ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কিশোরীদের ত্বক নষ্ট করছে টিকটক ট্রেন্ড!

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:০৩, ১২ জুন ২০২৫

কিশোরীদের ত্বক নষ্ট করছে টিকটক ট্রেন্ড!

ছবি: সংগৃহীত

টিনএজ মেয়েদের স্কিনকেয়ার ভিডিওগুলো স্বাস্থ্যসচেতনতার চেয়ে বেশি হচ্ছে চর্মরোগ ও অ্যালার্জির কারণ, এমনই উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায়।

গবেষণাটির প্রথম লেখক ড. মলি হেলস জানান, এখনকার কিশোরীরা ভোর ৪:৩০ মিনিটে ঘুম থেকে উঠে জটিল স্কিনকেয়ার রুটিন পালন করছে—যেখানে একাধিক ক্রিম, সিরাম, টোনার, অ্যাকনি ট্রিটমেন্ট ও অ্যান্টি-এজিং প্রোডাক্ট ব্যবহৃত হচ্ছে। অথচ এদের বেশিরভাগেরই কোনো দরকার নেই, বরং তা ত্বকের স্বাভাবিক গঠনের ক্ষতি করছে এবং ভবিষ্যতে স্থায়ী অ্যালার্জির ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

গবেষকরা ১৩ বছর বয়সী দুইজন ব্যবহারকারীর ছদ্মবেশে টিকটকে ১০০টি স্কিনকেয়ার ভিডিও বিশ্লেষণ করেন। এতে দেখা যায়, ৮২ জন কনটেন্ট নির্মাতার মধ্যে ৮১ জনই মেয়ে এবং তাদের বয়স ৭ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। বিস্ময়করভাবে, প্রায় সবাই ঝকঝকে, দাগমুক্ত ত্বকের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তারা দামী ও বহুমূল্য প্রসাধনী ব্যবহার করছে। গড়ে প্রতিটি স্কিনকেয়ার রুটিনে ছয়টি পণ্য ব্যবহৃত হচ্ছে, যার মোট মূল্য প্রায় ১৬৮ ডলার বা প্রায় ১৮,০০০ টাকা। কিছু ভিডিওতে ১২টিরও বেশি পণ্য ব্যবহৃত হয়েছে, যেগুলোর সম্মিলিত মূল্য ৫০০ ডলারের বেশি। “Get Ready With Me”, “Skin Care Routine” ও “After School Routine” ভিডিওগুলো ছিল সবচেয়ে বেশি প্রচলিত।

গবেষণায় উঠে এসেছে আরও উদ্বেগজনক তথ্য। এসব পণ্যের মধ্যে সাইট্রিক অ্যাসিড, ফ্র্যাগন্যান্স ও একাধিক সক্রিয় উপাদান রয়েছে, যা ত্বকে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে এবং সূর্যের আলোতে অতিসংবেদনশীল করে তোলে। এর ফলে ভবিষ্যতে সানবার্ন ও দীর্ঘমেয়াদি চর্মরোগের ঝুঁকি বাড়ে। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো—দিনের বেলার স্কিনকেয়ার ভিডিওগুলোর মধ্যে মাত্র ২৬ শতাংশে সানস্ক্রিন ব্যবহারের উল্লেখ ছিল, যা একটি বড় ধরণের স্বাস্থ্যগত ব্যর্থতা।

ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ডার্মাটোলজিস্টস-এর অধ্যাপক টেস ম্যাকফারসন বলেন, এই গবেষণাটি সময়োপযোগী। তিনি জানান, এখন অনেক কম বয়সী রোগী স্কিন ইরিটেশন নিয়ে ক্লিনিকে আসছেন, যার প্রধান কারণ অপ্রয়োজনীয় প্রসাধনীর ব্যবহার।

তিনি আরও বলেন, “ছোট ছেলেমেয়েরা এখন জন্মদিনে উপহার হিসেবে স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট চাইছে, যা মূলত আকর্ষণীয় প্যাকেজিং ও টিকটক ট্রেন্ড দ্বারা প্রভাবিত।”

এই ভিডিওগুলো শুধু চর্মরোগ নয়, বরং অ্যাকনি, একজিমা ও বয়সজনিত চেহারার প্রতি ভয় ও হীনমন্যতা তৈরি করছে। “পারফেক্ট স্কিন”-এর নামে তৈরি করা এই ধারণা সমাজের জন্য বিপজ্জনক।

গবেষণার প্রধান লেখক ড. মলি হেলস স্পষ্টভাবে বলেন, সুস্থ ত্বকের যত্ন নিতে জটিল কোনো স্কিনকেয়ার রুটিনের প্রয়োজন নেই। এই বয়সের কিশোর-কিশোরীদের জন্য একটি সাধারণ ফেস ক্লিনজার দিনে একবার বা দুইবার ব্যবহার করলেই যথেষ্ট। সেই সঙ্গে সকালে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। এর বাইরে অন্য কিছু একদমই দরকার নেই। বিশেষ করে অ্যান্টি-এজিং সিরাম, অ্যাসিডযুক্ত পণ্য বা একাধিক সক্রিয় উপাদানযুক্ত প্রসাধনী একেবারেই অপ্রয়োজনীয় এবং অপ্রাসঙ্গিক। বরং এসব অতিরিক্ত পণ্য নিয়মিত ব্যবহারের ফলে ত্বকে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ড. হেলস বলেন, “এই বয়সে এমন পণ্যের কোনো প্রয়োজন নেই। এগুলো বরং ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।”

এদিকে টিকটকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে—এই ধরণের কনটেন্ট শুধু টিকটকে নয়, সব মাধ্যমেই আছে। তারা আরও দাবি করেছে, গবেষণায় এমন কোনো সরাসরি মানসিক ক্ষতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি; বরং টিনএজারদের আত্মপ্রকাশ, পরিবারে আলোচনার সুযোগ ও পজিটিভ কমিউনিটি গড়ে তুলতে এই কনটেন্ট ভূমিকা রাখে।

মুমু ২

×