দামে কিনতে পারেন, তাহলে সেটাই ভালো। কারণ সাধারণ মানের কোম্পানিকে সস্তায় কেনার চেয়ে এটা অনেক বেশি কার্যকর।" এর মানে দাঁড়ায়, শুধু দামের দিক থেকে নয়, কোম্পানির গুণগত মান, ব্র্যান্ড শক্তি, ক্যাশ ফ্লো এবং ব্যবস্থাপনার দক্ষতা দিয়েও শেয়ারের সম্ভাবনা বিবেচনা করা উচিত।
একটি ভালোভাবে পরিচালিত কোম্পানি সময়ের সঙ্গে তার শেয়ারের দাম বাড়িয়ে তুলতে পারে একটি মাঝারি মানের কোম্পানির তুলনায় অনেক বেশি। তাই কোনো কোম্পানিকে পছন্দ হলেও যদি তার বর্তমান বাজারদর নিয়ে সন্দেহ থাকে, সেক্ষেত্রে বাফেটের এই দৃষ্টিভঙ্গি কাজে লাগতে পারে। এই কৌশল অনুসরণ করলে আইএসএ পোর্টফোলিও দ্রুত গতিতে বড় হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
নিজের জ্ঞানসীমা জানুন, তাতে থাকুন
বিনিয়োগের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে আপনি কতটা বুঝে বিনিয়োগ করছেন তার ওপর। বাফেট একবার বলেছিলেন, "যে ব্যবসাকে আপনি বোঝেন না, তাতে কখনোই বিনিয়োগ করবেন না।" এর মানে, স্বচ্ছ ব্যবসার মডেল, পূর্বাভাসযোগ্য আয় এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা এই গুণসম্পন্ন কোম্পানিতেই বিনিয়োগ করুন।
আর যদি সেই কোম্পানিটি এমন কোনো খাতভুক্ত হয় যেখানে আপনার নিজস্ব পেশাগত দক্ষতা রয়েছে, তাহলে সেই শেয়ারটি হতে পারে আরও মূল্যবান। প্যাসিভ ইনভেস্টিংয়ের চেয়ে এগুলো আপনাকে বেশি রিটার্ন দিতে পারে। আর সেটাই একসময় আপনাকে পৌঁছে দিতে পারে মিলিয়ন-পাউন্ড আইএসএ পোর্টফোলিওর দরজায়।
ওয়ারেন বাফেটের মতো বিনিয়োগ গুরুদের অনুসরণ করে আপনি যদি সময়, মান এবং বোঝাপড়ার ওপর জোর দেন, তাহলে সাফল্য খুব একটা দূরে নয়। আইএসএ ব্যবহার করে ধাপে ধাপে এক মিলিয়ন পাউন্ডের দিকে পৌঁছানো সম্ভব শুধু প্রয়োজন পরিকল্পনা, ধৈর্য আর সঠিক মানসিকতা।
চাইলে আপনি আজই শুরু করতে পারেন, ঠিক যেমনটা বাফেট বলেছিলেন "ভবিষ্যতের সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগ হল এমন কিছু, যেটা আপনি আজ থেকেই শুরু করেন।"
সূত্র:https://tinyurl.com/ycd9kfdc
আফরোজা